ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ মার্চ ২০১৮

খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আপীলের (লিভ টু আপীল) শুনানি শেষ হয়েছে। আজ সোমবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। রবিবার সকাল নয়টা ৪০ মিনিটে আপীল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীলের শুনানি শুরু হয়। মাঝে আধাঘণ্টার বিরতি দিয়ে শুনানি শেষ হয় বেলা বারোটায়। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। বিচারপ্রার্থীসহ সবাইকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে হয় কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে। আদালতের আদেশের পর খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল থাকবে। অন্যদিকে অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যেখানে নাকি এতিমদের অর্থ আত্মসাত হয়ে যাবে সেখানে জামিন দেয়া সঠিক হবে না। রবিবার শুনানির শুরুতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, গত ১২ মার্চ হাইকোর্টে চারটি যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। এ সময় তিনি হাইকোর্টের আদেশের অংশটুকু পড়ে শুনান। তিনি বলেন, লঘুদ- দেয়া হয়েছে। ৪৬ ডিএলআর থেকে একটি রায়ের অংশ পড়ে শোনান। এতে বলা হয় একটি মাদকদ্রব্য আইএনের মামলায় দুই বছরের সাজা হয়েছিল একজনের। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ জামিন দেন নাই। হাইকোর্টে অমরা এই যুক্তি দেখিয়েছিলাম। হাইকোর্ট গ্রহণ না করে সাংঘর্ষিক আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্ট যে চারটি যুক্তিতে জামিন দিয়েছেন এর প্রথমটি হলো হাইকোর্ট বলেছেন খালেদা জিয়া জামিনের অপব্যবহার করেননি। এ প্রসঙ্গে দুদক আইনজীবী আদালতে বলেন, তিনি বিচারিক আদালতের অনুমতি না নিয়েই বিদেশে গেছেন। কাজেই হাইকোর্টের এই যুক্তি সঠিক নয়। মেডিক্যাল গ্রাউন্ডস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসকদের কোন কাগজপত্র দেননি। বিচারিক আদালত তাকে দ-বিধির ৪০৯, ১০৯ ধারায় তাকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ এর (২) ধারায় দুর্নীতির অপরাধ প্রমাণ হওয়ায়ও আদালত তাকে সাজা দেয়নি। এ সময় খুরশীদ আলম খান বলেন, তিনি একই সুবিধা দুইবার পেতে পারেন না। তিনি বলেন, তিনি বয়স্ক মহিলা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ এ কারণে বিচারিক আদালত দশ বছরের সাজা না দিয়ে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া //সমীচীন মনে করেছেন। এ সময় আদালত বলেন, এটি কি বিচারিক আদালত গ্রহণ করেছেন, খুরশীদ আলম খান বলেন হ্যাঁ গ্রহণ করেছেন। খুরশীদ আলম খান বলেন, দশ বছরের সাজা না দিয়ে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। আদালত বলেন, পাঁচ বছরের সাজা দেয়ায় ওনার শারীরিক অবস্থা কি ভাল হয়ে গেছে? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, এ মামলায় রায়ের আগে ও পরে দুই মাস ২৫ দিন যাবত কারাগারে আছেন। হাইকোর্টে উনাকে চার মাসের জামিন দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। পেপারবুক প্রস্তুত হলে শুনানি হোক সে পর্যন্ত তিনি জেলে থাকুক। আপীল নিষ্পত্তি হলে তিনি আবার জামিন আবেদন চাইতে পারবেন। তখন আদালত বলেন, এই উপমহাদেশে জয়ললিতা, লালুপ্রসাদ যাদব কতদিন কারাগারে ছিলেন? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জয়ললিতার দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। সুপ্রীমকোর্টেও এ রায় বহাল ছিল। তার সহযোগী শশীকলা এবং অন্য আরেকটি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদব এখনও কারাগারে আছেন। কাজেই দুই মাস ২৫ দিনের মধ্যে জামিন পাবেন এট ঠিক হবে না। এ পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি সারসংক্ষেপ বলতে চাই। তিনি মামলার বিস্তারিত পড়া শুরু করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী এতে আপত্তি তুলে বলেন, এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এখন তো আপীলের শুনানি হচ্ছে না। মামলার সারবত্তায় (মেরিট) যাওয়ার দরকার কি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা মামলাটি একটু ভাল করে শুনি। আপনারাই বলেছেন, আমরা গত দিন শুনিনাই। আমরা আপনাদের কথা পরে শুনব। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা হলো একটা সারসংক্ষেপ। বিচারিক আদালতের রায়ে একজন সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, এতিমখানার টাকা উত্তোলনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার অনুমোদন ছিল। এর মধ্যে তারেক রহমান ও তার ভাগ্নে মুমিনুর রহমান চার লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। তারা কিভাবে এ টাকা তুলে নিল? আদালত বলেন, এটা কি ব্যক্তি নামে ছিল। