ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মদদ দেয়ার অভিযোগ ইতোপূর্বে মিরপুর ও দারুস সালাম এলাকায় জেএমবির দুই বড় আস্তানায় অভিযানে নিহত ও পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের অনেকের সঙ্গেই ঐ শিক্ষকের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে

মিরপুর ফের টার্গেট ॥ জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৪ মার্চ ২০১৮

মিরপুর ফের টার্গেট ॥ জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আবারও মিরপুর এলাকায় জঙ্গীরা আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ঘনবসতি থাকায় এলাকাটিকে টার্গেট করেছে তারা। জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলার পেছনে মদদ যোগানোর অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইতোপূর্বে মিরপুর ও দারুস সালাম এলাকায় আবিষ্কৃত জেএমবির দুইটি বড় আস্তানায় নিহত ও পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের অনেকের সঙ্গেই ওই শিক্ষকের সরাসরি যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এমদাদ নামের এক জেএমবি সদস্য পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে মোঃ আফজাল হোসাইন নামে হযরত শাহআলী বাগদাদী (রহ) কামিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ পায়। তিনি জামায়াতের রোকন ও ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এই শিক্ষক এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিরপুরে জঙ্গী আস্তানা গড়ে ওঠার বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেলেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি স্পষ্ট হয় ২০১০ সালে। ওই সময় এমদাদ নামে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এক সদস্য পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। পরবর্তীতে এমদাদের পরিচয় মেলে। এমদাদ শাহআলী বাগদাদী (রহ) কামিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তদন্তে জানা যায়, এমদাদকে নানাভাবে সহায়তা করতেন মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ আফজাল হোসাইন। তিনি জামায়াতের রোকন ছিলেন। পিতার নাম মুহম্মদ আজিজুল ইসলাম। বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন বেংগাড়ি গ্রামে। তিনি এলাকায় শীর্ষ জঙ্গী নেতা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ বলছে, এই শিক্ষকের সঙ্গে ২০১৫ সালে আবিষ্কৃত হওয়া শাহ আলী মাজারের পেছনে জেএমবির আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত সাত জন এবং ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর মাজার রোডের বর্ধমান বাড়িতে আবিষ্কৃত হওয়া জঙ্গী আস্তানায় নিহত ও গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। শাহ আলী মাজারের পেছনের আস্তানায় তৈরি গ্রেনেড দিয়ে পুরান ঢাকার তাজিয়া মিছিলে ও চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আর বর্ধমান বাড়ির আস্তানায় নিহত শীর্ষ জঙ্গী ছিল আব্দুল্লাহ। আস্তানা থেকে বাড়ির মালিকের ছেলে বিমানের পাইলট সাব্বির গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সাব্বির আদালতে জানায়, বিমান নিয়ে তার গণভবনে হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। আস্তানাটিতে যাতায়াত ছিল হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর। শিক্ষক আফজাল হোসাইনের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম সাইফুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আফজাল হোসাইন সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক ২০০২ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ বজলুর রহমানকে মারধর করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়ে নিজেই অধ্যক্ষ হন। মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবির চক্র গড়ে তুলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেন। ২০১০ সালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত হন। জেএমবি সদস্য এমদাদ নামের এক ছাত্র পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর আফজাল হোসাইনের সঙ্গে জঙ্গীদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ ওঠে। এই শিক্ষকের কাছে অনেক লোকজন যাতায়াত করে। যাদের যাতায়াত সন্দেহজনক বলে মনে হয়। তার সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদীদের যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে যথেষ্ট অসামঞ্জস্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফঁাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ক্যাশিয়ার ছিলেন আফজাল হোসাইন। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত তামান্না পার্কের মালিক জামায়াত নেতা ঝিনাইদহের আব্দুল্লাহ আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আফজাল হোসেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর এবং সর্বশেষ গত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাপক হাঙ্গামা করেন শিক্ষক আফজাল হোসাইন। নানা ঘটনায় বিভিন্ন সময় মিরপুর থানায় ও দারুস সালাম থানায় অন্তত ৪টি জিডি হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় মিরপুর থানা পুলিশ, দারুস সালাম থানা পুলিশ ও মাদ্রাসার তরফ থেকে তদন্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকষ্ঠকে বলেন, পারস্পারিক অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে দায়েরকৃত জিডির তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক আফজাল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তাকে হেয় করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব প্রচার করা হচ্ছে। তিনি কোন কালেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। জামায়াতের সঙ্গে তার কোন সর্ম্পক বা যোগাযোগ নেই। আর বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কোন জঙ্গী বা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গেও তার কোনকালেই যোগাযোগ ছিল না, এখনও নেই।
×