ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রীতি বনাম বিকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২২ মার্চ ২০১৮

প্রীতি বনাম বিকৃতি

ভাষা যেহেতু নদীর ঢেউয়ের মতো প্রবাহমান; যুগে যুগে, কালে কালে এর রূপ ও বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়; তাই সেই ধারাকে অক্ষুণœ রেখে বাংলা ভাষাকেও বহু পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। শুরুর দিকের বাংলা ভাষার রূপ আজ আর নেই। নব নব রূপে শুদ্ধ পথে বাংলা ভাষাকে তার আপন পথ খুঁজে নিতে হয়েছে। বাংলা ভাষা নিজেই আজ প্রাচুর্যে ভরা। ভাষার জন্য কোন জাতি রাজপথে রক্ত দিয়েছে বলে জানা যায় না। তবে বাংলা ভাষা রক্ষায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়াও ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় ও ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। বাংলা ভাষাকে রক্ষার দাবিতে এই যে আন্দোলনগুলো সংগঠিত হলো তা কি বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষাকে বিকৃতরূপে ব্যবহার ও উচ্চারণে বিলীন হয়ে যাবে? বাংলাদেশের সংবিধানে রয়েছে যে, এদেশের রাষ্ট্রভাষা হচ্ছে বাংলা; কিন্তু বর্তমানে বাংলা ভাষা এমন এক রূপ লাভ করছে যা থামানো না গেলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলা বলে অনুধাবন করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। অন্য একটি বিদেশী ভাষার ওপর দখল থাকা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য; তবে ইংরেজী ও বাংলার মিশেলে যখন বাংলিশ নামক নতুন একটি সংস্করণ চালু হয় তখনই ভাষা প্রীতির দিকে সন্দেহের তীর নিক্ষিপ্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। গণমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে ভাষা যাতে সঠিক ব্যবহৃত এবং শুদ্ধভাবে উচ্চারিত হয়। কিন্তু অধিকাংশ এফএম রেডিও ও টেলিভিশনে এই নৈতিক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে মেনে চলার অভাব সুস্পষ্ট। অনেক সময় উপস্থাপক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের ভাষা-শব্দ প্রয়োগ, অশুদ্ধ-বিকৃত উচ্চারণ ও ভঙ্গি আপত্তিজনক। মধুর এই বাংলা ভাষাকে তিক্ত ও বিষাক্ত করে তোলার ক্ষেত্রে অনেকের জুড়ি মেলা ভার। অনেকের কাছে ইংরেজী বাংলা মিশিয়ে কথা বলার মধ্যেই যেন মর্যাদাবোধ নিহিত। তাই বাংলা ভাষার প্রতি প্রেম, মমতা ও দায়িত্ববোধ বিসর্জন দেয়ার শৃঙ্খলহীন প্রতিযোগিতা শুরু হলেই কবি আবদুল হাকিমের কবিতা মনে হয়- ‘দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুরায়, নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।’ যেখানে বিদেশীরা বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে বাংলা ভাষাকে আয়ত্তে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান সেখানে বাংলা ভাষাকে অচিরেই ধ্বংসে আমাদের অবিরাম লম্পঝম্ফ বাঙালী হিসেবে বড়ই অসম্মানের ও লজ্জাজনক। রক্তের বিনিময়ে যে ভাষাকে তাঁর মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন করতে হয়েছে- সেখানে এফএম রেডিও ও টিভি চ্যানেলে বিকৃত রুচিসম্পন্ন বাংলিশের দৌরাত্ম্য মেনে নেয়া যায় না। বনানী, ঢাকা থেকে
×