ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত সরবরাহে ব্যর্থতা ॥ ডিপিডিসিকে ৮৪১ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ মার্চ ২০১৮

বিদ্যুত সরবরাহে ব্যর্থতা ॥ ডিপিডিসিকে ৮৪১ কোটি টাকা জরিমানা

রশিদ মামুন ॥ ঢাকার অধিকাংশ গ্রাহক মানসম্মত বিদ্যুত পাচ্ছেন না। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সরবরাহে বেঁধে দেয়া পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত না দিতে পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানসম্মত বিদ্যুত সরবরাহে ডিপিডিসি ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটিকে পিএফসি চার্জ বাবদ ৮৪১ কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুত সরবরাহ করে ডিপিডিসি। কিন্তু কোম্পানিটির অধীনে কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব শিল্পে মোটর চালাতে গিয়ে রিএ্যাকটিভ পাওয়ার বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহক পর্যায়ে পাওয়ার ফ্যাক্টর সংশোধন করতে পারে এমন ডিভাইস বসাতে হয়। এছাড়া এক বিতরণ এলাকার সমস্যা যাতে অন্য এলাকায় না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য ক্যাপাসিটর ব্যাংক বসাতে হয়। কিন্তু এর কোনটিই না থাকায় সঠিক মানের বিদ্যুত পাচ্ছে না গ্রাহক। সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত সরবরাহ না করায় লো ভোল্টেজ সমস্যার সঙ্গে বিদ্যুত বিতরণে তরঙ্গ ঠিক থাকে না। এতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গ্রাহক মানসম্মত বিদ্যুত না পাওয়ায় যন্ত্রাংশ পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলেও এ বিষয়ে অজ্ঞতা থাকায় অভিযোগও করতে পারেন না। বিদ্যুত বিভাগ বলছে ডিপিডিসি ছাড়াও দেশের অন্য বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির পাওয়ার ফ্যাক্টর দশমিক ৯ বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ডিপিডিসি দশমিক ৯ পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না। অধিকাংশ মাসেই তারা দশমিক ৮৮ বা দশমিক ৮৭ পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত সরবরাহ করে আসছে। ডিপিডিসি সম্প্রতি যে হিসেব দিয়েছে তাতে দেখা যায় গত পাঁচ বছরে তারা পাওয়ার ফ্যাক্টর ঠিক না করতে পারায় ৮৪১ কোটি টাকা জরিমানার স্বীকার হয়েছে। তবে সব অর্থই এখন পরিশোধ করে উঠতে পারেনি কোম্পানিটি। হিসেব অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে কম পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত সরবরাহ করায় কোম্পানিটি ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা জরিমানার শিকার হয়। পরের বছর তা ২০১৩-১৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ কোটি ২৩ লাখ টাকায় যা ২০১৪-১৫ তে কিছুটা কমে ১৪৩ কোটি ১৭ লাখে দাঁড়ায় কিন্তু গত দুই বছরে তা আবার বেড়ে যায়। দেখা গেছে ২০১৫-১৬ তে ডিপিডিসির এখাতে জরিমানা হয়েছে ১৮৬ কোটি আর ২০১৬-১৭ তে ১৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ এর আগে গত বছর মার্চে এক আদেশে সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টরে বিদ্যুত না সরবরাহ করতে পারায় ডিপিডিসিকে মাসে ৫০ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ডিপিডিসি পরবর্তীতে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আবেদন করে। ওই আবেদনের পর জরিমানা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেকও পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি কোম্পানিটি। জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, ডিপিডিসি এলাকায় আজিমপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গিরচর, জুরাইন, জিঞ্জিরা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় কিছু শিল্প কারখানা রয়েছে। যেখানে মোটর ব্যবহার করা হয়। এজন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যায়। অন্য বিতরণ সংস্থাগুলো পারলে ডিপিডিসি কেন পাওয়ার ফ্যাক্টর ঠিক রাখতে পারছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্য বিতরণ সংস্থায় এমন শিল্প ঘন পরিবেশ নেই। যা ডিপিডিসি এলাকায় রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে গেলে গ্রাহক মানসম্মত বিদ্যুত পায় না। এজন্য সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর অনুসরণ করতে হয়। এতে সাধারণত লো ভোল্টেজ এবং বিদ্যুত সরবরাহ তরঙ্গে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ৮৫০ মেগাভার (রিএ্যাকটিভ পাওয়ার পরিমাপক) এর একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন করে ১৫ সাব স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ক্যাপাসিটর ব্যাংক বসানো হবে। ডিপিডিসি বলছে, পিএফসি চার্জ গ্রাহকের দেয়ার কথা। এর আগে একবার গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করার পক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তখন শিল্পমালিকরা আন্দোলন করে জরিমানা প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করে। গ্রাহক পর্যায়ে পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়নের জন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট (পিএফআই) ডিভাইস বসানোর জন্য গ্রাহককে উদ্বুদ্ধ করা হলেও কেউ তা মানছে না। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, আমি আসার পর জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে শুরু করেছি। আমাদেরই জরিমানার টাকা দিতে হবে। তিনি জানান, আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি। এতে মগবাজার, মাদারটেক, মানিকনগর, নারিন্দা, মাতুয়াইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, শীতলক্ষ্যা, ধানম-ি, কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ, শ্যামপুর, লালমাটিয়া, সাত মসজিদ, পোস্তগোলা, লালবাগ (পুরাতন) সাব স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ক্যাপাসিটর ব্যাংক বসানো হবে। আশা করছি এর মাধ্যমে সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর অনুসরণ করে বিদ্যুত সরবরাহ করা যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বিদেশী বিনিয়োগকারী একটি সংস্থার প্রতিনিধিরা ডিপিডিসির বিভিন্ন সাব স্টেশন পরিদর্শন করেছে। তারা ১০০ মিলিয়ন ডলার এ কাজে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। যদিও এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারেনি কোন পক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডিপিডিসির পাওয়ার ফ্যাক্টরের উন্নত হবে।
×