ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পানি সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ মার্চ ২০১৮

পানি সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের পানি সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের নীতি-নির্ধারক, সুশীল সমাজ ও জনগণের সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পানির অপচয় রোধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। রাজধানীর পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের অসেচতনতাও অনেকটা দায়ী, আইনের প্রয়োগও কম হয়। তাই ঢাকা শহরের গৃহস্থালির আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বুধবার পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ আয়োজিত ‘এক্সপ্লোরিং নেচার-বেসড সল্যুসন টু ওয়াটার চ্যালেঞ্জেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নেচার ফর ওয়াটার’। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আশরাফ আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ আব্দুল করিম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শিল্পায়ন, গৃহস্থালি ও কৃষিভিত্তিক উৎসগুলো থেকে ব্যপক মাত্রায় নির্গত দূষণের ফলে সৃষ্ট পানি স্বল্পতা মোকাবেলায় প্রকৃতি নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পরীক্ষিত কিছু উদ্যোগ রয়েছে যা একই সঙ্গে পরিবেশ উপযোগী এবং কৃত্রিম সংরক্ষণাগারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী পানির সংস্থান করে। অধ্যাপক আশরাফ আলী আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন, যান্ত্রিক প্রকৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে নদীকে কেবল পানির প্রবাহ হিসেবে দেখা হয়। অথচ নদীকে জীবন্তসত্তা অথবা সমগ্র প্রকৃতির অংশ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। পাশপাশি গ্রিন ইকো রুফ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও রিচার্জ, গ্রিন স্ট্রিট, বাওরিটেনশন এ্যান্ড ইনফিলট্রেশন, ড্রেনেজ সিস্টেম ইত্যাদি প্রকৃতি নির্ভর সমাধান-এর ওপর গবেষণা এবং প্রচার হওয়া প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে ড.কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, পানির দূষণ সমস্যায় আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করে পানির ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব দিলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। স্বাগত বক্তব্যে আব্দুল করিম বলেন, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন করতে হলে তাদের কর্মদক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সব কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এনজিও ফোরাম-এর নির্বাহী পরিচালক এস.এম.এ. রশীদ বলেন, দেশের জিডিপির ক্রমবর্ধমান হার সমুন্নত রেখে ক্লাইমেট ফাইন্যান্সিং-এর মাধ্যমে গৃহীত প্রকল্পগুলো প্রকৃতি নির্ভর সমাধানের আলোকে পর্যালোচনা ও পুনর্মুল্যায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি পানি ও স্যানিটেশন সেক্টরের পক্ষ থেকে আগের মতো আগামী বছরগুলোতেও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ অর্জনের লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে তিনি আহ্বান জানান। এছাড়াও সেমিনারে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগী থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন (কৃষি, খাদ্য উৎপাদন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ) ও এলাকা ভিত্তিক সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, পানি ব্যবস্থাপনায়, ব্যক্তি সচেতনতা বৃদ্ধি ঘটানো এবং আইনের পর্যালোচনা ও সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ভৌগোলিক বাস্তবতা, বর্ষাকালীন অতিরিক্ত পানির ব্যবস্থাপনা, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি ক্ষতিকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল, পাহাড় ও বনভূমির সঙ্গে পানির গভীর সম্পর্ক, খাবার পানির ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ উৎসের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, ভূগর্ভস্থ পানির আর্সেনিক দূষণ মিটিগেশনে গুরুত্ব দেয়া ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর দেন।
×