স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার আটপাড়ার দুই রাজাকার হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি ও সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী অজিতা বিশ্বাস, ১২তম সাক্ষী জীবন চন্দ্র সরকার ও ১৩ তম সাক্ষী মোঃ বাদশা মিয়া জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে ১১ তম সাক্ষী অজিতা বিশ্বাস বলেন, রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ আঞ্জু ও এনায়েত উল্লাহ মঞ্জু (বর্তমানে মৃত) ও সোরহাব ফকির পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আমার স্বামী মনোরঞ্জন বিশ্বাসসহ সাত জনকে ধরে মগরা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এর আগে গ্রামের ঘরবাড়িতে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিন সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদেরকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর খান।
১১ তম সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম অজিতা বিশ্বাস। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০/৭১ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-সুখারী, থানা-আটপাড়া, জেলা নেত্রকোনা। আমার বর্তমান ঠিকানা ১৫২/৪ জোয়ার সাহারা, থানা ভাটারা, ডিএমপি, ঢাকা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২২ বছর। তখন আমার দুই সন্তান ছিল। একজনের বয়স ছিল ৩ বছর ও আরেকজনের বয়স ছিল ৭ দিনের। আমি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের ১৭ তারিখ বেলা আনুমানিক ১টার সময় আমি আমার স্বামী সন্তানসহ বাড়িতে ছিলাম। তখন গুলির শব্দ শুনে যে যার মতো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার ৭ দিনের সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে ১০০ গজ দূরে জঙ্গলে লুকাই। তখন আমার সঙ্গে আমার এক প্রতিবেশী হিন্দু ব্রাহ্মণ লুকিয়ে ছিল। আমাদের গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। তখন আসামি রাজাকার হেদায়েত উল্লাহ আঞ্জু, এনায়েত উল্লাহ মঞ্জু (বর্তমানে মৃত) ও সোরহাব ফকির জঙ্গলে আমাদের সামনে গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমাদের কাছে থাকা স্বর্নালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। রাজাকারা আমাদের কাছ থেকে চলে গেলে আমরা আরেকটু ভিতরে গিয়ে জঙ্গলে লুকাই। সন্ধ্যার একটু আগে গোলাগুলির শব্দ থামার পর আমরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি আমাদের বাড়িসহ আশপাশের হিন্দু বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বলছে। এর পর আমি আমার ৭ দিনের সন্তান নিয়ে নবী হোসেনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই এবং আমার অপর সন্তানটি আমার শাশুড়ি ও কাকি শাশুড়ি পালানোর সময় তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যায়।
যুদ্ধাপরাধী বিচার
রাজাকার আঞ্জু ও ছোরাপের বিরুদ্ধে তিন সাক্ষীর জবানবন্দী
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: