ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ডরহীন টাইগারদের প্রশংসায় রোহিত

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২০ মার্চ ২০১৮

ভয়ডরহীন টাইগারদের প্রশংসায় রোহিত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে টান টান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ বলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের। অন্যদিকে প্রায় হারা ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে জয় উপহার দেন দীনেশ কার্তিক। টুর্নামেন্টজুড়ে টাইগারদের ভয়ডরহীন ক্রিকেটের প্রশংসা করেছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই খুব ভাল দল। এই টুর্নামেন্ট তো খুবই বিপজ্জনক ছিল। দুই শ’ রানের বেশি তাড়া করেও ম্যাচ জিতেছে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছে। তারা মাঠে নেমে নিজেদের মেলে ধরে মুক্তভাবে এবং খেলাটা উপভোগ করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘গত তিন বছরে আমরা দেখেছি, ওরা কিভাবে নিজেদের ধরন বদলে ফেলেছে। সিনিয়রদের পাশাপাশি কিছু নতুন মুখও এসেছে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয় থাকা সবসময়ই দারুণ। এ কারণেই প্রত্যাশিত ফলটা পাওয়া যায়। দলের অভিজ্ঞরা তরুণদের পরিচর্যা করছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ এখন খুবই ভয়ঙ্কর এবং যে কোন জায়গায় গিয়ে ভাল করতে সক্ষম।’ জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩৪ রান। ১৯তম ওভারে রুবেল হোসেন দিয়ে বসেন ২২ রান। শেষ ওভারে ১২ রান হাতে নিয়ে সৌম্য সরকার খুব একটা খারাপ করেননি। তার শেষ বলে ভারতের চাই ৫ রান। দীনেশ কার্তিক সজোরে এক ছক্কা হাঁকিয়ে টাইগারদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছেন, ‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট সবসময়ই রোমাঞ্চকর। মাঝেমধ্যে হয়ত আপনি ব্যর্থ হবেন, যখন আপনার মতো করে কিছু হবে না। তবে সাকিবরা এভাবেই খেলতে পছন্দ করে। এটা ক্রিকেটের জন্যই আনন্দদায়ক। উপমহাদেশের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন সত্যি চমৎকার দল।’ সৌম্যর করা শেষ ওভার নিয়ে ভারপ্রাপ্ত ভারত অধিনায়কের মন্তব্য, ‘আমরা জানতাম, সৌম্য সরকার মূলত বোলার নয়। বেশিরভাগ সময় সে পার্ট টাইম বোলার হিসেবে বল করে। বড় ওভারে এটা যে কারও সঙ্গেই হতে পারে। ডেথ ওভারে বল করা সহজ কাজ নয়। এমন মুহূর্তে সব সময় বোলারদের চাপ থাকে, ব্যাটসম্যানদের উপর নয়। এটাও জানতাম পরিস্থিতি যাই হোক কার্তিকের পক্ষে সেটি জয় করা সম্ভব। সেই আইপিএলে অনেকবার এটা করে দেখিয়েছে।’ আর মাত্র ৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ২৯ রান করে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় থাকা ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে ফাইনালের নায়ক বনে যাওয়া কার্তিক বলেন, ‘আমার লক্ষ্যটা ছিল খুবই সোজা। ক্রিজে নেমে প্রত্যেকটা বলই মারতে হতো। সেটাই করেছি। নেটেও আমি এ ধরনের অনুশীলন করে আসছি। এই সুযোগ তো বারবার আসবে না। সেটা কাজে লাগাতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’ তিনি আরও যোগ করেন,‘জয়ের পর সতীর্থদের উল্লাসে আমি আপ্লুত। গোটা সিরিজে ভাল করেছি তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনাল না জিততে পারলে খুবই খারাপ লাগত। এই পিচে ব্যাট করা অতটা সহজ নয়। মুস্তাফিজুরের বোলিংকেও কৃতিত্ব দিতে হবে।’ ৮ উইকেট শিকারে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার তুলে নেয়া ১৮ বছর বয়সী তরুণ স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের অনুভূতি, ‘এই বয়সে এ রকম একটা পুরস্কার পাওয়া বিশাল ব্যাপার। আমার পরিবারকে এ জন্য ধন্যবাদ দেব।’ প্রথমসারির পাঁচ-ছয়জনকে বিশ্রামে রেখে নিদাহাস ট্রফিতে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে ভারত। বলতে গেলে সবাই নতুন। এই দল নিয়েই এই সিরিজে সবকটি ম্যাচ জিতেছে রোহিত-বাহিনী। কিন্তু টাইগারদের প্রশংসা না করে উপায় ছিল না। কী দুর্দান্ত এক ম্যাচ জিতল ভারত! ম্যাচের শেষ বলটি পর্যন্ত ছিল টান টান উত্তেজনা। আর এই উত্তেজনার পেছনে টাইগারদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স। মাঠের বাইরে থেকেও মাঠের মাঝে উত্তাপ ছড়িয়েছে লঙ্কান দর্শকরা। ফাইনালে ভারতকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়েছিল স্বাগতিকরা। এই সমর্থন পেয়ে ম্যাচ শেষে তাদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এই শ্রীলঙ্কাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এখনও তা-ই আছে। কিন্তু দুই দেশের দর্শকদের মাঝে শত্রুতা শুরু হয়ে গেছে। স্বাগতিকদের দুই ম্যাচ হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এতেও সমস্যা ছিল না। সমস্যা হয় মূলত নাগিন নাচ নিয়ে। বাংলাদেশের এই সাড়া জাগানো উদ্যাপন হজম করতে পারেনি লঙ্কানরা। তাছাড়া শুক্রবারের সেই ম্যাচে শেষ ওভারে লঙ্কান ক্রিকেটারদের সঙ্গে সাকিবদের বিবাদও এতে বড় ভূমিকা রাখে। এসব কারণেই ফাইনালে লঙ্কানরা সবাই ছিল ভারতের সমর্থক। ‘এত মানুষ মাঠে এসেছে, বিষয়টা দারুণ। আরও চমৎকার বিষয়, এই সমর্থকেরা সবাই আমাদের সমর্থন দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা হলে চিত্রটা পাল্টে যেত! কিন্তু এভাবে সমর্থন দেয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ।’ বলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
×