ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদয়ের ভালবাসায় বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকি ॥ শিল্পী শাহাবুদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৯ মার্চ ২০১৮

হৃদয়ের ভালবাসায় বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকি ॥ শিল্পী শাহাবুদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পরসিকদের জন্য দারুণ খবর। আজ সোমবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হচ্ছে শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর আগে রবিবার নিজের নানা ভাবনা তুলে ধরলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পী। সেখানে উঠে আসে তাঁর ছবি আঁকার বিষয়, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি। কথা প্রসঙ্গে শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করা, জাতির জনককে হৃদয়ে ধারণ করা খুব কঠিন। বঙ্গবন্ধুর কারণেই বাংলাদেশ পেয়েছি। তারপরেও বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছে। আমি আমার ছবিতে সেই কথা বারবার বলি। আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, করেছি। বিশ্বের আর কোন শিল্পীর এই অভিজ্ঞতা নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বাইরে চলে গেলে আমার অস্তিত্ব থাকে না। আমি হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে তাঁর ছবি আঁকি। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই চেতনা বহন করে চলেছি। এ পথ খুব কঠিন পথ। পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছিলেন এদের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে। নতুন আশার পথ দেখিয়েছিলেন। এটা আজকের তরুণদের ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা পৃথিবীজুড়ে বিরাজ করছে সহিংসতা, অশান্তি। বিশে^র কোথাও মানুষ এখন নিরাপদ নয়। একমাত্র ভালবাসাই পারে সহিংসতা থামাতে। দিতে পারে মানুষের নিরাপত্তা। রবিবার শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁর ‘শান্তি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। আজ সোমবার বিকাল সাড়ে চারটায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ২ নম্বর গ্যালারিতে। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি ও কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির পরিচালক স্মিতা বাজোরিয়া, অধ্যাপক আবদুল মান্নান প্রমুখ। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিরন্তর সৃজনের বীজ রোপণ করে দিয়েছে। তার চিত্রে মুক্তিযোদ্ধার অবিশ্রাম পথচলা ও গতি অনিঃশেষ শক্তি নিয়ে প্রতিফলিত হয়। এই সৃজনকর্মের মধ্য দিয়েই তিনি হয়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনন্য রূপকার। শিল্পীর এই অভিযাত্রা তাকে দেশে-বিদেশে, বিশেষত আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে। শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকে আমার ছবিেেত রাজনৈতিক ‘তকমা’ এঁটে দেয়। আমি আসলে অন্তর থেকে ছবি আঁকি। বঙ্গবন্ধুকে আমি কখনও আওয়ামী লীগের নেতা ভাবিনি। তাঁকে কাছ থেকে দেখে ও ভাষণ শুনে মুগ্ধ হয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। সেই প্রেক্ষাúটে আমাকে রাজনৈতিক শিল্পী বললে কিছু করার নেই। চিত্রকর্মের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ প্রসঙ্গে শাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি ছবির মর্ম বুঝতেন। স্মৃতিচারণ করে শিল্পী বলেন, ১৯৭৩ সালের ঘটনা। সেদিন ক্যাবিনেট মিটিং চলছিল। সেখানে আমার আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে হাজির হই। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তাঁকে ছবি দেখানোর সুযোগ পেলাম। ছবিটি দেখে তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে বললেন, দেখো কি সুন্দর ছবি এঁকেছে। তারপর বললেন, আমি ছবি খুব ভাল বুঝি না। আমার এখানে এখানে বিদেশীরা আসে। তাদেরকে এই ছবি দেখিয়ে বলব, আমার দেশের লোকেরা শুধু যুদ্ধ করতেই জানে না, ভাল ছবি আঁকতেও জানে। উৎকৃষ্ট চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে শাহাবুদ্দিন বলেন, কোন কিছু সৃষ্টি করা খুব কঠিন। ভাল শিল্পী হতে হলে সাধনা করতে হবে। সাধনার বিকল্প নেই। তবে সাধনাতেও সব সময় কাজ হয় না। সঙ্গে নিজস্ব গুণাবলি থাকতে হবে। এটা ঈশ^র প্রদত্ত বিষয়। সৃষ্টি খুব বিপজ্জনক শব্দ। এটা কারও জীবনে একবারই ঘটে। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমি যোদ্ধা নই। ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হবার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এই লড়াই আমাকে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছে। প্যারিসে গিয়ে টিকে থাকা সহজ কথা নয়। আরও দশটা দেশের শিল্পীর মত আমিও সেখানে হারিয়ে যেতে বসেছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা আমাকে সেখানে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছে। আমি সেখানে উঠে দাঁড়িয়েছি। ‘শান্তি’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি ২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। ভারতের কোন রাষ্ট্রপতির সেটাই প্রথম কোন চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন। সেই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া তেলরংয়ে আঁকা ৩২টি ছবিই প্রদর্শিত হবে এ শিল্প-আয়োজনে। একই প্রদর্শনী এর আগে মুম্বাইয়ে হয়েছে। বাংলাদেশের পর এটা প্রদর্শিত হবে দিল্লীতে। আজকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ও আলোচনা পর্ব ছাড়াও শিল্পী শাহাবুদ্দিনের লেখা ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, শিল্পীর ওপরে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘কালার অব ফ্রিডম’ প্রদর্শন ও এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী রয়েছে।
×