ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপা ফসকে যাওয়ায় আক্ষেপে পুড়ছে সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ মার্চ ২০১৮

শিরোপা ফসকে যাওয়ায় আক্ষেপে পুড়ছে সারাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুঃসহ বেদনার শুরুটা ২০০৯ সাল থেকেই। সেবার দেশের মাটিতে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে জিততে জিততে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর ২০১২ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে, ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপে ভারতের কাছে এবং চলতি বছর জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও জিততে জিততে ভারতের কাছে হেরে হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে শিরোপা। এবারের দুঃখটা যেন ছাপিয়ে গেল পূর্বের চারটি ফাইনালের কষ্টকেও। শেষ বলের ছক্কা সব স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান করে দিয়েছে। সেই আক্ষেপে ভাসছে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাটে সর্বস্তরের সকল মানুষের মাঝে এখন সেই হতাশার সুর। মর্মন্তুদ এ ঘটনায় স্তব্ধ দেশের মানুষ সর্বত্র আলোচনা করছে আবারও তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ায়। এই প্রথম দেশের বাইরে কোন আসরে ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এটিই ছিল দেশের ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। সে কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে জাতীয় দলকে ১ কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করে। পুরো দেশ স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় শিরোপা জয়ের। নিদাহাস ট্রফিতে শিরোপা জেতার সব মঞ্চই প্রস্তুত করে ফেলেছিল টাইগাররা। এই সিরিজে বাংলাদেশ দল বিজয় উদযাপনেরও একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলেছে লীগপর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকুর রহীম জয় নিশ্চিত করার পর ‘নাগিন নৃত্য’ দিয়ে। যা নিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই সাড়া পড়ে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে হয় বিতর্ক। লঙ্কানদের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে এই নাগিন ড্যান্স নিয়ে আরও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে বিশ্বের ক্রিকেট বোদ্ধারা এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অভিনব এই নৃত্য এমনকি শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সাধারণ দর্শকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। বাকি ম্যাচগুলোয় গ্যালারিতে সেটা খুব ভালভাবেই দেখা গেছে। ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ফলাও করে ছড়িয়ে যেতে দেখা গেছে নাগিন ড্যান্স নিয়ে আলোচনা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই নয়, সেটা এমনকি দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশের মানুষও আলোচনা করেছেন। এমনকি ফাইনালে ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার, বর্তমানে ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কারকেও ধারাভাষ্য দেয়ার সময় নাগিন নৃত্য করতে দেখা গেছে। সবকিছুতেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল টাইগার টিম। আর প্রতিপক্ষরাও মরিয়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তুলে নিতে। সে কারণে যখনই বাংলাদেশের উইকেট পতন ঘটেছে কিংবা বাংলাদেশের বিপক্ষে চার-ছক্কা হয়েছে তখনই তারা নাগিন নৃত্য করেছেন প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারসহ সমর্থকরা। বাংলাদেশের মানুষের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লিখেছেন,‘এখন শুধু নাগিন ড্যান্স হবে। যেকোন প্রতিপক্ষকে ছোবল হানবে বাংলাদেশ!’ তবে শেষ পর্যন্ত স্বপ্নটা পূরণ হয়নি। ফাইনালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দর্শক হয়েছে বাংলাদেশের কাছেই হেরে। এমনকি ফাইনালে ওঠার শেষ ম্যাচ ছিল তুমুল উত্তেজনার। সে ম্যাচে এমনকি বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে খেলা বয়কটেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক সাকিব মাঠ থেকে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন দুই ব্যাটসম্যানকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে বিজয়ী করে বীরোচিতভাবেই দলকে পৌঁছে দেন ফাইনালে। এই ম্যাচে নাগিন নৃত্যটি নিয়ে আরও সাড়া পড়ে যায়। জেতার পর পুরো বাংলাদেশ দলই নাগিন নৃত্য করে উদযাপন করে বিজয় মাঠে নেমে। তখন থেকেই বিশেষ করে তিনটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা) সাধারণ দর্শক, সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে আলোড়ন তোলে এ উদযাপন। দেশের অনেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লিখেন, ‘টাইগার থেকে নাগিনে রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল, এটা কি ঠিক হচ্ছে?’ তবে অনেকে আবার মনে করেছেন যেকোন প্রতিপক্ষকে ছোবল দিয়ে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিতে পারে বাংলাদেশ দল সেটারই প্রতীক এটা। অনেক আগে থেকেই টাইগার টিম হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি তো এসেছেই, এখন নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানোর আরেকটি রূপ। পুরো দেশ প্রস্তুত হয়ে ছিল নাগিন নৃত্য করতে। সেটা দেখা গেছে রাউন্ড রবীন লীগের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাটকীয় জয় তোলার পর। দেশের মানুষ জেতার পর গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তাঘাটে নাগিন নৃত্য করেছেন উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু রবিবার ফাইনালে আর সেটা হয়নি। আক্ষেপ আর হতাশায় পুড়েছেন সকলে। সোমবার পর্যন্ত হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সবখানে। হতাশার সুর দেশের সর্বস্তরের সব মানুষের কণ্ঠে। কিন্তু অনেকেই আবার বলেছেন, ‘এটা শুরু, বাংলাদেশ দল এখন যে অনেক বড় সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। এবার হয়নি, ভবিষ্যতে হবে সেটা অবশ্যই প্রমাণ হয়ে গেছে।’ সে কথা জানালেন অধিনায়ক সাকিবও, ‘আমাদের কাছ থেকে কিছুই হারিয়ে যায়নি। টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে খেলেছি, এমনকি ফাইনালে, আমরা আমাদের ভাল দিকটা দেখাতে পেরেছি। আশা করছি এখান থেকে নেয়া শিক্ষা আমরা কাজে লাগাতে পারব এবং কোন একদিন আমাদের দলই জিতবে।’
×