ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গা কাপের চা-দোকান এখন ডিজিটালাইজড ॥ জমে আড্ডা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৮

ভাঙ্গা কাপের চা-দোকান এখন ডিজিটালাইজড ॥ জমে আড্ডা

গ্রামের পাকা সড়ক দিয়ে হেঁটে এসে চায়ের দোকানে বসলেন গান্ধাইলের আশরাফ আলী। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চে বসে চোখ রাখলেন টেলিভিশনের দিকে। গান্ধাইল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার পাড়াগাঁও। এই পাড়াগাঁয়ে সে সময়ের জুনিয়র হাই স্কুলে বাল্যকালে পড়ালেখা করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী, ১৯৭৫-এর ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিহত সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের সন্তান শহীদ এম মনসুর আলী। যিনি ‘ক্যাপ্টেন মনসুর’ নামে বঙ্গবন্ধুর কাছে পরিচিত ছিলেন। গান্ধাইল-কুড়িপাড়া পাকা সড়কের পাশে স্কুল মাঠের পূর্ব কোনায় এই চায়ের দোকানে চুলা জ্বলে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। গ্রীস্মকালে তা গড়ায় রাত দ্বি-প্রহর পর্যন্ত। আশরাফ আলী চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই টেলিভিশনের চ্যানেলটি ঘুরিয়ে দিলেন। রাজনৈতিক আলোচনা শুনবেন। এরই মধ্যে একজন বলে উঠলেন, ভাই, দেখি তো ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের রান কত? রাজনীতি, ক্রিকেট, উন্নয়ন ও বিনোদনের খবরও রাখেন গ্রামের মানুষ। এসবই চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় আলোচনা হয়। তর্ক-বিতর্ক হয়। ষাটের দশকে এদেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলেও তা ছিল রাজধানী কেন্দ্রীক। ক্রমান্বয়ে তা শহরে ছড়িয়েছে। ডিজিটাল যুগে গ্রামে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে টেলিভিশন। তার পর চায়ের দোকানে। এ চিত্র কাজীপুরের গান্ধাইলে শুধু নয়। সিরাজগঞ্জ তথা গোটা বাংলাদেশের গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ঢেউ লেগেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের ফসল শুধু শহর নয়- গ্রামের মানুষও ভোগ করছেন। গ্রামের চায়ের দোকানে টেলিভিশন, ভিডিও। রীতিমতো আড্ডা চলে রাত পর্যন্ত। এই আাড্ডা কখনও কখনও রাত দ্বি-প্রহর পর্যন্ত গড়ায়। রেডিও এখন আর বাজে না। টেরিস্টোরিয়াল চ্যানেল না থাকলেও ডিস লাইনে সারা দুনিয়ার দেখা মেলে। আড্ডায় রাজনীতির আলোচনাই বেশি। গ্রামের মানুষজনও এখন রাজনীতিতে জড়িয়েছে। উন্নয়ন চোখে দেখে, উন্নয়নের কথা বলে। গ্রামের রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন হয়েছে। কাঁচা কিংবা ইটপারা হেরিংবন বন্ড রাস্তা গ্রামে খুঁজে পাওয়া ভাড়। ক্রিকেট খেলা দেখার দর্শকেরও কমতি নেই। এক সময় গ্রামে চায়ের দোকান খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। এখন সড়কের মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান, এসব দোকানে টি-ব্যাগের চাসহ গ্রীন টিও পাওয়া যায়। প্রতিটি দোকানে টেলিভিশন ভিডিও চলে। বিদ্যুত পৌঁছেছে ঘরে ঘরে। এ সুবাদে টেলিভিশনও দেখার সুযোগ মিলেছে। চায়ের দোকানে টেলিভিশন এর মূল উদ্দেশ্য গ্রাহক আকর্ষণ করা। যে চা দোকানে টেলিভিশন নেই, সে দোকানে কাস্টমারও কম। গ্রামের মানুষ শহরের অনেক মানুষের মতোই চা পানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সামান্য অবসরে চা দোকানে বসে। টেলিভিশনের পর্দায় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলাসহ দুনিয়া দেখার সুযোগ নেয়। এসবই হচ্ছে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে। জীবন যাত্রার মানও বেড়েছে। গ্রাম এবং শহরের পার্থক্যও অনেকাংশে কমে এসেছে। এক কালের গ্রামের ভাঙ্গা কাপের চায়ের দোকান এখন ডিজিটালাইজড হয়েছে। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×