ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ সেই গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৫ মার্চ ২০১৮

ভয়াবহ সেই গণহত্যা

১৯৭১ সালের গণহত্যা; ইতিহাসের পৈশাচিক এক হত্যাযজ্ঞের নাম। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় genocide. ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীরা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত নিধনযজ্ঞ চালায়। গুলি করে হত্যা করে হাজার হাজার মানুষ। ইদানীং কেউ কেউ ১৯৭১ সালের বর্বর ‘গণহত্যা’কে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করছেন, তুলনা করার চেষ্টা করছেন ভিন্নভাবে। জানি না তাদের উদ্দেশ্য ১৯৭১ সালের ‘গণহত্যাকে’ ভুলিয়ে দেয়ার জন্য কিনা? তবে ১৯৭১ সালে এ দেশে যে গণহত্যা হয়েছে তা মধ্য যুগের যে কোন গণহত্যাকে হার মানায়। আশার কথা, চলতি বছর থেকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পঁচিশে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হবে। গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি সর্বসম্মতক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে পঁচিশে মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। এতে তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সত্যিকারের চিত্র ফুটে উঠবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বুকে ধারণ করে প্রতিটি মানুষ বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার সংগ্রামে যুক্ত হবে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ২৪ থেকে ২৬ মার্চ সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম পোর্টের ১৭ নং জেটিতে ১২০ জন বাঙালী সৈন্য কাজ করছিল। তাদের সেখানে নেয়া হয়েছিল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস করার জন্য। ২৬ মার্চ সকাল থেকে তাদের উপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। এক পর্যায়ে প্রায় সবাইকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। ৬/৭ জন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এবং গুলি করার পর মৃত্যুর ভান করে সুভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ২৪ মার্চ ১৯৭১; দুপুর দেড়টায় কর্নেল সিগরীর হুকুমে ইবিআরসি থেকে ৬০ জন বাঙালী সৈন্যকে ২০ নং বেলুচ রেজিমেন্টের একটা কোম্পানির সঙ্গে চট্টগ্রাম পোর্টে পাঠানো হয়। বিশেষ মতলবেই বাঙালী সৈন্যদের বিনা অস্ত্রেই পোর্টে পাঠানো হয়েছিল। আর বেলুচি রেজিমেন্টের কোম্পানিকে পাঠানো হয়েছিল অস্ত্রসজ্জিত করে। চট্টগ্রাম পোর্টের ১৭ নং জেটিতে পৌঁছানোর পর বেলুচ রেজিমেন্টের জওয়ানরা ঐ জেটির চতুর্দিক ঘিরে রাখে। আর বাঙালী সৈন্যদের নিয়োগ করা হয় সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস করার জন্য। বেলুচ রেজিমেন্টের জোয়ানদের সঙ্গে কমান্ডার ছিল একজন পাঞ্জাবী মেজর। আর বাঙালী সৈন্যদের সঙ্গে ছিলেন নায়েব সুবেদার নূরল ইসলাম ও নায়েব সুবেদার গোলাম সাত্তার। সোয়াত জাহাজ কিছুদিন আগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। বেসামরিক লোকেরা জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র খালাস করতে বাধা দেয়। তাই ঐ বাধা সরাতে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা জনতার ওপর গুলি ছোড়ে। এতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে জাহাজের কাছ থেকে সরে যায়। সোয়াত জাহাজটি ছিল অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদে বোঝাই। বিশেষ করে ২৫ পাউন্ডার গানের গোলা ছিল সবচেয়ে বেশি। বেলুচ রেজিমেন্টের জওয়ানরা যখন জেটির চতুর্দিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য ব্যস্ত, তখন বাঙালী সৈন্যরা সোয়াত থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজে ঘামে ভিজে একাকার। জেটিতে যাওয়ার পর বাঙালী সৈন্যদেরকে প্রথম খাবার দেয়া হয় ২৫ তারিখের বিকালে অর্থাৎ পুরো একটা দিন পর। তাও সে খাবার জোটে মাত্র দশ সৈন্যের ভাগ্যে। এ রকম অভুক্ত অবস্থায় যখন বাঙালী সৈন্যরা মাল খালাসে ব্যস্ত, তখন ব্রিগেডিয়ার আনসার ও কর্নেল সিগরী বারবার জেটিতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তদারক করে। এর আগে কখনও জাহাজের মাল খালাসের সময় কোন ব্রিগেডিয়ার স্বয়ং এ ধরনের কাজ করতেন না। বাঙালী সৈন্যরা যখন অনাহার আর ক্লান্তিতে দিশেহারা, তখন ব্রিগেডিয়ার আনসারী ও কর্নেল সিগরী বার বার তাগিদ দিচ্ছে জলদি মাল খালাসের জন্য। ২৫ তারিখের বেলা ১টায় ২৭ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১টা কোম্পানি এবং ইবিআরসির ১টা প্লাটুন জেটিতে হাজির হয়। তাদের সঙ্গে আসে মেজর মেহের কামাল (পাঞ্জাবী), ক্যাপ্টেন আজিজ (বাঙালী), সুবেদার আবদুর রব (বাঙালী) ও নায়েব সুবেদার তৈয়ব (বাঙালী)। ২৭ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের জোয়ানরা জেটিতে যাওয়ার পর বেলুচ রেজিমেন্টের জোয়ানদের উঠিয়ে নেয়া হয়। তারপর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের জওয়ানরা জেটির চারপাশ ভালভাবে ঘিরে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় দফায় বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্য একটা দল আসার পর বাঙালী সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১২০ জনে। বাঙালী সৈন্যরা ২৫ মার্চের সারাদিন মাল খালাসের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং ২৬ মার্চের সকাল দশটায় শেষ করে। মাল খালাস শেষ করে বাঙালী সৈন্যরা ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসতে চাইলে তাদের আসতে দেয়া হয় না। পাঞ্জাবীদের কথাবার্তার সুর তখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। তাদের ব্যবহার ও চলাফেরায় বাঙালী সৈন্যদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। তাদের কেউ কেউ ক্যাপ্টেন আজিজের কাছে গিয়ে এ কথা জানায়। তারা তার কাছে আশু বিপদ থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন আজিজ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাঙালী সৈন্যদের পাঞ্জাবী সৈন্যদের মতো পজিশন নিতে আদেশ দেয়। এখানে উল্লেখ্য, বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় দলটির সঙ্গে তাদের নিজ নিজ হাতিয়ার ছিল। ক্যাপ্টেন আজিজের আদেশ অনুযায়ী বাঙালী সৈন্যরা যখন পজিশন নিতে যাবে, এমন সময় ব্রিগেডিয়ার আনসারী ও কর্নেল সিগরী সেখানে হাজির হয়। ব্রিগেডিয়ার আনসারীর সঙ্গে আসে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ২০০ নৌসেনা। তার হুকুমে নৌ-বাহিনীর লোকেরা জেটিতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পজিশন নেয়। ব্রিগেডিয়ার আনসারী হঠাৎ জওয়ানদের উদ্দেশ করে বলে, তোমরা কেউ কোথাও যাবে না। তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র সব জমা দিয়ে দাও। কারণ, রাতে তোমাদের সব হাতিয়ার একসঙ্গে রাখতে হবে। হাতিয়ার জমা