ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২০ মার্চ ২০১৮

খালেদা জিয়ার জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপীল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপীলের অনুমতি দিয়েছে আপীল বিভাগ। ওই দিন তার আপীল আবেদনের ওপর শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সোমবার সকালে এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। একইসঙ্গে এ মামলার আপীল সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা আমাদের সবার সিদ্ধান্ত । আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের আদেশের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি হবে না। তাকে কারাভোগ করতে হবে’। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটা ভাল না। জিনিসটাকে রাজনীতিকীকরণের চেষ্টা করছে।’ অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন , এই আদেশকে আমরা ‘নজিরবিহীন’ বলতে বাধ্য হচ্ছি এই কারণে যে অতীতে এই ধরনের আদেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালত দেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশের নিম্ন আদালতগুলোকে ‘গ্রাস করে’ ফেলেছে। উচ্চ আদালতকেও মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে গ্রাস করার চেষ্টা করছে। আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়ে দিয়েছে, এখন আইনী লড়াই ছাড়া বিকল্প নেই। আরেকটি হচ্ছে রাজপথের আন্দোলন। সেটি তো সুপ্রীমকোর্টে করতে পারব না। তবে আমরা যারা আইনজীবী আছি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তার (খালেদা জিয়া) কারামুক্তির জন্য। মামলার আদেশ ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আদেশ দেয়ার জন্য আপীল বিভাগের কার্য তালিকায় দুই ও তিন নম্বর ছিল। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রথমেই বলেন, এটা কিন্তু আমাদের সবার ডিসিশন। সর্ব সম্মতিক্রমে এ আদেশ দিচ্ছি। এরপর আদালত খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপীলের অনুমতি দিয়ে সার-সংক্ষেপ জমা দিতে বলে। মামলাটি আগামী ২২ মে আপীল শুনানির জন্য রাখা হয়। আদেশের পর আপীল বিভাগ নিয়মিত কার্যক্রমে যায়। কিছু সময় পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, আমি দুঃখিত। আপনি কী আদেশ দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারিনি। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সর্ব সম্মত হয়ে এ আদেশ দিয়েছি। জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি এটা জানতে চাইনি। কোন যুক্তিতে লিভ (লিভ টু আপীল) গ্রহণ করেছেন সেটা জানতে চাই। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নথি পর্যালোচনা করেছি। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা তো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তুতে শুনানি করিনি) বলিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপীলের বলতে পারবেন। এরপর খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বলেন, ‘আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন শিরোধার্য। তবে ২২ মে অনেক দূর। আজকে যেভাবে লিভ (লিভ টু আপীল) গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এই ধরনের ক্ষেত্রে কোন দিন লিভ (লিভ টু আপীল) গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে তো সব (অতীতের সব মামলায়) লিভই (লিভ টু আপীল) গ্রহণ করা উচিত ছিল। এ সময় প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে দিতে নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘ঠিক আছে। আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। ২২ মে তারিখের ওই সময়টা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি। এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, সরকার যে উদ্দেশে এটা করেছে দুদক আর সরকার তো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়’ এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সময়টা কমিয়ে দেন। এপ্রিলে দেন।’ তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, তখন সুপ্রীমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। এ পর্যায়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ভ্যাকেশনের আগে দেন। বিচারপতি ইমান আলী তখন বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন’। জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আফটার ভ্যাকেশন’ হলে দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকল? তখন প্রধান বিচারপতি ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রেখে ওইদিন আপীল শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন। বিরতির পর ॥ বিরতির পর সাড়ে ১১টায় আদালত আবার বসলে আপীল শুনানি এগিয়ে আনতে আরজি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু শুনানির জন্য ঠিক করা ৮ মে তারিখ না বদলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এই মামলা কোন ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি করা হবে।’ বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে খালেদার অন্যতম আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার করজোড়ে বলেন, ‘আদালতের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সকলের পক্ষ থেকে করজোড়ে আবেদন করছি, খালেদা জিয়ার মামলা ভ্যাকেশনের আগেই শুনানির দিন ধার্য করা হোক।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আমরা সর্ব সম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ৮ মে দিন ধার্য করেছি। আমরা প্রথমে যে আদেশ দিয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধে তা পুনঃবিবেচনা করেছি। আদেশ হয়ে গেছে এখন আর পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ এরপরও জমির উদ্দিন সরকার অনুরোধ জানাতে থাকলে বিচারক বলে, ‘আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। কোন ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলার নিষ্পত্তি করব।’ এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম ॥ গত রবিবার সকালে আপীল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের পক্ষে-বিপক্ষে আপীল শুনানি হয়। পরে আদেশ ঘোষণার জন্য গত সোমবার তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। রবিবার খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক লিভ টু আপীলের (আপীলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ দিকে খালেদার জিয়ার জামিনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী। এ দিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপীল বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন সংক্রান্ত চারটি আবেদনের শুনানি হয়। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের কারাদ-ে দ-িত হন খালেদা জিয়া। ওইদিন থেকেই পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি। পরে গত ১৩ মার্চ হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। কিন্তু হাইকোর্টের দেয়া এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজের আদালতে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই দুটি আবেদনের বিষয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ মার্চ আপীল বিভাগ দুদকের আইনজীবীর আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে (দুদক আইনজীবীকে) লিভ টু আপীল করার নির্দেশ দেন। এ সময় দুদকের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেন এবং একইদিনে (১৮ মার্চ) দুদকের লিভ টু আপীলের শুনানির দিন ধার্য করেন। আপীল বিভাগের দেয়া হাইকোর্টের জামিন স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ওইদিন (১৪ মার্চ) দুপুরে চেম্বার আদালতে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এই (প্রত্যাহার) আবেদনটি ১৮ মার্চ আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দুদকের লিভ টু আপীলের সঙ্গে শুনানির দিন ধার্য করেন। পরদিন (১৫ মার্চ) সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের পক্ষ থেকে লিভ টু আপীল দায়ের করা হয়। সেই সঙ্গে ওই লিভ টু আপীলের আরেকটি প্রার্থনা চায় দুদক। খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে দুদকের লিভ টু আপীল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ যেন স্থগিত থাকে সেজন্য আরেকটি পৃথক প্রার্থনা করে দুদক। এ দিকে, দুদকের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে এই লিভ টু আপীলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখতে দুদকের মতো পৃথক আরেকটি প্রার্থনাও জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা দুটি লিভ টু আপীল শুনানিকালে আপীল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তা প্রত্যাহার চেয়ে পৃথক দুটি (দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে) আবেদন করেন। খালেদার আইনজীবীরা রাজনীতি করছেন ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় কারাদ- পাওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিয়ে তার আইনজীবীদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ বলছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। আপীল বিভাগের আদেশের পর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী জয়নুল আবেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন, নিম্ন আদালতগুলো এই সরকার গ্রাস করে ফেলেছে। উচ্চ আদালতকেও মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে ... গ্রাস করার চেষ্টা করছে।’ বিএনপির আইনজীবীদের নানা বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটি ভাল উচ্চারণ না। জিনিসটাকে রাজনীতিকরণের জন্য তারা চেষ্টা করছেন। খালেদা জিয়াকে সমস্ত রকম সুবিধা দিয়ে আদালত এ দ- প্রদান করেছে। দ- প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত (বিচারিক আদালত) যে কতখানি মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, ন্যায় নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, সেটি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাঁর (খালেদা জিয়া) সামাজিক মর্যাদা, বয়স বিবেচনায় পাঁচ বছরের কারাদ- দেয়াতে। যদিও অন্যদের (বাকি আসামিদের) ১০ বছর দিয়েছেন। কাজেই এটাকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চাচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই সফল হবেন না। কারণ এখানে কোন রাজনীতির বিষয় না। এটা সাধারণ অপরাধের বিষয়। আপীল বিভাগের আদেশের বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত শুনানির জন্য ২২ মে ধার্য করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এগিয়ে এনে ৮ মে নির্ধারণ করেছেন।’ ‘এ আদেশের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে আর এখন মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাকে কারাভোগ করতে হবে।’ আপীল বিভাগে আগের দিন খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাজার উদাহরণ দেখিয়ে বলেন, দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পাওয়ার সাড়ে তিন বছর পর জামিন পেয়ছিলেন তিনি। কাজেই খালেদা জিয়া জামিন পেতে পারেন না। এমন আদেশ কখনও শুনিনি ॥ হাইকোর্টে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন গ্রহণ করে আপীল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছে তা কখনও শুনেননি বলে দাবি করেছেন মওদুদ আহমদ। মওদুদ বলেন, ‘আমি বলব এটা কিছুটা নজিরবিহীন। এটা আমরা কখনও শুনি নাই এবং প্রত্যাশাও করি না। যেহেতু উচ্চতম আদালত আদেশ দিয়েছেন। আমাদের তো আইনী লড়াই ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই। আর একটা হলো, রাজপথে আন্দোলন। সেটা তো সুপ্রীমকোর্টে করতে পারব না।’ ‘আমরা যারা আইনজীবী আছি আপ্রাণ চেষ্টা করব যত শিগগির সম্ভব খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে।’ নজিরবিহীন ও অপ্রত্যাশিত ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতের নজির বলে যে, জামিন আবেদনের শুনানিতে কখনও মেরিটে (মামলার বিষয়বস্তু) যায় না। আদালত আমাদের কথাও শুনলেন এবার, প্রথম তো শুনলেনই না। এবার শুনলেন। কিন্তু আজকে যে আদেশটি দিলেন, আদেশে বললেন যে, উনারা (আপীল বিভাগ) সবাই মিলে এই আদেশটি দিয়েছেন, লিভ দিলেন (আপীলের অনুমতি), স্টে (জামিন স্থগিত) করলেন।’ প্রথমে ২২ মে মামলাটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করলেন। পরে ৮ মে তারিখে নির্ধারণ করলেন। আমরা বুঝতেই পারলাম না, কী আদেশ দিলেন। আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীন আদেশ হয়েছে। আজকে জাতির উদ্দেশে বলতে চাই, এটা একটা অনভিপ্রেত আদেশ আজকে হলো, দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজকে যে আদেশটি দিলেন, এতে আমরা খুব মর্মাহত হয়েছি। আমরা নজিরবিহীন বলতে বাধ্য হচ্ছি এই কারণে, অতীতে এই ধরনের আদেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালত দেননি।
×