ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায়ের পর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন

জামায়াতের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই দাবি কারলাইলের

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৪ মার্চ ২০১৮

জামায়াতের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই দাবি কারলাইলের

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনী পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড এ্যালেক্স কারলাইল দাবি করেছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশ সরকারের এক মন্ত্রী তাকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িয়ে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা অসত্য ও মানহানিকর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত না থাকলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প তার থাকবে না। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থ আত্মসাতের দায়ে পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে পুরান ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি হাইকোর্ট থেকে চার মাসের জামিন পেলেও সর্বোচ্চ আদালত তা স্থগিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার কারলাইলকে আইনী পরামর্শক নিয়োগের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়। বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে এক বিবৃতিতে লর্ড কারলাইল বলেন, আমি জামায়াতের একজন আইনজীবী ও লবিস্ট হিসেবে কাজ করছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অসত্য এবং মামলা হওয়ার মতো একটি বিষয়। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান। যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের স্বাধীন পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রায় এক দশক কাজ করা এই আইনজীবী ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের সাবেক প্রধান জন স্কারলেটের সঙ্গে মিলে এসসি স্ট্র্যাটেজি লিমিটেড নামে একটি পরামর্শ সেবা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, যা বছর তিনেক আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় আসে। আর বাংলাদেশে তিনি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায়ের পর বিবৃতি দিয়ে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত বুধবার বলেন, একাত্তরের ঘাতকের লবিস্ট ছিল যে, সেই আইনজীবীকে ঢাকায় আনছে খালেদা জিয়ার দল। তার মানে হলো, এখনও খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়েনি, একাত্তরের ঘাতকদের ছাড়েনি। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আমাদের ক্ষোভের বিষয় হচ্ছে, লর্ড কারলাইল শুধু একজন আইন ব্যবসায়ী নন, তিনি ব্রিটেনের আইনসভার সদস্য। ব্রিটেনের আইন সভাতে একাত্তরের গণহত্যার নিন্দা করা হয়েছিল। বহু আইন প্রণেতা তখন এই গণহত্যার নিন্দা করেছেন। ব্রিটিশ সরকার এটার নিন্দা করেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম-জনগণ এটার নিন্দা করেছে। তার মতে, ব্রিটিশ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে লর্ড কারলাইল তার অফিসকে অপব্যবহার করেছেন জামায়াতের পক্ষে ওকালতি করার জন্য, আর এখন খালেদা জিয়ার দুনীতি মামলা লড়বেন। তিনি পদের সুযোগ নিয়েছেন, প্রথমে গণহত্যাকারীর পক্ষে লড়ার জন্য আর এখন একজন দুর্নীতিবাজের পক্ষে লড়ার জন্য। এটা উচিত নয়, এটা নৈতিকতাবিরোধী। অত্যন্ত অনৈতিক কাজ করছেন লর্ড কারলাইল। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমকে জানান, পাঁচ বছর আগে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লর্ড কারলাইলের সঙ্গে তার দীর্ঘ তর্ক হয়েছিল। তখনই মনে হয়েছে, লর্ড কারলাইল জামায়াতের ব্রিফ নিয়েছে। মানে জামায়াতকে সে মক্কেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ জামায়াত কারলাইলকে তাদের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছে। তিনি শুধু পার্লামেন্ট সদস্য নন, তিনি একই সঙ্গে একজন আইন ব্যবসায়ীও। আইন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি তার মক্কেলের ব্রিফ নেবেন, যে কোন মামলা করবেন; এটা তো খুবই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে লর্ড কারলাইল তার বিবৃতিতে বলেন, বেগম জিয়ার আইনজীবী দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ পেশাগত জায়গা থেকে। আর হাউস অব লর্ডসে আমার সদস্যপদের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আইনী পরামর্শ দেয়ার বিষয়টি কোনভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের রায়ের সমালোচনার বিষয়েও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই ব্রিটিশ আইনজীবী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকছে কিনা সে বিষয়ে একজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী হিসেবে আমি আমার মতামত সেখানে দিয়েছি।
×