ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্টিভিডিও টু মস্কো

বিশ্বকাপকথন-১০ ॥ অষ্টম বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড : ১৯৬৬

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২১ মার্চ ২০১৮

বিশ্বকাপকথন-১০ ॥ অষ্টম বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড : ১৯৬৬

বিশ্বকাপের আয়োজন সেই ল্যাটিন-ইউরোপের গণ্ডি ছেড়ে বিশ্বকাপ বেরিয়ে আসতেই পারলো না। ফলে আবার ইউরোপে। এবার অষ্টম বিশ্বকাপের আয়োজক ইংল্যান্ড। ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড অনেকটা প্রত্যাশিতভাবেই আয়োজক নির্বাচিত হলো ফিফার ১২৫ সদস্য দেশের ভোটে। এবারও সপ্তম বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলল আগের মতোই ১৬টি দেশ। এবারও কোন দল নাম প্রত্যাহার করেনি। ফলে এবারেও বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশ নেয় যথারীতি ১৬টি দেশ। এই ১৬টি দেশ নির্বাচন করা হয় বাছাইপর্বের ৭১টি দেশের মধ্যে থেকে। অঞ্চলভিত্তিক দলগুলো হলো : ইউরোপ : ইংল্যান্ড, প. জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন; কনমোবল : ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে; কনকাকাফ : মেক্সিকো; এশিয়া ; উ. কোরিয়া অষ্টম বিশ্বকাপে অংশ নেয়। খেলার সুযোগ পেল না আফ্রিকার কোন দল। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে এবারও কোন দেশ অভিষিক্ত হলো না। এশিয়া থেকে এবার খেলার সুযোগ পেল উ. কোরিয়া। এর আগে ১৯৫৪ সালে এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিল দ. কোরিয়া। যদিও দ. কোরিয়ার বিশ্বকাপ অভিষেকটা মোটেও সুখকর ছিল না। তবে ’৫৪’র দ. কোরিয়ার সে ব্যর্থতা এবারে পুষিয়ে দেয় উ. কোরিয়া। তারা এবার গ্রুপ পর্বের দেয়াল অতিক্রম করে কৃতিত্বের সাথে। বাছাই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ১২৭টি ম্যাচ। আর মূল পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ৩২টি ম্যাচ। ইংল্যান্ডের ৮টি স্টেডিয়ামে এই ৩২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তম বিশ্বকাপের মতো এবারও আবার গ্রুপিং করা হয়। গ্রুপ পর্বে ১৬টি দলকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি করে দল অংশ নেয়। এই ১৬টি দলকে ৪ গ্রুপে এভাবে ভাগ করা হয়: এ গ্রুপ : ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে, ফ্রান্স ও মেক্সিকো; বি গ্রুপ : প. জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও সুইজারল্যান্ড; সি গ্রুপ : ব্রাজিল, হাঙ্গেরি, পর্তুগাল ও বুলগেরিয়া; ডি গ্রুপ : ইতালি, সো. রাশিয়া, চিলি ও উ. কোরিয়া অংশ নেয়। এরপর চার গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী ৪ দল সেমি-ফাইনাল ও সেমি বিজয়ী দুই দল ফাইনাল খেলে। এ বিশ্বকাপের সবচে’ উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল আগের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বাছাই পর্বের দেয়াল ডিঙ্গাতে না পারা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের জয়রথ থেমে যায় প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে জয়ের পরই। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির কাছে হারার পর ১৯৬৬ বিশ্বকাপে আবার একই দলের বিপক্ষে পরাজিত হয় টানা ১৩ ম্যাচে না হারা ব্রাজিল। বিশ্বকাপের আগে যদিও ব্রাজিলকে এবারেও ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল তবে বাস্তবে তারা তা ছিল না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ব্রাজিলের ফুটবলাররা দর্শকদের হতাশ করে। তারা প্রথম রাউন্ডের দেয়ালই উৎরাতে পারেনি। যে কারণে তারা হাঙ্গেরি ও পর্তুগালকে টপকে কোয়ার্টারে পৌঁছতে পারেনি। দলে ছিলেন না গ্যারিঞ্চা। