ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তিমূলক শুল্ক যার সর্বশেষ উদাহরণ

ইউরোপের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আক্রমণ শাণিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৫ মার্চ ২০১৮

ইউরোপের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আক্রমণ শাণিত হচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আছেন এক বছরের বেশি সময় ধরে। এ সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন পশ্চাৎ চিন্তার চেয়ে কিছু নয়। তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। ইইউর প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব অনেক বছর ধরে সঙ্গতিপূর্ণভাবে নেতিবাচক রয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় তিনি ইইউ সম্পর্কে বেশ কিছু অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন। তিনি খোলাখুলিভাবে ব্রেক্সিটের প্রতি সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টা আরও খারাপের দিকে গড়ায় যখন তিনি ব্রিটেনের ইনডিপেনডেন্স পার্টির চরম ডানপন্থী, অভিবাসনবিরোধী, পরিবর্তনবিরোধী নেতা নাইজেল ফারাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছেন। ফারাজ ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে ইইউতে ট্রাম্পের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফরেন এ্যাফেয়ার্স। ইইউর প্রতি ট্রাম্পের নেতিবাচক মনোভাব থাকা সত্ত্বেও গত বছরটিতেও এটা স্পষ্ট ছিল না যে বাস্তবিক নীতিগুলোর শর্তে ওই মনোভাবগুলো কী করে গুরুত্ব হারাবে। ট্রাম্প সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইইউর সঙ্গে দ্বিমুখী লড়াই শুরু করেছেন। প্রথমত এটা মনে হয় যে, ইইউর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি শুধু ঝামেলামুক্তভাবে এড়িয়ে যাওয়ার মতো হবে। প্রেসিডেন্ট ইইউতে এখনও কোন দূত নিয়োগ করেননি এবং এমন কোন লক্ষণ দেখা যায় না যে, হোয়াইট হাউসে কেউ এর পরিবর্তনের পক্ষে। ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংশ্লিষ্ট যে সকল কৌশলগত দলিলের উল্লেখ করছে সেগুলোর উল্লেখ ইইউ মোটেই করছে না। ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিতে ইইউর মার্কিন সম্পর্কের বিষয়ে মাত্র একবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা করা হয়েছে ন্যায্য ও পারস্পরিক বাণিজ্য উদ্যোগ নিশ্চিতকরণ ও প্রতিবন্ধক উচ্ছেদ প্রসঙ্গে। একইভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ইউরোপের ওপর তার একমাত্র ভাষণে ইইউর উল্লেখ করেছেন কদাচিৎ। সত্যিকারভাবে সংস্থাভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহু শত কোটি ডলারের বাণিজ্য সম্পর্কের উল্লেখ ওই ভাষণের কোথাও দেখা যায়নি। ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বাণিজ্য এবং এটা দীর্ঘকালের। কিন্তু ট্রাম্প এ মাসের শুরুতে ঘোষণা করেছেন, তিনি ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবেন। এ উদ্যোগ নির্দিষ্ট করে ইউরোপের জন্য নেয়া হবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে থাকে। এ পদক্ষেপ গ্রহণে ইউরোপীয় নীতি নির্ধারকদের জন্য আঘাতের কোন লাঘব হবে না। ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রসার ও গুরুত্বের দিকটা ভেবে কারও ধারণা হবে যে, প্রেসিডেন্ট আমেরিকার ঘনিষ্ঠতম সহযোগীদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা রাখবেন। ট্রাম্প ইউরোপের জন্য এ ধরনের কোন ব্যবস্থার উল্লেখ করেননি যদিও হোয়াইট হাউস কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য অব্যাহতি-সুযোগ রাখবেন বলে জানায়। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইইউ-কর্মকর্তারা ক্রোধ প্রকাশ করেছেন এবং তারা তাদের নিজস্ব আমদানি শুল্ক ধার্য করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন। তা দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট ভালভাবে নেননি। তিনি ঠিক কয়েক দিন আগে টুইটে বলেছেন, ইইউ ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবসারত কোম্পানিগুলোর ওপর শুল্ক ও প্রতিবন্ধক বৃদ্ধি করতে চাইলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে অবাধে আনা গাড়িগুলোর ওপর কর বসাব। তারা অবশ্য এর মধ্যেই মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর কর বৃদ্ধি করেছে। অনেকেই আগাম বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের সঙ্গে এক বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে এবং মনে হয়, তারা ঠিকই বলছেন। শুধু বাণিজ্য ক্ষেত্রেই ট্রাম্প প্রশাসন ইইউকে প্রত্যক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ করছে না।
×