ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কারলাইলকে বেগম জিয়ার আইনজীবী নিয়োগ বিএনপির দেউলিয়াত্বের বহির্প্রকাশ ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২২ মার্চ ২০১৮

কারলাইলকে বেগম জিয়ার আইনজীবী নিয়োগ বিএনপির দেউলিয়াত্বের বহির্প্রকাশ ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিজেদের আইনজীবীদের প্রতি আস্থা না থাকায় দুর্নীতির দায়ে দ-িত দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মামলায় বিএনপি বিদেশী আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের (ইউএমসিআরসি) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করে বলেন, নিজের আইনজীবীর প্রতি কোন আস্থা বা বিশ্বাস নেই বলে তিনি (খালেদা জিয়া) আজ বিদেশী আইনজীবীকে নিয়োগ করেছেন। সেই আইনজীবী কে? সেই আইনজীবী হলো, সেই একাত্তরের ঘাতক সাকা চৌধুরী, মীর কাসেম আলীর আইনজীবী হয়েছিল লন্ডনের ওই আইনজীবী। আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতা লর্ড কারলাইলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমাদের দেশে লর্ড ক্লাইভ চলে এসেছে। বিএনপির নেতারাও বলেছেন, খালেদা জিয়ার মামলায় কোন বিদেশী আইনজীবীর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনারা (খালেদা জিয়া) আনলেন লর্ড ক্লাইভকে (লর্ড কারলাইল)। তবে আপনারা বিদেশী আইনজীবী নেন, বড় আইনজীবী নেন, অবশ্যই আইনী লড়াই করবেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী, মীর কাসেমের মামলায় যে লড়েছে ও আইনী সহায়তা প্রদান করেছে তাকেই কেন আনতে হবে? আসলে কারলাইলকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে বিএনপির দেউলিয়াত্ব আবারও দেশবাসীর সামনে ফুটে উঠেছে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, আমরা (আওয়ামী লীগ) নাকি খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আমরা কেন তাঁকে আটকে রাখব? উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহের এ যুগে সবাই সবকিছু দেখছে। দ-, জামিন সব কিছুই আদালতের বিষয়, এখানে সরকারের কোন হাত নেই। আওয়ামী লীগ চায় না কেউ দ-িত হোক। খালেদা জিয়ার জামিন হবে কী হবে না- এটা আদালতের বিষয়। আইনের পথেই তাদের থাকতে হবে। সুতরাং আমরাও চাই খালেদা জিয়া আইনী প্রক্রিয়ায় জেল থেকে বের হয়ে সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করুক। কারণ আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় না। আমরা খেলেই গোল দিতে চাই। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে আমরা ছক্কা মারব। এই ছক্কা মিস হবে না-জয়লাভ করব ইনশাল্লাহ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে রোহিঙ্গাদের যেন মিয়ানমার তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়, সে বিষয়ে চাপ দিতে হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যা ও নিষ্ঠুরতায় সেখান থেকে ১০ লাখের বেশি নাগরিক প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মায়ের মমতা নিয়ে অর্থাৎ সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাদের প্রাথমিকভাবে আশ্রয়, খাবার ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছেন। সেখানে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা চালু রেখেছি। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিচ্ছে সরকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনেক বিদেশীকে আমরা দেখেছি মানবিক সাহায্য করতে। কিন্তু রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠাতে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই ভাল ভূমিকা রেখেছে। মিয়ানমারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদ নাসিম তাদের কর্মকা-ের সমালোচনা করেন। ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সনাল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দিলীপ রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএমসিআরসির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডাঃ রিদওয়ানুর রহমান। গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, গত ২৫ নবেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে ইউএমসিআরসি উখিয়া উপজেলার চারটি ক্যাম্পে ১ হাজার ৬৩৪ পরিবারের ৭ হাজার ৯০৩ জনের তথ্য সংগ্রহ করে। গবেষণার ফলে দেখা গেছে, তারা মিয়ানমার ছেড়ে আসার আগের ছয় মাসে ছোট পরিবারের ১৮ দশমিক ৩ ভাগ সদস্য আহত হয়েছেন। প্রায় ৬৩ ভাগ আহত উত্তর দাতারা এখনও ওই হামলার কারণে ভুগছে। এখানে আসার পর প্রায় ৬৭ শতাংশ গর্ভবতী মা টিকা গ্রহণ করেছে এবং ৩৪ শতাংশ মা কমপক্ষে একবার প্রসবোত্তর সেবা পেয়েছে বলে এতে জানান হয়েছে।
×