ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ বাছাই ক্রিকেট ॥ সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে আইরিশদের কাঁদিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপের মূলপর্বে মোহাম্মদ নবী-রশীদ খানের দল, আমিরাত-ধাক্কায় ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে নেই জিম্বাবুইয়ে, বৃষ্টি আইন ও নাটকীয় জয়ে মান বাঁচিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

আফগানদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্মরণীয় গল্প

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৫ মার্চ ২০১৮

আফগানদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্মরণীয় গল্প

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ের রাজধানী হারারেতে অনুষ্ঠিত হলো ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাছাইপর্বের জমজমাট সুপার সিক্স রাউন্ড। আয়োজকদের সঙ্গে যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আরব আমিরাতের মধ্যকার বেশিরভাগ ম্যাচই ছিল রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তায় ভরপুর। সুপার সিক্সে নিজেদের শেষ ম্যাচে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে বৃষ্টি-আইনে স্কটল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে নবম দল হিসেবে সবার আগে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করে ক্যারিবীয়রা। আর ভাল অবস্থানে থেকেও আসরে সবচেয়ে দুর্বল আরব আমিরাতের কাছে শেষ বলে ফয়সালা হওয়া ম্যাচে ৩ রানের হারে কপাল পোড়ে জিম্বাবুইয়ের। ১৯৮৩ সালের পর বিশ্বকাপে নেই এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিকের উত্তরসূরিরা। অন্যদিকে যে আফগানিস্তান খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল সেই তারাই আয়ারল্যান্ডকে বিদায় করে দশম দল হিসেবে বিশ্বশ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে জায়গা করে নিল। আফগানদের এ নৈপুণ্যকে ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এই সাফল্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ক্রিকেট পাগল জনগণকে উৎসর্গ করেছেন অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাই। ‘অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের নয়। দুটি ম্যাচে হেরে আমরা প্রায় বাদ পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো স্মরণীয় কিছু। এ সাফল্য আমার দেশের ক্রিকেট পাগল মানুষকে উৎসর্গ করছি।’ পরশু আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর বলেন অধিনায়ক স্টানিকজাই। বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা দু’দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের মধ্যে আজই অনুষ্ঠিত হবে বাছাইপর্বের ফাইনাল ম্যাচ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অন্যতম ফেভারিট ছিল আফগানরা। কিন্তু প্রথম তিন ম্যাচে হেরে বসে তারা স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুইয়ে, এমনকি হংকংয়ের কাছেও। পরে নেপালকে হারালেও নিশ্চিত ছিল না সুপার সিক্স। গ্রুপের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে জিততে হতো নেপালকে। মিলে যায় সেই সমীকরণ। সুপার সিক্সে প্রথম দুই ম্যাচে আফগানরা হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। তবু সবকিছু ছিল না নিজেদের হাতে। সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে আর আমিরাতের কাছে হারতে হতো জিম্বাবুয়েইকে। অবিশ্বাস্যভাবে সেই সমীকরণটাও মিলে যায়। শেষের সমীকরণে আয়ারল্যন্ড ও আফগানিস্তান ছিল সমান্তরালেই। তাতে আইরিশদের হতাশ করে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে আফগানরা। আইরিশদের ২০৯/৭-এ বেঁধে রেখে জয়ের পথ তৈরি করে দেয় বোলাররা। উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও পল স্টার্লিং যদিও উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩ রান এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আর অর্ধশত রানের কোন জুটি পায়নি তারা। আক্রমণাত্মক স্টার্লিং এদিন ৫৫ করেন ৮৭ বলে। মিডল অর্ডারে নিয়াল ও’ব্রায়েন আউট হয়ে যান ভাল খেলতে খেলতেই (৪১ বলে ৩৬)। আইরিশ মিডলঅর্ডারে ছোবল দেন লেগ স্পিনার রশীদ খান। শেষদিকে কেভিন ও’ব্রায়েনের ৩৭ বলে ৪১ রানের ইনিংসে পার হতে পারে তারা দুই শ’ রান। ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন রশীদ। ৪৩ ওয়ানডেতে তার উইকেট ৯৯টি। দ্রুততম এক শ’ উইকেট শিকারি হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার আফগান লেগ স্পিনারের। ৫২ ম্যাচে এক শ’ ছুঁয়ে রেকর্ডটি এখন মিচেল স্টার্কের। রান তাড়ায় আফগানদের অনেকটা এগিয়ে দেয় উদ্বোধনী জুটি। মোহাম্মদ শাহজাদ ও গুলবদন নাইব গড়েন ৮৬ রানের জুটি। নাইব ৯১ বলে করেন ৪৫। তবে শাহজাদ ঠিকই ছিলেন স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক। ৫০ বলে করেন ৫৪। মিডল অর্ডারে একটু হোঁচট খেয়েছিল আফগানরা। ম্যাচ জমে ওঠার আয়োজন গড়ে উঠছিল। কিন্তু স্টানিকজাইয়ের দারুণ ব্যাটিংয়ে দূর হয় আফগানদের শঙ্কা। ২৯ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। ৫ বল আগে ৫ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে আফগানিস্তান। ওদিকে ৩৯ বছর পর এই প্রথম জিম্বাবুইয়ে বিশ্বকাপে নেই। অথচ প্রতিটা দলই প্রমাণ করেছে, নিজেদের দিনে তারা কেউ যে কাউকেই হারাতে পারে। র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৮ নম্বর দল হয়েও আমিরাত যেমন হারিয়ে দিল জিম্বাবুয়েইকে। এই জিম্বাবুইয়ে গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে হারিয়ে এসেছিল তাদের। অথচ আইসিসির দোহাই, বিশ্বকাপে বেশি দল হলে ‘প্রতিযোগিতা’ হয় না। ১৪টি দল থেকে নেমে এসেছে দশটিকে। বাকি আট দল- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা। দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়েও একের পর এক দল এভাবে বিদায় নেয়ায় বিশ্বকাপে আইসিসির দল কমানো-নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড।
×