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন হ্যাঁ ব্যক্তি নামে ছিল। এফডিআর করা নিয়ে একটা মামলাও হয়। কিভাবে বিদেশ থেকে টাকা এলো, কিভাবে এফডিআর হলো। তারা জমি কেনার জন্য টাকা দিয়েছিল কিন্তু যখন জমি পাচ্ছিল না তখন তারা জমির জন্য চাপ না দিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছে। আদালত জানতে চান মামলাটি কখন হয়েছিল? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২০০৯ সালে। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মামলার ধারাবাহিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বিচার বিলম্বিত করতে তারা এমন কোন পথ নেই যে অবলম্বন করেননি। এ মামলা যেন বাস্তবে না আসে সেজন্য তারা কয়েকবার উচ্চ আদালতে বিভিন্ন অজুহাতে আসেন। এটা সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগেও গড়ায়। এ হলো তাদের আচরণ। মামলার নথি থেকে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অজ্ঞাতে টাকা এসেছে বা তোলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এটা ঠিক না। তিনি হাইকোর্টের চারটি যুক্তির পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, তাকে স্বল্প মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আর আপীল শুনানি হবে না এটা অযৌক্তিক। আমাদের এ কোর্টে বিডিআর মামলা ১৫২ জনের মৃত্যুদ- হয়েছে। আমরা হাজার হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক তৈরি করেছি। খালেদা জিয়া জামিনের অপব্যবহার করেনি এ যুক্তিতে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন তিনি (খালেদা জিয়া) দ-িত। এটা এখন বিচারাধীন বিষয়। একই যুক্তি এখানে প্রযোজ্য হবে না। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ এ যুক্তির জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং বয়স্ক নারী। এ বিবেচনায় তাকে দশ বছরের সাজা না দিয়ে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন বিচারিক আদালত। একজন আসামিকে কতবার এই সুবিধা দেয়া হবে। এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। ৪২৬ ধারা নয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দয়া এবং বার বার অনুকম্পা দেখানো ঠিক হবে না। কোন রাষ্ট্রেই এটা দেখানো হয়নি। এরপর তিনি পাকিস্তানে কি হয়েছে এর নজির দেখান। আমাদের দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাড়ে তিন বছর জনতা টাওয়ার মামলায় সাজা হয়েছিল। উনি জেলও খেটেছেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, লালুপ্রসাদের সঙ্গে কি এ ঘটনার মিল আছে? জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রীমকোর্টেও তার জামিন খারিজ হয়েছিল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলা হচ্ছে কিন্তু তিনি মিটিং করছেন, সমাবেশ করছেন, বিদেশ যাচ্ছেন সবকিছু করছেন। আজকে যদি জামিন দেয়া হয় তাহলে আপীলের শুনানি অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপীল বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিতে পারে নাও দিতে পারে। তবে জামিন দেয়াটাই স্বাভাবিক। লঘুদ-ের কারণে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। জামিন না দেয়ার নজির খুবই কম। সাধারণত দেখা যায়, আপীল বিভাগ হাইকোর্টের জামিনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি। সিমিত ক্ষেত্রে আপীল বিভাগকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা গেছে। যদি ন্যায়বিচার বিঘিœত হয়েছে সেক্ষেত্রে আপীল বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারেন। হাইকোর্ট হচ্ছে এ ধরনের মামলায় জামিন দেয়া বা না দেয়ার স্বাভাবিক কর্তৃপক্ষ। এ পর্যায়ে আদালত বিরতিতে যান। বেলা সাড়ে এগারোটায় শুনানির শুরুতেই এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ৪২৬ ধারায় মামলার সারবত্তা যাচাই করে হাইকোর্টের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। হাইকোর্টে আবেদন আসবে তারা এটা পুরোটাই দেখবে। তারপর তারা জামিন দেবে কি দেবে না সিদ্ধান্ত জানাবেন। আপীল বিভাগ হস্তক্ষেপ করে না যদি না এখানে বিচারের বিচ্যুতি না ঘটে। এ সময় বিচারপতি ইমান আলী জানতে চান বিচারিক আদালত দ- দিলে হাইকোর্ট কি দ- দিতে পারে? জবাবে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, অনেক মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। শুধু আপীল বিভাগ এটাতে হস্তক্ষেপ করেন নাই। তিনি বলেন, মামলার কাগজপত্র তৈরি করা। রায়ের কোথাও বলা হয়নি খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাতে জড়িত। তার (খালেদা জিয়া) স্বাক্ষর ছিল কোথাও বলা হয়নি। এটা পরিষ্কার যে এ ধরনের জামিনের ক্ষেত্রে আপীল বিভাগ হস্তক্ষেপ করে নাই। এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, স্বল্পমেয়াদে সাজা একটি দিক আপীল হচ্ছে আরেকটি দিক। সাজা যদি কমে তাহলে ভারসাম্যের ওপর জোর দিতে হবে। লাখ লাখ সাধারণ মামলা ছেড়ে দিয়ে এটাকে সামনে আনা হচ্ছে। এটাকেই আগে শুনতে হবে। উনি (এ্যাটর্নি জেনারেল) অনেক বড় গল্প বললেন। আমি এটার জবাব দেয়া সমীচীন মনে করি না। মামলাটি আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলুক। আমি মনে করি হাইকোর্টের জামিনের সিদ্ধান্ত সঠিক। