ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ মার্চ ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা আজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের অভিযাত্রায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের এই উত্তরণ সুপারিশপত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। গত ২০ মার্চ থেকে দেশব্যাপী পালন করা হচ্ছে সেবা সপ্তাহ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বিভাগগুলো দিনব্যাপী আজ উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিকেল ৪টায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়নের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন ও সাফল্য। বাংলাদেশ প্রথম, যে দেশ তিনটি নির্ণায়ক এক সঙ্গে অতিক্রম করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সকল শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ ও সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে ঢাকা শহরকে চারটি জোনে ভাগ করে নয়টি পয়েন্ট হতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা স্ব স্ব উদ্যোগে সুসজ্জিত বাদকদলসহ শোভাযাত্রা বের করবে। সবাই মিলিত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এছাড়া সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে এই স্টেডিয়ামে। এদিকে বুধবার সচিবালয়ে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সময় তিনি বলেন, ছয় বছর পর্যবেক্ষণের পর ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের এখন যে অগ্রযাত্রা এলডিসি উত্তরণের পর দেশের সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, ইআরডি সচিব শফিকুল আজম ও অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আমরা উপরে উঠছি- আগামীতে আরও উপরে যাব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমরা দেখিয়েছি আমরাও পারি। ওই সময় তিনি স্বল্পোন্নত বা এলডিসি উত্তরণে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি মেলার পর মানসিকতার পরিবর্তনকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনের সব সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, মানসিকতার পরিবর্তনে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কোন খাতে কত ঋণ নেব, সে বিষয়ে এখন সাবধান হতে হবে। প্রসঙ্গত, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ জানায় ১৭ মার্চ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশ মিশনকে সেদিন ওই স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করা হয়। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়ায় উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। এই স্বীকৃতি আসার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়ায় আমাদের বদনাম ছিল, আমরা গরিব। সে অবস্থা আর এখন আসমান আর পাতাল। আমরা সাহায্যের জন্য হাত পাতি- সে কথা আমাদের অনেক শুনতে হয়েছে। কারণ আমাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। আজ আমি খুব গৌরব বোধ করছি। সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুহিত আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি সবাইকে উদযাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের এই অগ্রযাত্রা আগামীতে অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক নিচে ছিলাম, আমরা উপরে উঠছি, আমরাও পারি। আমরা উৎসব প্রিয় জাতি। তাই সবাইকে নিয়ে এলডিসি উত্তরণ স্মরণীয় করে রাখতে এবার উৎসব উদযাপন করব। আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এলডিসি থাকব। ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশনে থাকব। এই সময়ে আমাদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, ওই স্বীকৃতিপত্র গত মঙ্গলবার দেশে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা হস্তান্তর করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্বীকৃতির উদযাপন হবে ৭ দিন ধরে। ২০ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ উৎসব নির্ধারণের দিন ঠিক করা হয়েছে। আগামীকাল ২২ মার্চ সকালে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হবে সংবর্ধনা, বিকেলে রাজধানীর নয়টি অঞ্চল থেকে শোভাযাত্রা যাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেখানে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই সপ্তাহে সরকারের সব দফতর বা বিভাগ একটি সেবা ফ্রি দেবে। এজন্য সেবা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এদিকে মাথাপিছু আয়, মানবোন্নয়ন সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পরপর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের আবেদন পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৬ বা তার বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ৩২ বা তার কম হলে সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির যোগ্য বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১২৭১ ডলার, মানবোন্নয়ন সূচকের স্কোর ৭২ দশমিক ৯ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ২৪ দশমিক ৮ হওয়ায় বাংলাদেশ এ স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশ এবারই প্রথম তিনটি সূচকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে। এদিকে, ২০২১ সালে সিডিপির ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ যদি আবারও এ মানদ-গুলোর কমপক্ষে দুটি পূরণ করতে পারে, সিডিপি তখন বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল তা অনুমোদন করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঠাবে। তিন বছর পর ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের জন্য দুই চারটি ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হলেও অনেক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, জিএসপিসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে দরজা খুলে যাবে। মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ঘটনা। এদিকে, একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনের প্রত্যয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে সরকার সফলভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। জাতির জনকের যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভের মধ্য দিয়ে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও রূপকল্প ২০২১ সালে সফল বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। উন্নয়নের প্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এখন বাংলাদেশ। এ ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উন্নত দেশের তালিকায়। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়ন ইতিহাসে এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাই উত্তরণ পর্যায়ের প্রথম পর্বটি স্মরণীয় করে রাখতে চায় সরকার। এ অর্জন উদযাপনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রা, সভা, সেমিনার, ব্যানার, ফেস্টুন, স্মরণিকা প্রকাশ, স্টিকারের মতো প্রচারপত্রের পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার চালানো হবে। এছাড়া বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
×