ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা বন্ধে কঠোর আইন করছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ মার্চ ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা বন্ধে কঠোর আইন করছে মিয়ানমার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে সৃষ্ট সংকট আরও ঘনীভূত হতে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান। একদিকে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বলে স্বীকার করেছে। তার আগে পালিয়ে আসাদের প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দফা ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা কেটে ছেঁটে মিয়ানমার সরকার সেখান থেকে ৩৭৪ জনকে রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী বলে জানান দিয়েছে। এ ঘটনার পর প্রত্যাবাসন প্রশ্নে দুই দেশের পক্ষে আর কোন বৈঠক এখনও হয়নি। এ অবস্থায় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতা বন্ধের কঠোর আইন পাস করতে যাচ্ছে বলে সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে প্রণীত এই সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। সূত্র নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষে তাদের যে কোন ধরনের কার্যক্রমের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থা তৎপরতায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপে আইনটি ব্যবহার করতে পারে। এদিকে, তুমব্রু সীমান্তের ওপারে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোন অগ্রগতি হয়নি। তিন সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিজ দেশে অভ্যন্তরে ফিরিয়ে নেয়ার কথা দিয়ে তা রক্ষা করছে না। আর আশ্রিত রোহিঙ্গারাও সেদেশের কোন ট্রানজিট ক্যাম্পেও নয় নিজ ভিটে-মাটি বা জমিতে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন এনজিও আরাকান বিদ্রোহী সংগঠনগুলো নানামুখী উস্কানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। অপরদিকে, গত শনিবার রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে মংডুর প্রশাসনিক কর্মকা- ইয়ে হুথু গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের চিরদিনের জন্য ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখার কথা আমরা বলতে পারি না। তাদেরকে ক্যাম্পে দীর্ঘদিন রাখার কোন ইচ্ছে বা পরিকল্পনাও প্রশাসনের নেই। সরকার তাদের নিজ গ্রাম কিংবা নিকটবর্তী কোন স্থানে পুনর্বাসন করবে। অথচ রোহিঙ্গাদের যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় তাহলে তাদেরকে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা যে হবে তা নিশ্চিত। কেননা, অতীতে যে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে তাদের কোন সুরাহা এখনও হয়নি। অপরদিকে, সদ্য সমাপ্ত আসিয়ান সম্মেলনে মিয়ানমার নেত্রী আউং সান সুচি তোপের মুখে পড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক স্পষ্টভাবে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এখন মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এ সংকটে দ্রুত সমাধান না হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন। বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা আইএস’র মত বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। এ সম্মেলনে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের প্রতিবেশীরা উদ্বিগ্ন। অপরদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যা বেড়েই চলেছে। সরকারের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাড়তি ঝামেলায় পরিণত হয়েছে। এরপরও মানবিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে উখিয়া-টেকনাফ এলাকার স্থানীয় অধিবাসীদের যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে এখনও কোন উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। টেকনাফ-উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের একটি অংশ প্রতিদিন বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম মরণনেশা মাদক ইয়াবা পাচারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া। এছাড়া আশ্রয় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বড় আকারের দল না আসলেও প্রতিনিয়ত কোন না কোন পথে দুয়েকজন করে হলেও আসছে। এদের কোন হিসেবও নেই। প্রশাসনের নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ রোহিঙ্গাদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া যেসব এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে তাদের অনেকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত অর্থে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তারাও খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই।
×