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ইচ্ছে করেই আহত করা হয় পেলেকে। যদিও এ ম্যাচে জয় পায় ব্রাজিল। জয় বলতেও ওই একটি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও পেলেকে আহত করা হয়। ইউরোপিয়ান রেফারি তা এড়িয়ে যান। মোট কথা, ইউরোপিয়ানদের এ বিশ্বকাপে মূল টার্গেট ছিল পেলে ঠেকাও। ফলে পেলের স্বাভাবিক নৈপুণ্য প্রদর্শন সম্ভব হয়নি। এটি ছিল ইউরোপের দলগুলোর একটা কৌশল। তারা বুঝে গিয়েছিল, পেলে ছাড়া ব্রাজিল কাগুজে বাঘ। এ বিশ্বকাপে ব্রাজিল হটাও আন্দোলন বেশ জোরদার ছিল। এর আগে ১৯৫৮ ও ’৬২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলকে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে দিতে রাজি ছিল না ইউরোপ। যে করেই হোক ব্রাজিলকে এবার ঠেকাতেই হবে এ ব্রত নিয়ে মাঠে নামে ইউরোপের দলগুলো। এবারে ফেবারিট ছিল জার্মানি ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেলেও বাকিদের আসতে হয় বাছাইপর্বের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে। আগের বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফেবারিট থাকলেও এবার টপ ফেবারিট ছিল জার্মানরা। কাপ শুরুর অনেক আগেই জার্মানি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়। এ কারণে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অনেকে জার্মানির পক্ষে বাজি ধরতে রাজি ছিল। এবার স্বাগতিক ইংল্যান্ড ততটা ফেবারিট ছিল না। প. জার্মানি, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল সো. রাশিয়া, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, হাঙ্গেরি, চিলি ও উ. কোরিয়া রানার্সআপ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। প. জার্মানি, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ও সো. রাশিয়া অর্থাৎ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ৪ দলই কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ী হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-০ গোলের কষ্টসাধ্য জয় পেলেও সেমি-ফাইনালে অপ্রতিরোধ্য পর্তুগালকে হারায় ২-১ গোলে। এ ম্যাচে ঘটে এক হাস্যকর ঘটনা। জার্মান রেফারি আর্জেন্টিনার রাতিনকে অযৌক্তিকভাবে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। রেফারির ভাষ্য ছিল, রাতিন এমনভাবে মুখভঙ্গি করেছে যা দেখে তাঁর মনে হয়েছে সে তাকে মুখ ভেংচিয়েছে। এ ম্যাচে রেফারির পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে আর্জেন্টিনা ০-১ গোলে হেরে যায়। আরেক কোয়ার্টারে শক্তিশালী প. জার্মানি নিরঙ্কুশ জয় পায়। তারা ৪-০ গোলে অপর ল্যাটিন দেশ উরুগুয়েকে হারিয়ে নিজেদেরকে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। অপর কোয়ার্টার-ফাইনালে পর্তুগাল ৫-৩ গোলে হারায় এশিয়ান লায়ন উ. কোরিয়াকে। উ. কোরিয়া গ্রুপপর্বে ১৯৩০ সালের চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখায়। চিলির সাথে ড্র করে অভিষেকে কোয়ার্টারে উঠে তারা চমকের ষোলকলা পূর্ণ করে। কোয়ার্টারে তারা শক্তিশালী পর্তুগালের বিপক্ষে খেলা শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। তবে অনভিজ্ঞতা ও রেফারির পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের কারণে তারা সে লিড ধরে রাখতে পারেনি। খেলাটি ছিল যেন রেফারি বনাম উ. কোরিয়ার। রেফারি উ. কোরিয়ার ন্যায্য গোল থেকে বঞ্চিতই করেন নি, উপরন্ত পর্তুগালকে ৩টি অযৌক্তিক পেনাল্টি দিয়ে জিতিয়ে দেন। পর্তুগাল শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতে ৫-৩ গোলে। উ. কোরিয়া বনাম পর্তুগালের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল