ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে কারা সপ্তাহ-২০১৮ উদ্বোধনীতে রাষ্ট্রপতি

পৃথিবীর কোন মানুষই অপরাধী হয়ে জন্ম গ্রহণ করে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২১ মার্চ ২০১৮

পৃথিবীর কোন মানুষই অপরাধী হয়ে জন্ম গ্রহণ করে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। একইসঙ্গে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী মানুষগুলো নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া কারাগারগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের উদ্দেশে প্রিজন্স এ্যাক্ট পরিবর্তন করে নতুনভাবে ‘‘প্রিজন্স এ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস এ্যাক্ট” প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান। মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে কারাসপ্তাহ-২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি বেলুন উড়িয়ে কারাসপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং খোলাজিপে চড়ে কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, পৃথিবীর কোন মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশই তাদের অপরাধী করে তোলে। বর্তমান বিশে^ কারাগারকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। কারাগারে আটক বন্দীদের অগ্রহণযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সংশোধন করে সমাজে স্বাভাবিক বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বন্দীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, কারা বিভাগে জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারাগারের উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে পেশাগত দক্ষতা অর্জন। আর তা অর্জনে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন এবং কেরানীগঞ্জে আন্তর্জাতিক মানের “বঙ্গবন্ধু কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি” স্থাপন। এ লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৩টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারাগারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টরসহ আধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। আমি আশাকরি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের মুক্তির পূর্বে পুনঃসামাজিকীকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুসরণে ‘‘উন্মুক্ত কারাগার” নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দীদের প্রাকমুক্তি পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যা পুনঃঅপরাধ রোধে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। কারা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, কারাগারে বন্দী মাদকসেবীদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত করে তোলার মতো মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবেন। দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী যেন কারাগারের ভেতরে অভিনব কায়দায় জঙ্গী পরিকল্পনা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে আপনাদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, কারাগারে আগত বন্দীদের একটি বড় অংশ মাদক মামলায় আটক। এ সকল মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে কারাগারে থেকে মাদক সেবন বা মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে তার জন্য আপনাদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারা প্রশাসনের কেউ যাতে এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন বন্দী যখন কারাগারে প্রবেশ করে তখন তার সব দায়দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। কারাগারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, কারাগারে কেবল অপরাধী নয় রাজবন্দী হিসেবে অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে কাটাতে হয়। আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের অধিক সময় কারাগারে কাটাতে হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা তার জীবনের ২৯ বছর নির্জন কারাগারে কাটান। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময় আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলাম। তাই কারাগারের জীবন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতাও কম নয়। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জেলের বিভিন্ন কর্মকা- ও বন্দীদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ সকলের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে বন্দীর হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্য কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ অন্যতম। কারা শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দীদের প্রদান করার সিদ্ধান্ত একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। সাজা শেষে কারা শিল্পে নিয়োগের ফলে লব্ধজ্ঞান এবং প্রাপ্ত লভ্যাংশের অর্থ কাজে লাগিয়ে তারা সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে সমাজে পুনঃ পুনঃ অপরাধ করার প্রবণতাও হ্রাস পাবে। এছাড়া কারাবন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য ‘মোবাইল ফোন বুথ’ চালু একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ সকল পদক্ষেপের ফলে কারাবন্দীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবে বলে আমি আশাকরি। অনুষ্ঠানে বেস্ট প্রডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারকে এ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেয়া হয়েছে। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ওই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নারায়ণগঞ্জ জেলের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে এ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার দেয়া হয়। রূপকল্প বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ডুয়েট সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ॥ গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার, জানান ॥ গাজীপুরস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানে তিনি ৩২৮৪ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রী প্রদান ও তাদের মাঝে সনদ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন বিভাগের ৩৫জন কৃতি গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন এবং অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এবারের সমাবর্তনে পুরঃকৌশল বিভাগ থেকে একমাত্র প্রকৌশলী মোঃ লুৎফর রহমানকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডিগ্রী প্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিআর্ক প্রোগামে ৩১৭৩ জন এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ১১১ জন ডিগ্রী লাভ করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (এমপি), গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল (এমপি), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সচিব, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রমুখ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রম করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির যে লক্ষ্য ছিল তা আজও আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। এর বহুবিধ কারণও রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করা হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। নানা চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গ্রাম ভিত্তিক সুখী সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন। এসব রূপকল্প বাস্তবায়নে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা চলিয়ে যেতে হবে। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর আগে রাষ্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয় সমূহের ভাইস চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক সদস্য এবং অনুষদের ডিনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়।
×