ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফুলঝাড়ু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ মার্চ ২০১৮

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফুলঝাড়ু

প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ঝাড়ু ফুল বা উলু ফুল দিয়ে তৈরি খাগড়াছড়ির ঝাড়ু সারাদেশে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে দেশের বাইরেও রফতানি করা হচ্ছে। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে খাগড়াছড়ির এ ঝাড়ু পাহাড়ের পাশাপাশি এখন সমতলেও সমান জনপ্রিয়। খাগড়াছড়ির পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই উলু ফুল জন্মে। এ ফুল শুকিয়ে তৈরি করা হয় ফুলঝাড়ু। দেশজুড়ে এর চাহিদা বাড়ায় ফুলঝাড়ু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা পাহাড় থেকে উলু ফুল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এ ফুল কিনে শুকিয়ে রাখেন। তারপর ১৮-২০টি ফুলের কাঠি দিয়ে আঁটি বেঁধে একেকটি ঝাড়ু তৈরি করেন। প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি হয় ১৫-২০ টাকায়। এখান থেকে এসব ঝাড়ু কিনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সমতলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। একই সঙ্গে এগুলো সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ভারতে রফতানি হচ্ছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানিহাটে প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত ঝাড়ু ফুলের জমজমাট বিকিকিনি হয়। স্থানীয় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী সাতকানিয়া ও বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকা থেকে ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ করে কেরানিহাটে নিয়ে আসেন। আকারভেদে প্রতি আঁটি ঝাড়ু ফুল বিক্রি হচ্ছে ছয় থেকে দশ টাকায়। একটি ফুলের ঝাড়ু তৈরিতে প্রয়োজন হয় দুই থেকে চার আঁটি ঝাড়ু ফুল। কেরানিহাটের এই ঝাড়ু ফুল কিনে নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝাড়ু তৈরি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রির জন্য সরবরাহ করেন। ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কেরানিহাটের শতাধিক মানুষ। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে এসব ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে। সাতকানিয়ার কেওচিয়া বন চাষ গবেষণা কেন্দ্রেও কয়েক বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ফুলঝাড়ুর আবাদ করা হয়েছে। সেখানে উৎপাদনও ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যাপকভাবে ফুলঝাড়ুর আবাদ করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে পাহাড়ে এখন প্রাকৃতিকভাবে ফুলঝাড়ুর উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। ফলে ফুলঝাড়ুর রফতানি খাতে আয়ও কমে গেছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিভাবে উৎপাদিত এসব ফুলঝাড়ু কেটে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসে লোকজন। এরপর বাজার থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী ব্যবহারের জন্য সেগুলো কিনে নিচ্ছেন। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাও স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ফুলঝাড়ু কিনে নিচ্ছেন।এ পেশার সঙ্গে বহু পরিবারের সদস্য জড়িত। এগুলো বিক্রি করে কেউ কেউ সন্তানদের লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে পাহাড়ে যারা এসব ফুল কাটে তাদের কাছ থেকে কিনে বাজারে এনেও বিক্রি করেন। ফুলঝাড়ু মৌসুম আসলে পাহাড় থেকে ফুল কেটে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। পাহাড়ে বিভিন্ন জাতের ফুলঝাড়ু রয়েছে। গুণগত মানভেদে কাটা হয় ও আঁটি হিসেবে এসব ফুল ঝাড়ু বিক্রি করা হয়। তবে এগুলো কাটা এখন আর আগের মতো সহজলভ্য নয়। কয়েক বছর আগেও পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার ধারে ফুল পাওয়া যেত। এখন অনেক ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ফুলঝাড়ু কাটতে হয়। ফলে এখন দামও একটু বেশি। প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করা যায়। গ্রামের লোকজন ওই সময়েই সারা বছরের জন্য ফুলঝাড়ু কিনে নেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফুলঝাড়ু উৎপাদন হয়। একেক জায়গায় একেক জাতের ফুল বেশি উৎপাদন হয়। তবে এতে বিনি জাতের ফুল সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় বাঁশখালীতে। গাছের মাথা ও কাটিং দিয়ে এ ফুলঝাড়ুর আবাদ করা হয়। সবচেয়ে সুবিধা দিক হলো ফুলঝাড়ু চাষের জন্য আলাদা জায়গার দরকার পড়ে না। অন্যান্য গাছের বাগানেও খুব সহজে এগুলোর আবাদ করা সম্ভব। আর রোপণ করার প্রথম বছর থেকেই কাঠি সংগ্রহ করা যায়। বাজারে প্রতি হাজার ফুলঝাড়ুর কঞ্চির মূল্য সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বেচাকেনা হয়। একজন লোক প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২০০ ফুলঝাড়ুর কঞ্চি সংগ্রহ করতে পারে। সেই হিসেবে একজনের প্রতিদিনের আয় দাঁড়ায় ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। বর্তমানে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক লোক কোন না কোনভাবে এ পেশায় রয়েছেন।
×