দেয়ার কথা শুনে বাঙালী সৈন্যরা হতবাক হয়ে ক্যাপ্টেন আজিজের দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে, স্যার এখন আমরা কি করব? ক্যাপ্টেন আজিজ বলে, এখন আর কিছু করার নেই। ব্রিগেডিয়ার যখন হুকুম দিচ্ছে তখন হাতিয়ার জমা দিতেই হবে আর কোন উপায় নেই। ক্যাপ্টেন আজিজ তখনও পর্যন্ত পশ্চিমাদের মতলব বুঝে উঠতে পারেননি। কারণ তখনও সে জানত না যে, ২৫ মার্চের রাত থেকে বাংলার মাটিতে ওরা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছে। সে এও জানত না যে ২৫ মার্চের রাতে পাঞ্জাবীরা চট্টগ্রাম ক্যান্টেনমেন্ট দখল করে নিয়েছে। ক্যাপ্টেন আজিজ ২৫ মার্চ দুপুরে জেটিতে চলে এসেছিলেন। সুতরাং ঐ রাতে কোথায় কী ঘটে গেছে তা তার জানার কোন উপায় ছিল না। যদি জানত পাঞ্জাবীরা নির্বিচারে বাঙালীদের হত্যা করছে, তাহলে অন্তত ঐ ব্রিগেডিয়ারকে সামনে পেয়ে এভাবে তিনি ছেড়ে দিতেন না। বাঙালী সৈন্যদের অস্ত্রসমর্পণ করতে নিষেধ করতেন। ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার হুকুম দিতেন। যাই হোক, ব্রিগেডিয়ারের হুকুমের পরও হাবিলদার আবদুস সাত্তার, হাবিলদার আবদুল খালেক, নায়েক নিজামউদ্দীন, ল্যান্স নায়েক আফসারউদ্দীন ও আরও অনেকে হাতিয়ার জমা দিতে অস্বীকার করে। তখন ব্রিগেডিয়ার তাদের সবাইকে এ্যারেস্ট করার হুমকি দেয়। তারপর একরকম বাধ্য হয়েই বাঙালী সৈন্যরা সেদিন হাতিয়ার জমা দেয়। বাঙালী সৈন্যদেরকে তখন ভাওতা দেয়ার জন্য পাঞ্জাবী সুবেদারকেও হাতিয়ার জমা দিতে বলা হয়। পাঞ্জাবীরাও ৭/৮ টা রাইফেল জমা দেয়। একটি রেলওয়ে ওয়াগনের মধ্যে সব হাতিয়ার রাখা হয়। তারপর ওয়াগনে তালা দিয়ে ব্রিগেডিয়ার আনসারী চাবিটা নিজের কাছে রেখে দেয়। ঐ সময় মেজর মেহের কামালকে একটি স্টেনগান দেয়া হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন আজিজকে কোন হাতিয়ার দেয়া হয়নি। তারপর মেজর মেহের কামাল ক্যাপ্টেন আজিজকে জীপে করে জেটি থেকে নিয়ে যায়। ২৬ মার্চ বিকালে একজন পাঞ্জাবী মেজর এসে বাঙালী ৪ জন জেসিও-কে ডেকে বলে, তোমাদের মধ্যে এখান থেকে কেউ যাবে না। কারণ আমরা জানতে পেরেছি তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ মুজিবের অনুচর। তোমরা সেনাবাহিনীর লোক হয়ে শেখ মুজিবের আদেশ শুনতে চাও এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আদেশের তোয়াক্কা করো না। তোমাদের ভিতর থেকে ঐ সব অবাঞ্ছিত লোকদেরকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত কাউকে এখান থেকে যেতে দেয়া হবে না। তোমরা এখন জাহাজের (সোয়াত) ভিতর চলে যাও এবং রাতটা সেখানে কাটাও। এই বলে পাঞ্জাবী মেজর সেখান থেকে চলে যায়। দুশ্চিন্তা, নৈরাশ্য আর অনাহারে বাঙালী সৈন্যরা সারারাত না ঘুমিয়ে জাহাজের ভিতরেই কাটায়। পাঞ্জাবী সৈন্যরা সারারাত তাদের পাহারা দিয়ে রাখে, যাতে কেউ রাতের বেলায় জাহাজ থেকে বের হতে না পারে। ২৭ মার্চ বিকাল ৪টায় সমস্ত বাঙালী সৈন্যদেরকে জেটির প্লাটফর্মের ওপর একত্রিত করে তাদেরকে সামরিক কায়দায় দাঁড় করানো হয়। বিনা হাতিয়ারে এভাবে দাঁড় করানোর জন্য জেসিওদের মধ্যে সন্দেহ জাগে। তারা দেখতে পায় জাহাজের মধ্যে হালকা মেশিনগান ফিট করা হয়েছে তাদেরকে লক্ষ্য করে। যেদিকেই চোখ ফেরায় সেদিকেই দেখে মেশিনগান। পাঞ্জাবীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বাঙালী সৈন্যদের মনে আর কোন সন্দেহ রইল না। কিন্তু তারা কি করবে তখন। কেবল সুবেদার রব নিরুপায় হয়ে পাঞ্জাবী সুবেদারকে জিজ্ঞেস করেÑ আপনারা এ কি করছেন, আমাদের মেশিনগানের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন! ব্যাপার কি? আপনাদের উদ্দেশ্য কি? আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলতে চান? পাঞ্জাবী সুবেদার জবাব দিল, আমি মেজর সাহেবের হুকুমে তোমাদের মেশিনগানের সামনে দাঁড় করিয়েছি। আমি যা হুকুম পেয়েছি তাই করছি। কারণ আমি অফিসারের হুকুম পালন করার জন্য কসম খেয়েছি। তখন নিরুপায় হয়ে সুবেদার রব হাত উঠিয়ে বলে, আমরা হ্যান্ডস আপ করলাম, আমরা নিরস্ত্র, আপনাদের হাতে বন্দী। এখন অসহায় অবস্থায় আপনারা আমাদের হত্যা করবেন না। আমরা তো আপনাদের মতই সামরিক বাহিনীর লোকÑ আমরা তো কোন অপরাধ করিনি। সুবেদার রবের কথা মতো সমস্ত বাঙালী সৈন্যই আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু পাকিস্তানী বর্বর সৈন্যদের হৃদয় সামান্যতম বিচলিত হয়নি। তারা সুবেদার রবের কথায় কর্ণপাত করেনি। ওদিকে অর্ডন্যাসের পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেন সোয়াত জাহাজ থেকে বারবার পাঞ্জাবী সুবেদারকে তাগিদ দেয়, দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি কর। অবস্থা বেগতিক দেখে সুবেদার রব বাঙালী সৈন্যদের বলে, তোমরা যে যেভাবে পারো নিজের জীবন বাঁচাও। পাঞ্জাবীরা এখনই আমাদের হত্যা করবে। এই বলে সুবেদার রব জেটি থেকে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে, দ্রুত ডুব দিয়ে জেটির নিচে চলে যান। বাকি সব বাঙালী সৈন্য পালিয়ে বাঁচবার চেষ্টা করতেই শুরু হয় মেশিন গানের গুলি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাঙালীরা জেটির ওপর লুটিয়ে পড়ে। যারা আহত অবস্থায় তখনও এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল তারাও ছাড়া পায় না। মেশিনগানের গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় তাদের দেহ। প্রাণের আশায় ওরা দলছুট হয়ে গেলেও মৃত্যু এসে ওদের এক করে দেয়। তারপর পাঞ্জাবীরা রক্তাক্ত লাশগুলো একত্রিত করে। এতেও হানাদারদের পিপাসা মেটে না। তখনও তারা আরও রক্ত চায়। এর পরের ঘটনা আরও পৈশাচিক। আরও মর্মান্তিক। যারা গুরুতর আহত হয়ে পড়েছিল, তাদেরকে এক স্থানে জড়ো করা হলো। আহতরা করুণ কণ্ঠে পানি পানি করলেও কেউ এগিয়ে এলো না পানি দিতে। বরং পানির পরিবর্তে অকথ্য গালাগালি করে। ঐ সময় এক পাঞ্জাবী মেজর এসে আহতদের উদ্দেশে বলে, এখন তোদের কে রক্ষা করে? এখন তোদের মুজিব কোথায়? তোরা বাঙালীরা বেইমান, তোদের আর বিশ্বাস করা যায় না। তোরা পাকিস্তানকে টুকরা করতে চেয়েছিলি। আজ দেখ পকিস্তানকে ভাঙ্গার কি মজা! আমরা সব বাঙালী বিশ্বাস ঘাতককে এভাবেই খতম করব। এই বলে সবাইকে আবার লাইন করে দাঁড় করানোর নির্দেশ দেয়। তারপরের বর্বরতার কোন তুলনা নেই। পাঞ্জাবী মেজরটি সুবেদারকে ডেকে বলে- এই বেইমানগুলোকে মারার জন্য আর একটি গুলিও নষ্ট করবে না, এদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারো। ১২০ জন বাঙালী সৈন্যের মধ্যে মাত্র ৬/৭ জন ওখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তার মধ্যে ৩ জন পালাতে পেরেছিল মৃত ব্যক্তির ভান করে। শরীরে গুলি লাগার পর যারা মৃতের মতো পড়েছিল, পাঞ্জাবীরা তাদের মৃত মনে করে লাশের স্তূপে ফেলে রাখে। পাঞ্জাবীরা বোঝেনি যে তারা জীবিত। তাই লাশের সঙ্গে তাদেরকে নদীতে ফেলে দেয়। তাই বেঁচে যায় ঐ কজন। বেঁচে আসা এক সৈনিকের বয়ান থেকেই আমার লেখার উৎস। লেখক : প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
×