যেন ইউরোপ-এশিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ইউরোপকে হারাতে রাজি ছিল না ইউরোপিয়ান রেফারি। তারা একে একে কৌশলে ইউরোপের বাইরের দেশগুলোকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয়। যাতে করে অল-ইউরোপ ফাইনালে আর কোন বিঘœ না থাকে। উ. কোরিয়া এ ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গেলেও দর্শকদের বিচারে তারাই জয়ী হয়। উ. কোরিয়ার এ সাফল্যে এশিয়াকে আর খাটো করে দেখার উপায় থাকে না। গ্রুপ পর্বের ফলাফল : গ্রুপ-এ : ইংল্যান্ড-০ উরুগুয়ে-০; ফ্রান্স-১ মেক্সিকো-১; উরুগুয়ে-২ ফ্রান্স-১; ইংল্যান্ড-২ মেক্সিকো-০; উরুগুয়ে-০ মেক্সিকো-০; ইংল্যান্ড-০ ফ্রান্স-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড গ্রুপ রানার্সআপ : উরুগুয়ে। গ্রুপ-বি : প. জার্মানি-২ সুইজারল্যান্ড-০; আর্জেন্টিনা-২ স্পেন-১; স্পেন-২ সুইজারল্যান্ড-১; প. জার্মানি-০ আর্জেন্টিনা-০; আর্জেন্টিনা-২ সুইজারল্যান্ড-০; প. জার্মানি-২ স্পেন-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : প. জার্মানি গ্রুপ রানার্সআপ : আর্জেন্টিনা। গ্রুপ-সি : ব্রাজিল-২ বুলগেরিয়া-০; পর্তুগাল-৩; হাঙ্গেরি-৩ ব্রাজিল-১; পর্তুগাল-৩ বুলগেরিয়া-০; পর্তুগাল-৩ ব্রাজিল-১; হাঙ্গেরি-৩ বুলগেরিয়া-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : পর্তুগাল গ্রুপ রানার্সআপ : হাঙ্গেরি। গ্রুপ-ডি : সো. ইউনিয়ন-৩ উ. কোরিয়া-০ ইতালি-২ চিলি-১; চিলি-১ উ. কোরিয়া-১; সো. ইউনিয়ন-১ ইতালি-০; উ. কোরিয়া-১ ইতালি-০; সো. ইউনিয়ন-২ চিলি-১; গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন : সো. ইউনিয়ন গ্রুপ রানার্সআপ : উ. কোরিয়া। কোয়ার্টার ফাইনাল : ইংল্যান্ড-১ আর্জেন্টিনা-০; প. জার্মানি-৪ উরুগুয়ে-০; পর্তুগাল-৫ উ. কোরিয়া-৩; সো. ইউনিয়ন-২ হাঙ্গেরি-১; সেমি-ফাইনাল : প. জার্মানি-২ সো. ইউনিয়ন-১; ইংল্যান্ড-২ পর্তুগাল-১; তৃতীয় স্থান : পর্তুগাল-১ সো. ইউনিয়ন-১; ফাইনাল ইংল্যান্ড-৪ প. জার্মানি-২ (হার্স্ট-৩, পিটার) (হলার, ওয়েব) চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড রানার্সআপ : প. জার্মানি তৃতীয় স্থান : পর্তুগাল । প. জার্মানি-উরুগুয়ে ম্যাচেও অবস্থা তথৈবচ। রেফারির পক্ষপাতদুষ্টতার এতটুকু হেরফের হলো না। এর আগে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিার ম্যাচে জার্মান রেফারি আর্জেন্টিনার রাতিনকে লাল কার্ড দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে দেন আর এ ম্যাচে ইংরেজ রেফারি জার্মানদের কৃতজ্ঞতার প্রতিদান দেন উরুগুয়ের ২ জন খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখিয়ে। ফলে জার্মানদের জয় পেতে এতটুকু অসুবিধে হলো না। তারা জিতলো ২-০ গোলে। একে একে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, উ. কোরিয়ার বিদায়ে অল-ইউরোপ সেমি-ফাইনালের পথে আর কোন বাধা থাকলো না। আর অল-ইউরোপ ফাইনাল! তো সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। এ বিশ্বকাপে ঘটল একটি অন্যরকম ঘটনা। বিশ্বকাপ চলাকালে হঠাৎ করেই বিশ্বকাপ ট্রফিটা চুরি হয়ে যায়। নিন্দুকেরা বলে, এ চুরির পেছনে ইংল্যান্ডের কারসাজি ছিল। তারা ভেবেছিল, ইংল্যান্ড কাপ জিততে পারবে না। আর তারা কাপ না পেলে অন্য কেউ কাপ পাবে না। আর তাই এ কারণে আগেভাগেই কাপটি হাওয়া করে ফেলে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কাপ মিলছিল না। তারপর ইংল্যান্ড যখন কাপ জয়ের অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে তখন পিকলস নামের একটি কুকুর নরউডের একটি বাগানবাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বকাপটিকে উদ্ধার করে। সাথে কাপ চোরকেও। প্রথম