ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত

রোহিঙ্গা সঙ্কটের পেছনে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক কারণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ মার্চ ২০১৮

রোহিঙ্গা সঙ্কটের পেছনে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক কারণ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চীন। আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্বিঘœ দেখতে চায় দেশটি। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের কোন নিজস্ব স্বার্থ নেই। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহযোগিতা করে চলেছে চীন। বুধবার ঢাকায় নবনিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুও এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। রাজধানীর বারিধারায় চীনা দূতাবাসে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে চীনের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে একটি নির্বিঘœ জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায় চীন। বাংলাদেশী জনগণের পছন্দের প্রতিফলনকেও স্বাগত জানাবে চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অবস্থান জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। চীন দুই দেশকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসনে চীন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে চায় বলেই বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমারকে এ নিয়ে সহায়তা দিতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে যে উদ্বেগ রয়েছে তা আমরা বুঝি। রাখাইন থেকে স্থানচ্যুত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসেছে। তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ চুক্তি করেছে। চীন এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ করছে। চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, আমরা প্রত্যাশা করছি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ইতিবাচক যোগাযোগ রক্ষা করছে, আর সেটা অব্যাহত থাকবে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে মিয়ানমার বাছাই শুরু করেছে। এতে চীনের কোন ব্যক্তিগত ইস্যু নেই। মানবিক সহায়তা দিতে চীন সবসময় প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েরই বন্ধু এবং এখানে আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করব। চীন প্রত্যাবসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে চায় বলেই মিয়ানমারে আশ্রয় কেন্দ্র তৈরিতে সহযোগিতা করছে জানিয়ে বলেন, চীন মিয়ানমারের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে এটির যথাযথ সমাধানের কথা বলেছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল বলে ব্যাখ্যা করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের পেছনে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। সে কারণে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তবে সমস্যা সমধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে যুক্ত সকল দেশই অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লাভবান হবে। এই উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে এ দেশের গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতি ও সোনার বাংলা গড়তে চীন পাশে থাকবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে যে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে, চীন এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে পাশে থাকবে বলেও জানান ঝাং জুও। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে। এই নতুন যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অগ্রগতি ঘটবে। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার সেই সফরে দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে চলেছি। চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী চলতি বছরে ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসি। এটা বাংলাদেশে আমার প্রথম আসা। আমি এখানে এসেই বুঝেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ছে এ দেশের মানুষ। দু’দেশের সম্পর্ক হাজার বছরের। এ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আমরা কাজ করে যাব। গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আবারও নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে (শি জিনপিংকে) অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, চলতি বছরে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক, দ্বিতীয় মেরিটাইম ডায়ালগ, মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ে দুদেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে।
×