ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

নতুন প্রজন্মের সুপারহিরো

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২২ মার্চ ২০১৮

নতুন প্রজন্মের সুপারহিরো

ব্ল্যাক প্যান্থার সিনেমার মাধ্যমে সুপারহিরো সিনেমার আকাশে উড়ল এক নতুন নিশান। শুধু মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সই নয়, পুরো সুপারহিরো সিনেমার জগতেই যেন ব্ল্যাক প্যান্থার যোগ করলো নতুন এক মাত্রা। এই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে হলিউডে তৈরি হলো বিশাল বাজেটের কোন সিনেমা, যার বক্স অফিস সাফল্য হয়ত বদলে দিতে পারে ব্ল্যাক সিনেমাগুলো নিয়ে হলিউডের প্রচলিত রীতি। ব্ল্যাক প্যান্থার চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কথা প্রথম উঠেছিল ১৯৯২ সালে। ওয়েসলি স্নাইপ্স বলেছিলেন, শিগগিরই এমন একটি সুপারহিরো চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে মার্ভেল। সে কথা একটা সময় কেবল কথাতেই পরিণত হয়। এরপর আবার একটা শোরগোল ওঠে ২০০৫ সালে। সেই কথানুসারেই ২০১১ সালে লিখতে শুরু“করা হয় চিত্রনাট্য। সে লেখা শেষ হতে হতে পেরিয়ে যায় ২০১৪। কিন্তু চলচ্চিত্র আর আসে না। অবশেষে সেই বছর চলচ্চিত্র নিয়ে আবার ঘোষণা আসে। আশা করা হয়, এবার বুঝি চূড়ান্ত রূপ পেয়ে আসছে মার্ভেলের প্রথম ‘ব্ল্যাক’ বা কালো চামড়ার সুপারহিরো চলচ্চিত্র। কিন্তু না, এরপরও কয়েক বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। অবশেষে মুক্তি পেয়েছে প্রতিক্ষীত ছবি ব্ল্যাক প্যান্থার। আবার একের পর এক রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ে যাচ্ছে হলিউড ছবি ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’। প্রচারণা থেকে শুরু করে গানের এ্যালবাম আর হলভরা দর্শক প্রমাণ করে দিয়েছে এই বছর ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’কে পেছনে ফেলা অন্য ছবির জন্য কঠিন হবে। কারণ, এরই মধ্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে এই ছবি, যা হলিউডের যে কোন ছবির জন্য একটি বড় মাইলফলক। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ছবি মুক্তি পায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। শুরু থেকেই এ ছবি বিভিন্ন মহলের দর্শক ও বোদ্ধার প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। আর মুক্তির এক মাসের মধ্যে ব্ল্যাক প্যান্থার-এর ১০০ কোটি ডলার আয় ছবিটিকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিল। হলিউডের আলোচিত নারী পরিচালক প্যাটি জেনকিনস থেকে শুরু“করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা পর্যন্ত এই ছবির প্রশংসা করেছেন। অল্পবয়সী পরিচালক রায়ান কুগলারও সিনেমাকে সাজিয়েছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। ইতিহাস আর বাস্তবের মিশেলে ওয়াকান্দিয়ান রূপকথাকে তুলে ধরেছেন অনিন্দ্য সুন্দর এক রূপে। তার আগের দুই সিনেমা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি হলিউডে চমৎকার কিছু করে দেখাতে এসেছেন। আর সেটা প্রমাণ করতেই যেন এবার উপহার দিলেন ব্ল্যাক প্যান্থার। শত-সহস্র বছর পূর্বে যখন আফ্রিকার পাঁচ জাতি ভিনগ্রহী ধাতু ভাইব্রেনিয়াম নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে, তখন একজন যোদ্ধা ওই ধাতুর দ্বারা প্রভাবিত একটি হৃদয়াকৃতির ওষুধ সেবন করেন যা তাকে সুপারন্যাচারাল ক্ষমতা দান করে। ক্ষমতার বলে তিনিই হয়ে উঠেন প্রথম ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ এবং সব গোত্রকে এক করে ‘ওয়াকান্দা’ জাতি প্রতিষ্ঠা করেন। যুগে যুগে ওয়াকান্দাবাসী পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান রতœ ভাইব্রেনিয়াম ব্যবহার করে ভিন্ন মাত্রার প্রযুক্তি গড়ে তোলে। এই অগ্রসর প্রযুক্তি এবং তাদের শত বছরের সংস্কৃতিকে আগলে রেখে ওয়াকান্দাবাসী এক অনন্যসাধারণ জাতিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু বহির্বিশ্বের নজর এড়ানোর জন্য এই অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তারা নিজেদের একটি তৃতীয় বিশ্বের জাতির চাদরে ঢেকে রাখে। এই ছবিতে রয়েছে এ্যাকশন, ড্রামা, সাসপেন্স, রোমান্স, ইতিহাস, আবেগপ্রবণ কাহিনী, চমৎকার অভিনয় এবং স্মরণীয় বেশ কয়েকটি চরিত্র। মূল চরিত্র ছাড়াও সহযোগী চরিত্ররা কাহিনিটিকে বেশ ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক সময় তাঁরা নায়কের চেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সচরাচর সুপারহিরো ছবিতে সহযোগী চরিত্রদের এতো নিখুঁতভাবে দেখানো হয়না। তাছাড়াও, নারী চরিত্রগুলোকে দেখানো হয়েছে অনেক জোরালো এবং দৃঢ়ভাবে। ছবিটিতে খলনায়কের চরিত্রটিও অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁকে সাধারণ ‘সুপারভিলেন’ মনে হয় না। তাঁর ইচ্ছা এবং প্রেরণা অনেক বাস্তববাদী।
×