ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বামী এই প্রথম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে গিয়েছিল...’

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ মার্চ ২০১৮

‘স্বামী এই প্রথম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে গিয়েছিল...’

রুমেল খান ॥ ক্রীড়াবিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি হচ্ছে ব্যাডমিন্টন। খেলাটি দারুণ আকর্ষণীয়, পরিশ্রমের এবং গতিশীলও বটে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী শাটলারদের মধ্যে সফল ও জনপ্রিয় হাতেগোনা আছেন অল্প ক’জন। তাদেরই একজন হচ্ছেন এলিনা সুলতানা। সেই জনপ্রিয় এবং সুদর্শনা নারী শাটলার এলিনার সোমবার ছিল শুভ জন্মদিন। ২৭ বছর পূর্ণ করে ২৮-এ পা রাখলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই তারকা খেলোয়াড়। মা কানিজ ফাতেমা (গৃহবধূ) এবং বাবা শেখ মোঃ সেলিমের (খুলনা ফুড কোর্টের সাবেক আনসার কমান্ডার) ঘর আলো করে এই ধরনীতে (খুলনায়) এলিনার আগমন (১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ)। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে তিনি নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে জানান, ‘জন্মদিনের তারিখটি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। জন্মদিনের প্রথম প্রহরেই রাত ১২টায় আমার মা সবার আগে ফোনে আমাকে উইশ করে সারপ্রাইজ দেন। সকালে ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিস করতে উডেন ফ্লোর জিমনেশিয়ামে গেলে সতীর্থরা ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে আমাকে শুভেচ্ছা জানায়। খুব ভাল লেগেছে তখন।’ স্বামী এনায়েত উল্লাহ সাবেক শাটলার এবং বর্তমানে কোচ। তিনি কি শুভেচ্ছা জানাননি? ‘আমরা বিয়ে করেছি ২০১১ সালে। বিয়ের পর এই প্রথম সে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে গিয়েছিল। এজন্য বেশ অভিমানও হয়েছিল। পরে অবশ্য সকালে মনে পড়ায় বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বার বার সরি বলে মাফও চেয়েছে। সেই সঙ্গে সাফাইও গেয়েছেÑ সে নাকি তিনদিন ধরেই আমার জন্মদিনের তারিখটা মনে রেখেছিল। কিন্তু আসল সময়েই নাকি ভুলে যায়! যাহোক, তার কথা শুনে সব রাগ-অভিমান ধুয়ে-মুছে গেছে! হি-হি-হি!’ জন্মদিনটা কিভাবে কাটালেন? ‘রাতের দিকে এনায়েত এবং মেয়ে আরশী (জন্ম ২০১৩) কে নিয়ে বাইরে ঘুরি এবং একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করি। ব্যস, এইতো।’ আগে কিভাবে পালন করতেন জন্মদিন, সেটাও জানান এলিনা, ‘আগে তো কেক কেটে, রীতিমতো পার্টি করে জন্মদিন পালন করতাম। তবে শৈশবের জন্মদিনগুলো ছিল সবচেয়ে আনন্দের। এখন তো একেবারেই সাদামাটাভাবে পালন করি।’ ২০০২ সালে ব্যাডমিন্টন ক্যারিয়ার শুরু করা এলিনা এ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এককে ২ বার, দ্বৈতে ৪ বার। সামার ওপেনে এককে ও দ্বৈতে চারবার করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও সাফল্য আছে তার। নেপালে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে নেপাল ওপেন ইন্টারন্যাশনালে দ্বৈতে তা¤্রপদক এবং মিশ্র দ্বৈতে তা¤্রপদক (২০১৬) জিতেছেন। কদিন আগেই স্বামী এনায়েত ব্যাডমিন্টন খেলা থেকে অবসর নিয়েছিল। নিজের অবসর ভাবনা নিয়ে ঢাকার বনশ্রী নিবাসী এলিনা জানান, ‘যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে, ততদিনই খেলা চালিয়ে যাব।’ ইন্দোনেশিয়ার তৌফিক হেদায়েত এবং স্পেনের ক্যারোলিনা ম্যারিনকে আদর্শ শাটলার মানা এলিনা পুরো ক্যারিয়ারে তিনটি দলের হয়ে খেলেছেন (বাংলাদেশ বিমান, নিট কনসার্ন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী)। স্বামী এনায়েতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যাডমিন্টন একাডেমিও চালান, নাম এনালিনা ব্যাডমিন্টন একাডেমি (স্বামী এবং তার নামের আদ্যোক্ষর মিলিয়ে নামকরণ)। ২০১৩ সালে নড়াইল ও পরে খুলনা এবং ঢাকার দুট স্থানে একাডেমির কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। এনায়েত হচ্ছেন একাডেমির চেয়ারম্যান ও কোচ, আর এলিনা চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও কোচ। এই একাডেমিতে তারা দুজন বাদেও আরও চার কোচ (লিমন, সানি, শিপন ও ফাহাদ) ৪০ শাটলারকে ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এই একাডেমির শাটলাররা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, স্বামী-সন্তান এবং সংসার সামলে আর কতদিন শাটলার হিসেবে সাফল্য কুড়াতে সক্ষম হন এলিনা।
×