ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছন্দ ঝরে বন্ধ ঘরে

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২৩ মার্চ ২০১৮

ছন্দ ঝরে বন্ধ ঘরে

অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল। অপেক্ষা করছিলাম স্তোহাষ্পদ পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর ছড়ার বইয়ের। প্রায় প্রতিবছর তাঁর একটা না একটা ছড়ার বই বেরুবেই। একে তো ভাষার মাস, তারপর এ সময় পাঠকরাও বইয়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন। পৃথ্বীশর আমার মতো কিছু পাঠক আছেন, যারা বইয়ের অপেক্ষা করে থাকেন। এই মুহূর্তে আমার হাতে রয়েছে পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর (অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-এ) সপ্তবর্ণ প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত বড়োদের ‘ছন্দ ঝরে বন্ধ ঘরে’, নাগরী প্রকাশনা থেকে শিশুতোষ ‘বিষ্টি ঝরে তিমা পড়ে’ ও পায়রা থেকে ‘রোজার শেষে ঈদের মজা’ শিরোনামের তিনখানা ছড়াগ্রন্থ। ৪০টি ছড়া দিয়ে সাজানো ‘ছন্দ ঝরে বন্ধ ঘরে’ ছড়ার বইটি একটানা পড়লাম। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। অলংকরণ করেছেন টিটনকান্তি দাশ। পরিবেশক : পাঠক সমাবেশ, পাঠশালা, রকমারি ডট কম। মূল্য একশত পঞ্চাশ টাকা। পাতায় পাতায় সুন্দর ইলাস্ট্রেশনসহ বিগত ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ছড়াগুলোতে দেশাত্মবোধ, রাজনীতি, অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজ সচেতন মানুষের পক্ষে; অন্যায়, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্লোগানমুখর ছড়া স্থান করে নিয়েছে বইয়ের পরতে পরতে। যেমন- ‘সূ চি’র সরকার জবাব দে’ ছড়াটি- ‘রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের/ পাখির মতো মারছে কে?/ বার্মাসেনা জবাব দে!/ নিজের দেশে নির্যাতিত/ পরবাসী করছে কে?/ মিয়ানমার তুই জবাব দে!/ নিরীহ সব রোহিঙ্গাদের/ বাড়ি-ঘর ওই পুড়ছে কে?/ সূচির সরকার জবাব দে!/ রোহিঙ্গাজাত বলে-কয়ে/ মুসলিম নিধন করছে কে?/ জাতিসংঘ জবাব দে!/ হাজার হাজার শরণার্থী/তাদের এবার দেখবে কে?/বিশ্ব-বিবেক জবাব দে!’-এ ছড়াটির নাম যদি ‘জবাব দে’ হতো তবে আরও কাব্যময় হতো। ‘তিস্তা চুক্তি’ শিরোনামের ছড়ায় কবি বাংলাদেশের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বৈমাত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করেছেন ছড়ার ছন্দে এভাবেÑ ‘মা মমতার/ মনে তো নেই মমতা/ ভুলে গেছেন/ পেয়ে তিনি ক্ষমতা/ তাইতো তিস্তার/ হয়নি পানির সমতা।’ এভাবে ‘সুন্দর বনের সুন্দরীরা’, ‘এক মাঘেতে যায় না তো শীত’, রিলিফ’, ‘রাজনীতির ডেঙ্গুজ্বর’-সহ সবকটি ছড়ায় প্রতিবাদী সুর পেলাম। ‘আগুন দেশের সবকিছুতে’ ছড়ায় বর্তমানে দেশের আর্ত-সামাজিক অবস্থার একটা চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘ছড়া শিরোনামের ছড়াটি দুর্দান্ত। এ ছড়ায় পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী ছড়ার সংজ্ঞায়িত করেছেন ছড়ার ছন্দ, লয়, তাল ও উপমা দিয়ে। তিনি লিখেছেনÑ ‘ ছড়ায় থাকে ছন্দ এবং/ ছড়ায় থাকে তাল/ ছড়ায় থাকে টক্-মিষ্টি-ঝাল।/ ছড়ায় থাকে অন্ত্যমিল আর/ ছড়ায় থাকে লয়/ ছড়ায় থাকে সাহস এবং ভয়।/ ছড়ায় থাকে সহজ কথা/ কঠিন কথার চাল্/ ছড়ায় থাকে মাকড়সারও জাল্।/ ছড়ার গতি ঘাড়ার মতো/ কিংবা নদীর ¯্রােতের মতো/ কাল-বোশেখী ঝড়ের মতোও হয়;/ ছড়া দিয়ে যায়-রে করা/ এ পৃথিবীর মানুষের মন জয়।’ বইখানা হাতে নিলেই পড়ার ইচ্ছে করবে এবং পড়তে লাগলে শেষ না করে উঠা কঠিন হয়ে পড়বে। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
×