ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের অধিকাংশ সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২২ মার্চ ২০১৮

যশোরের অধিকাংশ সড়ক বেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে ভাল রাস্তা পেতে দুই বছর লাগবে। দীর্ঘ দু’ বছর খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলাচল করতে হবে যশোরের লাখ লাখ মানুষকে। তবে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোপুরি ভাল না হলেও খুব তাড়াতাড়ি সহনীয় মাত্রায় আনা হবে মহাসড়কগুলো। এই সহনীয় মাত্রাটি আসলে কী, তার স্পষ্ট জবাব নেই যশোর সওজ কর্মকর্তাদের কাছে। জেলার মধ্যে পাঁচটি মহাসড়ক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক, যশোর-মাগুরা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক এবং যশোর-নড়াইল মহাসড়ক। বছরের পর বছর এসব রোডের অধিকাংশ চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে, কোন কোন সড়কের ঝাঁকুনিতে গর্ভবতীর সন্তান প্রসব হয়েছে। আবার গাড়িতে চড়ে কোমরে আঘাত পেয়েছেন এমন লোকের সংখ্যাও একেবারেই কম না। কেবল তাই না, প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি বিকল হচ্ছে ভাঙ্গাচোরা সড়কে চলাচল করে। দিন দিন অবস্থা ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। প্রতিটি মহাসড়কে চলাচল করার সময় যশোরের সীমানায় প্রবেশের বিষয়টি কারও স্মরণ করে দেয়া লাগছে না। যাত্রীদের বুঝতে বাকি থাকছে না, যেখান থেকে ঝাঁকুনি আর যানবাহনের ঝনঝনানি আওয়াজে বিরক্তির সৃষ্টি হচ্ছে সেখান থেকেই যশোর শুরু। চালকরা বর্তমানে এসব মহাসড়ক দিয়ে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। আর যারা যাচ্ছেন তারা অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। চালকদের বক্তব্য, ‘যে পরিমাণ ডেমারেজ হচ্ছে তাতে ভাড়া বেশি না নিয়ে উপায় নেই।’ বছরের পর বছর দুরবস্থা চললেও যশোর সওজ কর্মকর্তাদের সহজ জবাব, ‘এই তো কাজ শুরু হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘেœ যাতে বাড়ি ফিরতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ইত্যাদি।’ এ ধরনের কথা শুনতে শুনতে এক প্রকার হাঁফিয়ে উঠেছে যশোরবাসী। কর্মকর্তাদের এ ধরনের কথায় এখন আর বিশ্বাস নেই কারও। যশোর সওজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এই মহাসড়কটি দু’টি প্যাকেজে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ শ’ ২১ কোটি টাকা। যশোর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, এই মহাসড়কে প্যাকেজ-১ এর আওতায় রয়েছে শহরের পালবাড়ি থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত। আর প্যাকেজ-২ এর আওতায় বসুন্দিয়া থেকে রাজঘাট পর্যন্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে বসুন্দিয়া থেকে রাজঘাট পর্যন্ত সড়কের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তিনি। মূল কাজ আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলে দাবি করেন রহিম। প্যাকেজ-১ অর্থাৎ পালবাড়ি থেকে বসুন্দিয়া অংশের কাজ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। আগামী দু’ সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন হবে বলে আশা করেন তিনি। যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সংস্কারে ৩শ’ ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। একই সঙ্গে হাইকোর্টে রিট হওয়ায় যশোর-বেনাপোল সড়কের কাজ শুরুর বিষয়টি এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। বর্তমানে এই মহাসড়কটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, মানুষ এখন বেনাপোলে যাওয়ার কথা শুনলে ভয়ে আঁতকে ওঠে। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ২২ কিলোমিটার রয়েছে যশোর অংশে। এর বেশিরভাগই চলাচলের অনুপযোগী। ঢাকা থেকে যশোর, খুলনাসহ অন্যান্য স্থানে যাওয়ার উদ্দেশে যারা যানবাহনে চড়েন তাদেরকে বলা লাগছে না মহাসড়কের যশোর অংশ শুরু হচ্ছে কোথা থেকে। ঝাঁকুনিতেই বুঝে যাচ্ছেন সবকিছু। এই মহাসড়কের ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার সংস্কারে ১৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। তার দাবি, কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরুর আলামত পাচ্ছেন না পথচারীরা। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক ভাল রয়েছে। যতটুকু সমস্যা ছিল সেটুকু ঠিক করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তার ভাষায়, যশোর-নড়াইল মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ পর্যায়ে। এটি করতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ কোটি টাকা। পাঁচটি মহাসড়কে কেবল ‘হচ্ছে আর হচ্ছে’। বাস্তবে কোন আশার আলো দেখছে না যশোরবাসী। আসলে মহাসড়কের দুর্ভোগ কবে শেষ হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক হতে তার মানে ভাল সড়ক পেতে দু’বছর লাগতে পারে। তবে, খুব তাড়াতাড়ি মহাসড়কগুলোকে সহনীয় করা হবে-দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
×