ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্পিত সম্পত্তির খড়গ ॥ ৩০ বছরেও মালিকানা পাননি ভুক্তভোগীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৪ মার্চ ২০১৮

অর্পিত সম্পত্তির খড়গ ॥ ৩০ বছরেও মালিকানা  পাননি ভুক্তভোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ পাট্টা দলিলে কেনা জমি। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। জমির মালিকদের কেউ কখনও ভারতে যাননি। জমি স্থানীয়দের কাছে বর্গা দিয়ে কর্মসূত্রে গাজীপুর ও ঢাকার বাসিন্দা হন। এরই মধ্যে অর্পিত সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হয়েছে। জমির মালিকানা ফিরে পেতে ত্রিশ বছর ধরে প্রশাসন ও আদালতে শরণাপন্ন ভুক্তভোগী যশোরের শার্শা উপজেলার গিলাপোল গ্রামের নিত্যানন্দ সরকারের ছেলে নিশিকান্ত সরকার, পুলিন বিহারী সরকার ওরফে পলেন সরকার, লুইস সরকার ওরফে লুণ্ঠন সরকার। জানা যায়, শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের গিলাপোল মৌজার এসএ ১২৪ ও ১২৫ নম্বর খতিয়ানের ৪১৮, ৪৩০, ৪৩১ নম্বর দাগের মোট ১ দশমিক ১৫ একর জমির মধ্যে সাড়ে ৯৩ শতক জমির মালিক নিত্যানন্দ সরকারের ছেলে নিশিকান্ত সরকার, পুলিন বিহারী সরকার ওরফে পলেন সরকার ও লুইস সরকার ওরফে লুণ্ঠন সরকার। তারা তিন ভাই ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল ১৯৭৩ নম্বর দলিলে স্থানীয় বাহাদুর ম-লের ছেলে মহম্মদ নবাই ম-ল ও রহমত ম-লের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন। পরে ১৯৮০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিন বিহারী সরকার ওরফে পলেন সরকার, লুইস সরকার ওরফে লুণ্ঠন সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ শতক জমি ক্রয় করেন অপর ভাই যোসেফ সরকার। জমির মালিকরা সর্বশেষ ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেন। তিন ভাই কাজের সুবাদে ১৯৮৪ সালের দিকে গাজীপুরে চলে যান। ওই সময় স্থানীয় আবুল হোসেনকে জমি বর্গা দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮৮ সালে সরকার নোটিস জারি করে ‘ওই জমি কেন শত্রুসম্পত্তি’ ঘোষণা করা হবে না। নোটিস পাওয়ার পর জমির মালিক তিন ভাই ৮৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ৪ ডিসেম্বর এবং ৮৯ সালের ৪ মার্চ শার্শা থানা ভূমি অফিসে সশরীরে হাজির হয়ে ‘শত্রুসম্পত্তি’ বিষয়ে আপত্তি জানান। সেই সময় তাদের হাজিরা নিয়ে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা জানান, জমি প্রকৃত মালিকরা ফিরে পাবেন। তারপর তারা ঢাকায় ফিরে যান। এরই মধ্যে উলাশী ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম ওরফে দুলদুল বার্ষিক চুক্তিতে আবুল হোসেনের কাছ থেকে ওই জমি বর্গার নামে দখলে নেন। ১৯৯২ সালে জমির মালিকরা বর্গার টাকা চাইতে গেলে জিয়াউল ইসলাম দুলদুল দাবি করেন, ওই জমি শত্রুসম্পত্তিভুক্ত (ভিপি) হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসন থেকে লিজ নিয়েছেন। ফলে তাদেরকে আর টাকা দেবেন না। ১৯৯৫ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি (বিনিময় সূত্র) দাবি করে শার্শার সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন জিয়াউল হোসেন দুলদুল। পরে ১৯৯৭ সালে জমির প্রকৃত মালিকদের পক্ষে রায় হয়। তারপরও জমি দখলে পায়নি। ১৯৮৮ সাল থেকে ওই জমি জেলা প্রশাসন থেকে ডিসিআর নিয়ে ভোগ দখল করছে জিয়াউল ইসলাম দুলদুল ও তার সহযোগীরা। সর্বশেষ ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তির ক ও খ উভয় তফসিলভুক্ত হয় ওই জমি। নিষ্পত্তির জন্য উভয় তফসিলে আবেদন করেন প্রকৃত মালিকরা। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালে মামলাটি চলমান রয়েছে। ওই মামলায় সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল দখলদার জিয়াউল ইসলাম দুলদুল ও তার সহযোগীরা যশোর জেলা জজ আদালতে আবেদন করেন। এরপর ২০১৪ সালের ২৬ জুন আদালত আবেদনের নামঞ্জুর করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করলে ২০১৫ সালের ৩০ জুন আদালত আবারও আবেদন নামঞ্জুর করে। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল আবেদনকারীরা হাইকোর্টে আবেদন করেন। যার নম্বর ২৩৫/১৭। হাইকোর্টের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সাক্ষ্যগ্রহণ থমকে আছে। নিয়মিত তারিখ পড়ছে। জমির মালিকানা দাবিদার মৃত যোসেফ সরকারের ছেলে ফ্রান্সিস সরকার বাবু বলেন, আমাদের পরিবারের কেউ কখনও ভারতে যায়নি। বরং স্থায়ীভাবে গাজীপুর জেলায় বসবাস করছি।
×