ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৪ মার্চ ২০১৮

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে দুটি অর্থনীতি পরস্পরের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধের আরও কাছাকাছি হলো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।- এএফপি ও গ্লোব এ্যান্ড মেইল শুল্ক আরোপ করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগ সীমিত করার পাশাপাশি মার্কিন প্রযুক্তি চুরি করার দায়ে চীনের ওপর জোর করে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হলো। যা চীনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একটি বিরল ঘটনা হিসেবে আবির্ভূত হলো। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেজিংয়ের ৩৮ হাজার পাঁচ শ’ কোটি মার্কিন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা হবে শুল্ক আরোপ করে। যাকে ট্রাম্প মার্কিন উৎপাদন খাতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বরাবর দায়ী করে আসছেন। এটি প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য বিষয়ক এজেন্ডার সবচেয়ে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা। উচ্চ-প্রযুক্তি ও ভারিশিল্প খাতকে লক্ষ্য করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যার মধ্যে মোবাইল, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, মহাকাশ, ফার্মাসিউটিক্যাল ও রেলগাড়ির যন্ত্রাংশ রয়েছে। চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করার পর শুক্রবার সকালে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। নতুন শুল্ক আরোপের ফলে প্রায় তিন শ’ কোটি মার্কিন ডলার চীনা পণ্য হুমকিতে পড়বে। যার মধ্যে ১২৮টি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। চীন ইতোমধ্যে শূকরের মাংস ও পুনঃব্যবহৃত এ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ এবং তাজা ফল, বাদাম, মদ, জিন্স ও ইস্পাতের পাইপের ওপর ১৫শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পাল্টা চীনের পদক্ষেপ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে তাতে কোন পক্ষই বিজয়ী হবে না বলে সতর্ক করেছে চীন। বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল পিপলস কাউন্সিলের শেষ দিনে দেশটির স্টেট কাউন্সিলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং উভয়পক্ষকেই ‘শান্ত’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ শিথিল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবারের শুনানিতে লাইটিজারের উদ্দেশে মিনেসোটারর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এ্যারিক পলসন বলেন, সবার মতো আমিও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি লঙ্ঘন নিয়ে চীনকে লক্ষ্যস্থল বানাতে চাই। চাই তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে। আমাদের উচিত হবে, চীনের যে পরিবর্তন আমরা চাই, সেটিকে লক্ষ্য বানান। নিজের পায়ে গুলি চালান উচিত হবে না আমাদের। নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কার কথা স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য বিশ্লেষক লাইটিজারও। চীনের পাল্টা পদক্ষেপ মার্কিন কৃষিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, যদি পাল্টা পদক্ষেপ আসে যুক্তরাষ্ট্রকে তখন কৃষকদের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। গত আগস্টে ট্রাম্প বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারায় চীনের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়ার পর অনুসন্ধানে এসব বেরিয়ে আসে বলে দাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য করছে না বলে প্রতীয়মাণ হবে সেসব দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ধারাবাহিক অসন্তোষের কথা বলে আসছেন। সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার করা যায়, চীন এমন প্রযুক্তি খুঁজছে বলেও উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হুমকি সৃষ্টি করছে মনে হওয়ায় বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনায় সরকারের ক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইনেরও চিন্তা করছে মার্কিন কংগ্রেস।
×