ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তবু ফুটবলে মেতেছে সোমালিয়ার মেয়েরা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২২ মার্চ ২০১৮

তবু ফুটবলে মেতেছে সোমালিয়ার মেয়েরা

গোলাম মোস্তফা ॥ গৃহযুদ্ধে টালমাটাল পুরো দেশ। শহরের পথে পথে চলছে জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের টহল। হাতে ভারি অস্ত্র আর খোলা জিপে চলছে প্রহরা। যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েই ভাবতে হয় বেশিরভাগ সময়, সেখানে ফুটবল খেলাটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেই সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতেই এখন নিয়ম ভেঙ্গে ফুটবল খেলছে নারীরা। মূলত সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং আল শাহাবাব-এর ভয়ে ফুটবলে আগ্রহী ছিলেন না সোমালিয়ার প্রমীলারা। অথচ এখন কড়া নিয়ম ভেঙ্গে ফুটবলে আগ্রহী দেখাচ্ছে দেশটির তরুণ প্রতিভাবান প্রমীলারা। খুব ভোরে হিজাব খুলে জগিং-অনুশীলনে মেতে উঠতে দেখা যায় তাদের। এখনও ভয় যে নেই তা নয় বরং ভয়কে জয় করেই ফুটবলে মনোযোগ বাড়াচ্ছেন দেশের প্রমীলারা। এ প্রসঙ্গে হিবাক আব্দুকাদির নামের ২০ বছরের এক প্রমীলা ফুটবলার বলেন, ‘এটা বলতে কোন বাধা নেই যে, ভারি জামা-কাপড় খুলে আমরা যখন শর্ট প্যান্ট কিংবা টি-শার্ট পরে মাঠে নামি তখন আমরা খুব ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকি। আমাদের সমাজে কখনই খেলা-ধুলার পোশাক পরিধান করতাম না যে কারণেই ক্রীড়ার পোশাক পরে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করাটা এখনও খুব কঠিন কাজ।’ সোমালিয়ার মোগাদিশুর প্রথম নারী ফুটবল ক্লাব গোল্ডেন গার্লস সেন্টার। এই ক্লাবে এখন প্রমীলা ফুটবলারের সংখ্যা ৬০ জন। তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার হিবাক আব্দুকাদির তাদেরই একজন। গোল্ডেন গার্লস সেন্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহামেদ আবুকার আলী। মূলত ভিন্ন কিছু করে দেখানোর চিন্তা থেকেই গোল্ডেন গার্লস সেন্টার তৈরি করেন। তিনি যখন বুঝতে পারেন সোমালিয়ায় কোন মেয়ে ফুটবলার নেই ঠিক তখনই এটা তৈরির পরিকল্পনা করেন। এ প্রসঙ্গে আবুকার আলী বলেন, ‘আমরা এই মেয়েদেরই সোমালিয়ার প্রথম পেশাদার ফুটবলার বানানোর চেষ্টা করছি। অনুশীলনের সময় হলে আমরাই এই মেয়েদের এখানে নিয়ে আসি। অনুশীলন শেষে আবার তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসি। কেননা তারা মেয়ে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এমনটা করে আসছি আমরা। তাদের জন্য এটা সত্যিই বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে এগুলো মোটেও আমাদের উচ্চাকাক্সক্ষাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। নারীদের ফুটবল ক্লাব হিসেবে সোমালিয়ায় গোল্ডেন গার্লস সেন্টারকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের বিশ্বাস ভিন্নভাবে চিন্তা-ভাবনার এটাই সঠিক সময়।’ সোমালিয়ায় ফুটবল এতোটাই অবরুদ্ধ ছিল যে, টেলিভিশনেই খেলা দেখা নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ৩০ বছর পুরুষদের ফুটবলও নিষিদ্ধ ছিল সোমালিয়ায়। যে কারণে দেশটির মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছিল ঘরের মাটিতে ফুটবল উপভোগ করা। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরেই দেশটির ফুটবল ফেডারেশন শোনায় সুখবর। প্রায় ৩০ বছর পর আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরেছে সেখানে। ১৯৮৮ সালে আফ্রিকান নেশন্স কাপের বাছাইপর্বে উগান্ডার বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলেছিল তারা। গৃহযুদ্ধ শুরুর পর অনেকটা যাযাবর হয়ে যায় তারা। ইথিওপিয়া, জিবতিসহ বেশ কয়েকটি দেশকে ‘হোম’ ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ঘরোয়া ফুটবলেরও বেহাল দশা। গৃহযুদ্ধের প্রভাব অনেকটা কমে আসায় আবারও নিজেদের মাটিতে খেলছে দলের সবাই। এ বছরে বেশ কয়েকটি পূর্ব আফ্রিকান দেশকে প্রীতি ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ জানানোরও পরিকল্পনা রয়েছে সোমালিয়ার।
×