ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেড়ামারার কম্বাইন্ড পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ মার্চ ২০১৮

ভেড়ামারার কম্বাইন্ড পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধনের অপেক্ষায়

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে ॥ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য দু’টি টারবাইন এখন প্রণ্ডুত। এর মধ্যে একটি গ্যাস টারবাইন, অপরটি স্টিম টারবাইন। গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে ৩শ’ মেগাওয়াট আর গ্যাসের স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এর মধ্যে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র ভেড়ামারার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলার বিদ্যুত চাহিদা পূরণ হবে। অব্যাহত বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দেশের বৃহত্তম তাপবিদ্যুত কেন্দ্র এবং ভেড়ামারা লালনশাহ সংযোগ সড়ক সেতুর পাশেই এই প্ল্যান্ট নির্মাণের স্থান নির্ধরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পান জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশন নামের একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। কাজটি তদারকি এবং বুঝে নেয় নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৭শ’ ৮৬ টি শক্তিশালী পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ প্লান্টে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ১টা গ্যাস ইউনিট এবং ১টা স্টিম টারবাইন ও ১টা এইচআরসিজি স্থাপন করা হয়েছে; যা দিয়ে উৎপাদন করা হবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। সাধারণ গ্যাস টারবাইন দিয়ে ৩০০ এবং গ্যাস টারবাইনের ফ্লু গ্যাস দিয়ে স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদন হবে আরও ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। শক্তিশালী এ বিদ্যুত কেন্দ্রটির ৪৭২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে আসে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ। এ সময় শুধু গ্যাস টারবাইনে ২৮৭.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। পরে তা উন্নীত হয় ৩০০ মেগাওয়াটে। এরপর ১৫ ডিসেম্বর গ্যাস টারবাইনের ফ্লু গ্যাস দিয়ে স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে আরও ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে সফলতা লাভ করেন বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা। এরপর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে প্লান্টটি চালানো হবে বলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যয় হবে মাত্র ১টাকা ৮৯ পয়সা। ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদ হালিম জানান, বিদ্যুত কেন্দ্রটি গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে যাচ্ছে। বর্তমানে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশলীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নিরবচ্ছিনভাবে বিদ্যুত উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে। প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা সর্বনি¤œ মূূল্যে উৎপাদিত বিদ্যুত এ অঞ্চলের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের সব কিছুই প্রস্তুত। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্লান্ট ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন জানান, চাহিদা অনুযায়ী আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। প্লান্টে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে প্রতিদিন গ্যাস প্রয়োজন ৬৫ এমএমসিএফটি। কিন্তু সেখানে পাচ্ছি মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ এমএমসিএফটি। যে কারণে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারছি না। এ প্লান্টটি সর্বোচ্চ ৪৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষম।
×