ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য আয়োজন শিল্পকলায়

৬০ বছর বয়সী পুতুলের নাচ, ভানুমতির বিয়ে নৌকাবাইচ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ মার্চ ২০১৮

৬০ বছর বয়সী পুতুলের নাচ, ভানুমতির বিয়ে নৌকাবাইচ

মোরসালিন মিজান ॥ চর্চাটা একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। পূর্ব পুরুষের চর্চা এখনও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন। গ্রামের হাটবাজারে মেলায় দেখা যায় ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ। টিকে থাকার প্রয়োজনে কিছু সংযোজন বিয়োজনের ঘটনা ঘটছে বটে। হারিয়ে যায়নি। বরং শহরের শিক্ষিতজনেরা গবেষণার মন নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। মৌল উপাদানগুলো ঠিক রেখেই শিল্পটিকে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত করেছেন তারা। ট্যাডিশনাল পুতুল নাচ এবং পুতুল নাট্যের প্রদর্শনী দেখে তাই মুগ্ধ হতে হলো। ওয়ার্ল্ড পাপেট ডে উপলক্ষে বুধবার শিল্পকলা একাডেমিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তিনটি প্রদর্শনী। তিন রকমের। দারুণ উপভোগ্য। একাডেমির আয়োজনে আরও ছিল আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। বিকেলে স্টুডিও থিয়েটারে সূচনা করা হয় অনুষ্ঠানের। সেখানে প্রবেশ করতেই কানে আসে লোক সুর। জনপ্রিয় গানের সঙ্গে পুতুল নাচ পরিবেশন করছিল দি আজাদ পুতুল নাচ। বাগেরহাটের দলটি বিশাল কাঠের বাক্স ভর্তি করে পুতুল নিয়ে এসেছিল। হাটে মাঠে মেলায় যে বহুরূপী পুতুল নাচ এখন প্রদর্শন করা হয়, সেটিই তারা দেখান ঢাকার দর্শককে। বিশেষ কোন গল্প ছিল না। লোক কাহিনীর ছোট ছোট অংশ পরিবেশন করার প্রয়াস। নির্মল আনন্দ দেয়ার চেষ্টা। এখানে পাওয়া হয় আলোমতি-প্রেমকুমারকে। দেখা যায় ভানুমতির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ঘোড়দৌড়, নৌকা বাইচের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। মুক্তিযুদ্ধের মতো সিরিয়াস বিষয়ও ওঠে আসে পরিবেশনায়। পরিবেশনা শেষে কথা হয় দি আজাদ পুতুল নাচের মাস্টার মোশারেফ হোসেন দর্জির সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমার বাবা পুতুল নাচ দেখাতেন। তাঁর কাছ থেকে আমি শিখেছি। গত ২৭ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে পুতুল নাচ প্রদর্শন করছি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, আগে ছিল পালা। লম্বা সময় নিয়ে প্রদর্শন করতাম। এখন হয় বহুরূপী পুতুল নাচ। তিনি জানান, তার কাছে ১০০টির মতো পুতুল রয়েছে। এসব পুতুলের বয়স ৬০ বছরের কম নয়। শিল্পকলায় নিয়ে এসেছিলেন ৪০টি। সময় কম পেয়েছিলেন। সবগুলো তাই প্রদর্শন করতে পারেননি। একই মঞ্চে দ্বিতীয় পরিবেশনা নিয়ে আসে বাংলাদেশ পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। শিল্পীদের সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মঞ্চের সামনে লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসেছিল একটি দল। বাকিরা পুতুল পরিচালনায় ব্যস্ত ছিলেন। শিশুতোষ পরিবেশনা। ছোটদের উপযোগী করে গল্প বলার চেষ্টা হলেও, বড়রা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। পুতুল নাট্য বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে অনেকদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন ড. রশীদ হারুন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা পুতুল নাচের মূল ফর্ম ধরে রেখেই কাজ করছি। শুধু আনন্দ দেয়া নয়, পুতুল নাট্যের মধ্য দিয়ে একটি গল্প বলার চেষ্টা করছি আমরা। সমাপনী আয়োজনটি ছিল পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। ওখানে আলোচনা, সম্মাননা প্রদান ও মাল্টিমিডিয়া পাপেট থিয়েটার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে। গুণী পুতুলনাট্য শিল্পী সম্মাননা লাভ করেন মোঃ মোশারেফ হোসেন দর্জি। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঐতিহ্যবাহী ধারার পুতুলনাট্যকে টিকিয়ে রাখা এবং একে সমৃদ্ধ করে শিল্প আঙ্গিকের অমিত শক্তির সম্ভাবনার দিকসমূহকে নানাবিধ কাজে ব্যবহারে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সে লক্ষ্যে ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকটি পুতুলনাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। ছিল আবাসিক কর্মশালা। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ থেকে ২১ মার্চ বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। এবারও চমৎকার আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
×