ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উপসর্গহীন গ্লুকোমা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২০ মার্চ ২০১৮

উপসর্গহীন গ্লুকোমা

নীরব অন্ধত্বের প্রধান কারণ গ্লুকোমা। সাধারণ চোখের প্রেসার বেড়ে গিয়ে অফটিক নার্ভেও ক্ষতি হয় এবং দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। এই রোগটির নাম হলো গ্লুকোমা। বাংলাদেশে ৩৫ উর্ধো ব্যক্তিদের প্রায় শতকরা ৩ জনের গুøকোমা রয়েছে। বাংলাদেশ আইকেয়ার সোসাইটির একটি সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ গ্লুকোমা রোগে ভুগছেন। এই গ্লুকোমা রোগটির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ থাকে না, যে কারণে গ্লুকোমা রোগীরা রোগের শেষ মুহূর্তে না আসা পর্যন্ত তারা বুঝতে পারেন না তাদের এই রকম ভয়ঙ্কর একটি রোগ রয়েছে। গ্লুকোমা রোগ কেন হয়? এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অদ্যবদি চোখের উচ্চ চাপই এই রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এই রোগ হতে পারে। সাধারণত চোখের উচ্চ চাপই ধীরে ধীরে চোখের ¯œায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দৃষ্টিকে ব্যাহত করে। তবে কিছু কিছু রোগের সঙ্গে এই রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এই রোগ হতে পারে। যেমন- * পরিবারের অন্য কোন নিকট আত্মীয়ের (মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা, নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এই রোগ থাকা। * উর্ধ বয়স (চল্লিশ বা তদোর্ধ) * ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপ। * মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা * রাত্রিকালীন উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ সেবন করা। * স্টেরোইড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা। * চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে। সময় মতো চোখের ছানি অপারেশন না করা। * চোখের অন্যান্য রোগের কারণে। * জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র চোখের উচ্চ চাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব,যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ। গুøকোমা রোগের লক্ষণ কি? অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এই রোগের কোন লক্ষণ অনুধাবন করতে পারে না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নি¤েœর লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন- ১. ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরির্বতন হওয়া। ২. চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা। ৩. ঘন ঘন মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া। ৪. দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোন পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা। ৫. মৃদু আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া। ৬. ছোট ছোট বাচ্চাদের অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। গুøকোমা সম্পর্কে জানা জরুরী কেন? * আমাদের দেশে এবং পৃথিবীব্যাপী অন্ধত্বের দ্বিতীয় কারণ হলো চোখের গুøকোমা। * অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ রোগী বুঝতে পারার আগেই চোখের ¯œায়ু অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। * এই রোগে দৃষ্টির পরিসীমা বা ব্যপ্তি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে এবং কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি অনেক দিন ঠিক থাকে বিধায়, রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে অনেক দেরি করে ফেলেন। * গ্লুকোমা চোখের অনিরাময় যোগ্য অন্ধত্ব তৈরি করে। তাই একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। * চোখে গ্লুকোমা রোগ হলে রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকেন না বা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন না। ফলে এই রোগ নীরবে ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। গুøকোমা রোগের চিকিৎসা কি? গ্লুকোমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্ত চাপের মতো এই রোগের চিকিৎসা সারাজীবন করে যেতে হবে। এই রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায় তার জন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ রোগের প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে- ক) ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা খ) লেজার চিকিৎসা গ) শৈল চিকিৎসা বা সার্জারি যেহেতু চোখের উচ্চ চাপ এই রোগের প্রধান কারণ তাই ওষুধের দ্বারা চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তদুপরি তিন মাস অন্তর-অন্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এ রোগের নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। যেমন- * দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা * চোখের চাপ পরীক্ষা * দৃষ্টির ব্যাপ্তি বা ভিজ্যুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা * চোখের নার্ভ পরীক্ষা। গ্লুকোমা রোগে রোগীর করণীয় কি? * চিকিৎসক রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে তার চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন তা নিয়মিত ব্যবহার করা। * দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। * সময়মতো চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে করিয়ে দেখা যে তার গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। * পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে গ্লুকোমা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। ডাঃ জাকিয়া সুলতানা শহীদ সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
×