ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে নতুন যুগের সূচনা ॥ নাসিকের সঙ্গে পিডিবির এমওইউ সই

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ মার্চ ২০১৮

বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে নতুন যুগের সূচনা ॥ নাসিকের সঙ্গে পিডিবির এমওইউ সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্য দিয়ে দেশে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ একর জমি বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছেন। দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করলেও নারায়ণগঞ্জই প্রথম সবুজ পরিচ্ছন্ন এবং আধুনিক নগরীর তালিকায় নিজেদের নাম লেখাল। এতে শহুরে পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুত চাহিদা পূরণ হবে বলে জানান হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে এমওইউতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফম এহেতেশামুল হক এবং পিডিবির সচিব মীনা মাসুদউজ্জামান নিজ নিজ পক্ষে সই করেন। সমঝোতা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য দিয়ে পাঁচ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণ করবে পিডিবি। এ জন্য নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে ১০ থেকে ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেবে সিটি কর্পোরেশন। আর আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে পিডিবি। সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে সিটি কর্পোরেশন শহর থেকে সমস্ত বর্জ্য বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এরপর বিদ্যুত উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। যেহেতু এ ধরনের বিদ্যুত উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম তাই এখানে পিডিবি ভর্তুকি দেবে। তবে এখনও কেন্দ্রর ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে সিটি কর্পোরেশন। দীর্ঘ দিন ধরেই শহুরে বর্জ্যে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে সরকার। তবে এই উদ্যোগের বড় বাধা ছিল বর্জ্যরে সংস্থান। সিটি মেয়ররা বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে ছিলেন না। এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি কোম্পানির সঙ্গে ঢাকায় ৪৮ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছিল। তবে ইতালিয়ান কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স এসআরএলের সঙ্গে ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের করা চুক্তিটি ফলপ্রসূ হয়নি। ওই কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করায় প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। তখন জানান হয় ঢাকার বর্জ্য দিয়ে দৈনিক ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। পর্যায়ক্রমে যা ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। ঢাকায় দেড় কোটির বেশি মানুষ বসবাস করেন। নগরের বর্জ্য দিয়ে অন্তত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে এখনও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বিদ্যুত বিভাগের উদ্যোগে নিজেদের সম্পৃক্ত করেনি। এমওইউ সই অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, দুই বছর আগে সিটি মেয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুত বিভাগ। এর মধ্যে প্রথম মেয়র হিসেবে তিনি এগিয়ে এসেছেন। তিনি মনে করেন এর মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব নারায়ণগঞ্জ গড়ে উঠবে একই সঙ্গে বিদ্যুতও পাওয়া যাবে। বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, নগরের জন্য বর্জ্য হুমকি হয়ে উঠেছে। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও শহরের পরিবেশ এর মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন থাকবে। নারায়ণগঞ্জ প্রথম সিটি কর্পোরেশন হিসেবে এগিয়ে এসেছে। অন্য মেয়রদেরও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান বিদ্যুত সচিব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত, জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এ ধরনের কেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা আশা করি তারাও বিদ্যুত বিভাগের এই উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবেন। কেরানীগঞ্জে বর্জ্য বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শীঘ্রই কুষ্টিয়ায় ৪০০ কিলোওয়াট এর একটি বর্জ্য বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।
×