ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেরানীগঞ্জে খাস জমি দখল করে ভবন নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৪ মার্চ ২০১৮

কেরানীগঞ্জে খাস জমি  দখল করে ভবন  নির্মাণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২৩ মার্চ ॥ রুহিতপুর এলাকায় সিংহ নদীর সীমানা সংলগ্ন ১৫ কাঠা খাস জমি দখল করে ৭ তলা ভবন নির্মাণ করেছে স্থানীয় তমিজ উদ্দিন। এলাকাবাসী অভিযোগে জানান, সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী উপজেলার কিছু অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের খাস জমির ওপর ভবন নির্মাণ করেছে। গতবছর উপজেলা প্রশাসন আদালতের নির্দেশমতে ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অভিযানে সরকারী জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেট, দোকান ও বড় বড় ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এরপর তমিজ উদ্দিনের ভবন উচ্ছেদ করতে গেলে তিনি কালক্ষেপণ করার জন্য আদালত থেকে জোড়া-তালি দিয়ে নোটিস এনে তার ভবন উচ্ছেদে বাধা দেয়। পরবর্তীতে ২য় দফা আদালত তার ভবন উচ্ছেদের জন্য নোটিস পাঠায়। কিন্তু তাতেও তিনি কোন কর্ণপাত করেনি। উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই ভবনটি ৭ম তলা পর্যন্ত তিনি নির্মাণ করেছে। বেলনা এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগে জানান, বেলনা এলাকায় ভূমিদস্যুরা সিংহ নদীর সিমানা দখল করে ৮-১০টি মসজিদ অবৈধভাবে নির্মাণ করেছে। যাহা সম্পূর্ণ সরকারী জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। সিংহ নদীটি কেরাণীগঞ্জের আকসাইল এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে বেলনা, রামেরকান্দা, রুহিতপুর এবং আব্দুল্লাপুর হয়ে ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ইহার দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটারেরও বেশি। প্রতিটি এলাকাতেই নদীর ২ তীর দখল করে ভূমিদস্যুরা গড়ে তুলেছে শত শত ভবন ও দোকানপাট। তারা বছরের পর বছর সেই দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। নদীর ২ পাড়ে স্থাপনা নির্মাণের ফলে দিন দিন নদীটি মরা খালে পরিণত হচ্ছে। গত ১০ বছর পূর্বে নদীটি দিয়ে পানি প্রবাহ বিদ্যমান ছিল। তখন নদীতে খরস্রোতা ও পানিতে ভরপুর ছিল। চাষীরাও ওই নদীর পানি দিয়ে জমিতে ফসল ফলাত। রাজাবাড়ী, আব্দুল্লাপুর ও বাঘৈর এলাকাটি কেরাণীগঞ্জের কৃষি প্রধান এলাকা। ওই এলাকার কৃষকদের জমিতে সেচের একমাত্র উপায় ছিল সিংহ নদী। কিন্তু ভূমিদস্যুদের থাবায় নদীটি আজ তার রূপ পরিবর্তন করে একটি ময়লা ডোবায় পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে ওই সব এলাকায় চাষাবাদ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় কৃষকরা জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্যান্য কাজ বেছে নিয়েছে। ভূমিদস্যুরা রাজনৈতিক আশ্রয় ও উপজেলার অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আতাত করে ভুয়া জাল কাগজপত্র তৈরি করে নামে-বেনামে নদীর তীরের শত শত একর জমি ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ভরাট করে বিভিন্ন নাম দিয়ে প্লট আকারে বিক্রি করছে। কেরাণীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সিংহ নদী উদ্ধারের জন্য একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই অভিযানের পর সরকারী নজরদারি না থাকায় পুনরায় অবৈধ দখল করে দোকান পাট ও ভবন নির্মাণ করে ভূমিদস্যুরা। এ বিষয়ে কেরাণীগঞ্জ উপজেলা রাজস্ব ও ভূমি কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান (জুম্মন) জানান, রুহিতপুর, রামেরকান্দা, বেলনা এবং আটি বাজার এলাকায় একাধিকবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ও জরিমানা করেছি। দখলকারীরা যদি ওই এলাকায় পুনরায় সরকারী জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে আমরা এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেব। যাতে ভূমিদস্যুরা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।
×