ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার বিকৃতি নয়;###;মোঃ আরিফ হোসাইন হিয়া

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ রেডিও-টিভির বাংলা ভাষা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২২ মার্চ ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ রেডিও-টিভির বাংলা ভাষা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি তবে ইংরেজীর গোড়াপত্তন’ এই লাইনটির মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, বাংলা ভাষার গুরুত্ব কতটুকু। বাংলা ভাষার ইতিহাস বাঙালী জাতির গর্বের ইতিহাস, প্রতিবাদের ইতিহাস বাঙালী জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভঙ্গের ইতিহাস। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যারা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন সেই ভাষাকে আমরা কতটুকু লালন করতে পেরেছি তা আমার বোধগম্য নয়। ভাষার শুদ্ধতা আমাদের মানসকি শক্তিকে বিকশিত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যখন আমরা দেখি এই বাংলা ভাষাকে ব্যঙ্গ করা হয়, বিকৃত করে উচ্চারণ করা হয়। বিশেষ করে আমাদের টিভি চ্যানেল ও এফএম রেডিও-এর উপস্থাপকরা উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে উচ্চারণ করছে তখন বুঝতে খুব কষ্ট হয় যে উনারা বাংলায় উপস্থাপন করছে নাকি ইংরেজীতে উপস্থাপন করছে। অনেক সময় রাতে যখন ঘুম আসে না তখন আমি রেড়িও শুনি। সেখানে তারা এমনভাবে বাংলা ভাষাকে ব্যঙ্গ করে উচ্চারণ করে সেটা বলার মতো নয়। শুধু যে বিভিন্ন ধরনের উপস্থাপনায় বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে তা নয় বরং নাটক, সিনেমা, সাহিত্য রচনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষার বিকৃত করা হয়। আর এই বলার ধরনটা অনেকটা ইংরেজী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। যা সত্যিই জাতির জন্য লজ্জা ও অপমানের। এ রকম মন-মানসিকতা দিয়ে জাতি কখনও ভাল কিছু আশা করতে পারবে না। আমরা যদি আমাদের ভাষাকে যথাযথভাবে উচ্চারণ না করে বিদেশী ভাষার স্টাইলে উচ্চারণ করি তাহলে এই লজ্জা গোটা জাতির উপর বর্তায়। কেননা ভাষা বিকৃতি ও অপচর্চার মধ্য দিয়ে হীনম্মন্যতার পরিচয় বহন করে। একটা বিষয় আমাদের সবারই ভাল করে জানা দরকার যে, পৃথিবীতে এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা তাদের নিজ মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং শত শত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখন আমাদের কাছে সহজেই অনুমেয় যে, ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিলেই ভাষার প্রতি সম্মান দেখানো হয় না, সম্মান দেখাতে হবে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও। ভাষার লালন-পালন করতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তাহলেই বেঁচে থাকবে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ও প্রতিকার চাই। আমরা বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ চাই। যারা বাংলা ভাষাকে বিকৃত ও ব্যঙ্গ করে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারি। এছাড়াও এর শাস্তি হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। যখন এই আইনের বাস্তবায়ন হবে এবং শাস্তি ভোগ করবে তখন কিছুটা হলেও ভাষাকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করি। পরিশেষে বলতে চাই, বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগই হোক আমাদের যোগাযোগের গাঁথুনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×