ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উজাড় হচ্ছে গাছ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২০ মার্চ ২০১৮

উজাড় হচ্ছে গাছ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ডুলাহাজারা বনবিটে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রায় অর্র্ধকোটি টাকা মূল্যের শতবর্ষী মাদার ট্রি, (গর্জন গাছ) সেগুন ও জাম গাছ কেটে নিয়েছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বর্তমানেও সমানে মূল্যবান গাছ কেটে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হলেও খবর নেই এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ বনকর্মীদের। আতিকুল হক নামে একজন বন প্রহরী বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় এমনটি ঘটছে বলে অভিমত স্থানীয়দের। ওই বন প্রহরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক ও কক্সবাজার উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। জানা যায়, ডুলাহাজার বনবিটের ডুমখালী ব্লক, রিংভং, হারগেজা ব্লক ও আখেরী রোড এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বহু গর্জন, গামার ও সেগুন গাছ রয়েছে। এসব মূল্যবান বনজ সম্পদ ও সংরক্ষিত বনভূমির পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বন কর্মকর্তার স্থলে বন প্রহরী আতিকুল হককে। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন, ওই বন প্রহরী আতিকুল হকের সঙ্গে সখ্য রয়েছে প্রভাবশালী কাঠ চোর সিন্ডিকেটের। এ সুযোগে গত তিন মাসে এ বিটের সংরক্ষিত বনের বহু মাদার ট্রি সেগুন, গর্জন ও গামার কাঠ কাঠ চোরের দল কেটে নিয়ে গেছে। ওই বিট কর্মকর্তা (বন প্রহরী) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটর সাইকেলে চড়ে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক থেকে প্রতিদিন অবৈধ টাকা আয় করে যাচ্ছেন। এ বিটের বনাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা রাজিব উদ্দিন ইব্রাহিম নামক এক ফরেস্টারকে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে অন্যত্র বদলি করে একজন বন প্রহরীকে বিটের দায়িত্ব দেয়ায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বনজ সম্পদ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডুলাহাজারা শাহ সোজা সড়ক দিয়ে লামা বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা জ্বালানি কাঠ, গোল কাঠ, বাশ, লক ভর্তি ট্রাক, রদ্দা ও পাথর বোঝাই ট্রাক থেকে উর্ধতন কর্তপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এভাবে দিনরাত চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকার কারণে প্রতিরাতেই ডুলাহাজারা বিটের ডুমখালী ব্লক থেকে শতবর্ষী মাদার ট্রি (গর্জন গাছ) ও রিংভং ব্লক থেকে মূল্যবান সেগুন কাঠগুলো বনপ্রহরী আতিকূল হকের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরের দল নিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। কর্তনকৃত শতবর্ষীয় গর্জন গাছগুলো ফিশিং বোট তৈরির জন্যে উলুবনিয়া সড়ক দিয়ে মাবিয়া বাপেরঘাট ও খ্রীস্টান হাসপাতাল সংলগ্ন উত্তর পাশের ফিশারিঘাট দিয়ে ট্রলারযোগে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বদরখালী, মগনামা, পেকুয়া ও আরবশাহ বাজার এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এসব চোরাই কাঠ দিয়ে চকরিয়া ডুলাহাজারা ডুমখালী এলাকার গর্জন বশিরের বাড়িতে বিশালাকারের ৩টি ফিশিং বোট তৈরি হচ্ছে। একই এলাকার বাইট্টা আমিন সওদাগরের মালিকানায় হাসপতালের পেছনে ছিরাপাহাড়ে ১টি বোট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া ডুলাহাজারার উলুবনিয়া, ডুমখালীঘোনা, কাটাখালী, চুনতিরটেক, চরণদ্বীপ, সাহারবিল মাদ্রাসার সামনে, কৈয়ারবিল দ্বীপকুলপাড়া ও পেকুয়ার রাজাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদারটি (গর্জন কাঠ) দিয়ে প্রায় অর্ধশত ফিশিং বোট তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বর্তমানে বিট কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় একজন বন প্রহরীকে বিট রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন সংরক্ষক।
×