সেমি-ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ২-১ গোলে হারায় পর্তুগালকে। ইংল্যান্ডের ববি চার্লটন একাই ২ গোল করেন। অপর সেমি-ফাইনালে জার্মানরা ২-০ গোলে হারায় রাশিয়াকে। জার্মানির তরুণ ফুটবলার বেকেনাওয়ার ও হলার গোল করেন। ওয়েম্বলিতে আরও একবার অনুষ্ঠিত হয় ইউরোপিয়ানদের প্রত্যাশিত অল-ইউরোপ ফাইনাল। তবে ফাইনালটাও পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের অপবাদ থেকে রক্ষা পায়নি। যদিও ইংল্যান্ড জেতে ৪-২ গোলে। খেলার ১৩ মিনিটে হলার গোল করে জার্মানিকে এগিয়ে নেন। তবে বিরতির আগে ইংলিশ ক্যাপ্টেন ববি মুরের চমৎকার হেডের গোল খেলায় সমতা আনে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিটার্স গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও জার্মানির ওয়েবের ফ্রি-কিকে খেলায় আবার সমতা আসে। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ভাল খেলার থেকে ইংরেজদের রেফারির ওপর ভরসা ছিল বেশি। সে আস্থার প্রতিদান দিতে এতটুকু কার্পণ্য করেন নি রেফারি। মূলত: রেফারির কল্যাণে ইংল্যান্ড অতিরিক্ত সময়ে আরো ২টি গোল করে। ২টি গোলই করেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। হার্স্টের করা ইংল্যান্ডের তৃতীয় গোলটি গোল লাইন অতিক্রম না করলেও রেফারি সেটিও গোল দিয়ে দেন। জার্মানদের চাপের মুখেও মাথা নোয়ালেন না সুইস রেফারি দিয়েনস্ত। ফলে সমালোচনার ঝড় উঠলো। তাতে অপমান বোধ করলেন না তিনি। রেফারির আশীর্বাদে ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো জুলেরিমে ট্রফি জয়ের গৌরব অর্জন করলো। বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত অষ্টম জুলেরিমে ট্রফি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৩৪ সালের পর কোন স্বাগতিক দল কাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখায় এবার। ১৯৩৪ সালে শেষবার ইতালি স¦াগতিক হিসেবে কাপ জয় করেছিল। ফুটবলের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরুর ৩৬ বছর পর আয়োজনের দায়িত্ব পায়। অথচ ক্রিকেটের বিশ্বকাপের প্রথম ৩টি আসরই বসেছিল ইংল্যান্ডে। তারপরও নন্দিত হতে পারেনি জুলেরিমে ট্রফির এ আসর। বিতর্ক, বদনাম আর বিস্ময়ে ভরা ছিল এ বিশ্বকাপ। বিশেষ করে রেফারিদের পক্ষপাতদুষ্ট রেফারিংয়ের কারণে এ বিশ্বকাপ কলংকিত হয়। কেবল আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, উ. কোরিয়াই নয়, খোদ জার্মানরাও বিক্ষুব্ধ হয়। এ বিশ্বকাপে আরও একটি ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। বিশ্বকাপ চলাকালে আকস্মিকভাবে ‘জুলেরিমে ট্রফি’ উধাও হয়ে যায়। তারপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইংল্যান্ড জেতার পরে নরউডের একটি বাগানবাড়ি থেকে ‘পিকলস’ নামের একটি কুকুর ট্রফিটি উদ্ধার করে। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক বিশ্বকাপের পরে একটি জুয়েলার্স থেকে ব্রেসলেট চুরির অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। অষ্টম বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দেন ববি মুর আর প. জার্মানির মিলার। পর্তুগাল পায় তৃতীয় স্থান আর রাশিয়া চতুর্থ। অষ্টম বিশ্বকাপে মোট ৮৯টি গোল হয়। অষ্টম বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল করেন পর্তুগালের ইউসোবিও। তিনি এ বিশ্বকাপে ৯টি গোল করে ‘টপ স্কোরার’ হন। ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট এ বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেন। অষ্টম বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করেন সুইজারল্যান্ডের দিয়েনস্ত । (চলবে) লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ লেখক পরিষদ e-mail : [email protected]
×