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটা খালেদা জিয়ার মামলা তাই এ মামলার গুরুত্ব অনেক। তিনি না হলে আমরাও আসতাম না সরকারও এত উৎসাহী হতো না। হাইকোর্টের ক্ষমতা আছে জামিন দেয়ার। এ সময়ে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, দশ বছরের সাজার দু-একটি মামলা আছে যেগুলোতে জামিন মিলেছে কিন্তু আপীল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। এ সময় খুরশীদ আলম খান পাকিস্তানের পারভেজ মোশারফ, জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবের মামলার নজির তুলে ধরেন। এ সময় আদালত আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন। আপীল দ্রুত শুনানি করা সম্ভব ॥ আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট যে যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে সেটা সঠিক হয়নি। সাজা ভোগ করা সময় শেষ হয়ে গেছে, অথচ আপীল শুনানি হয়নি- এ রকম কোন ঘটনা এখানে ঘটেনি। খালেদা জিয়ার দ- পাঁচ বছর। এর মধ্যে আপীলটা দ্রুত শুনানি করা সম্ভব- এটা আমরা শুনানিতে বলেছি।’ খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়ও আপীল বিভাগে আলোচনায় এসেছে বলে এ্যাটর্নি জেনারেল জানান। তিনি বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) ১০ বছরই সাজা দেয়ার কথা। কিন্তু বয়স ও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করেই নিম্ন আদালত তাকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছে। যে বিবেচনা করে নিম্ন আদালত সাজা কমিয়ে দিয়েছে, সেই একই বিবেচনা করে হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে।’ মাহবুবে আলমের যুক্তি, বয়স ও সামাজিক মর্যাদা ৪৯৭ ধারা বলে বিচারাধীন মামলার কারাবন্দী আসামিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। যেখানে সাজা হয়ে গেছে, সেখানে প্রযোজ্য হবে ৪২৬ ধারা। সেখানে বয়স বা অসুস্থতার কথা বলা নেই। ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন, আদালত কঠোরভাবে তার বিচার করে। বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, রাষ্ট্রনায়করা দেশ থেকেই পালিয়ে গেছেন ভয়ে বা দ- এড়ানোর জন্য। এখানে যে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে, এই পাঁচ বছরের মধ্যে মাত্র দুই মাস-আড়াই মাস গেছে। অন্য একজন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, তারও পাঁচ বছর সাজা হয়েছিল। তাকে সাড়ে তিন বছর সাজা ভোগ করতে হয়েছে।’ রাজনৈতিকভাবে মেরিটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ॥ আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ্যাটর্নি জেনারেল মূলত রাজনৈতিকভাবে এ মামলাটির মেরিটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং অনেকগুলো বিষয়ের কথা তিনি বলেছেন। পরে আমরা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে বলেছি, উপমহাদেশে এবং আমাদের দেশে যতগুলো সিদ্ধান্ত আছে, সে মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগ যদি কোন জামিন আবেদন গ্রহণ করেন এবং জামিন দেন এবং সেখানে যদি কারণ উল্লেখ করে জামিন দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সাধারণত আপীল বিভাগ কোন হস্তক্ষেপ করে না।’ আমরা মনে করি, আইনগত যে দিকগুলো আমরা আদালতে তুলে ধরেছি, ইনশাল্লাহ সবই আমাদের পক্ষে। দুদক-রাষ্ট্রপক্ষ এর কোন পাল্টা যুক্তি দিতে পারেনি। ফলে আমরা আশা করি, হাইকোর্ট যে জামিন আদেশটি দিয়েছে, সেটি বহাল রাখবে আপীল বিভাগ। একটা গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে ॥ দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, যে চারটি যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে, সেগুলো তিনি সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে খ-ন করার চেষ্টা করেছেন। ‘এর পক্ষে একটা রায় উপস্থাপন করে বলেছি, দুই বছরের সাজায় উনি জামিন দেননি। আবেদনকারীকে বলেছিলেন, হাইকোর্টে গিয়ে নতুন করে শুনানি করতে। শুনানির সুযোগ না হলে আবার নতুন করে জামিন আবেদন করতে।’ মেডিক্যালের একটা গ্রাউন্ডে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। আমরা বলেছি হাইকোর্টে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের পক্ষে কোন কাগজ তারা দিতে পারেননি। খালেদা জিয়া এ মামলায় জামিনে থাকাকালে জামিনের অপব্যবহার করেননি উল্লেখ করে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। তাও সঠিক নয়। উনি আদালতের অনুমতি না নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন।’
×