ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ দখলদারদের কবলে টাঙ্গাইল গালা হাট

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৪ মার্চ ২০১৮

অবৈধ দখলদারদের কবলে  টাঙ্গাইল গালা হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৩ মার্চ ॥ সদর উপজেলার গালা হাটের কোটি টাকা মূল্যের জায়গা যুগ যুগ ধরে অবৈধ দখলে রেখেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হলেও হাটের উন্নয়ন হয়নি দীর্ঘ অর্ধশত বছরেও। এই অবৈধ দখলবাজদের কারণে প্রতিবছর সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। ১৯৬০ সালে গালা হাটটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী হাটটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না তারা। সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গালা হাটের পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় অন্তত ৩০/৩৫টি কাঁচাপাকা অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনায় কেউ কেউ নিজেরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আবার অনেকে দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন। অনেকে আবার স্থাপনা নির্মাণ করে তা বিক্রিও করে দিয়েছেন। এদের মধ্যে জনতা বহুমুখী সমবায় সমিতির নামেই রয়েছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জায়গা। যার পুরোটাই হাটের পেরিফেরিভুক্ত। এ জায়গার মধ্যে জনতা বহুমুখী সমবায় সমিতির চারটি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে প্রায় ২৫ বছর ধরে। শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাট। হাজী ছাবাই উদ্দিন তালুকদার, মালু সেখ, রোস্তম আলী, আতোয়ার আলী সরকার, কোহাছেক আলী গালা এলাকার কয়েকজন সমাজসেবী ১৯৬০ সালে এই হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে হাটটি অবৈধ দখলদারদের কবলে পরে একদিকে যেমন হারিয়ে ফেলেছে তার অস্তিত্ব। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। ইতিপূর্বে এসব অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে বণিক সমিতি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ চেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারী দফতরে আবেদন করেও কোন ফল পায়নি। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে টাঙ্গাইল-৫ আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেনের কাছে বণিক সমিতির পক্ষে একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়। এমপি জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশও করেন। বিগত ২০১৫ সালের ৫ মার্চ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের স্মারক মূলে সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভূমি ও ইমারত (দখল পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ, ১৯৭০ এর ৫(১) ধারা অনুযায়ী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে অবৈধ দখল/স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। তারও আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান গালা হাটের পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের কবল থেকে আজও পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা মুল্যের এই জায়গা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এরও আগে ২০১২ সালের ১৩ মে এবং তার দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২১ মে গালা হাটের পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নোটিস প্রদান করা হয়। কিন্তু অজানা অলৌকিক কারণে অদ্যাবধি এই অবৈধ দখলদার ও তাদের নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। এলাকাবাসী জানান, অন্তুত চারবার উচ্ছেদের নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে উচ্ছেদ করা হয়নি পেরিফেরির অবৈধ ঘরগুলো। ব্যবসায়ীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার দুইপাশে বসে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুখময় সরকার বলেন, আমরা এই হাটের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে সেগুলো মার্কিং, সীমানা নির্ধারণ, উচ্ছেদ নথি তৈরি করে নথি জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেছি। জেলা প্রশাসক সেটি অনুমোদনও দিয়েছেন। আমরা আমাদের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করেছি। এখন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের।
×