ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পাঁচজন আশঙ্কামুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ মার্চ ২০১৮

 ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন  পাঁচজন আশঙ্কামুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশীদের লাশ আজ সোমবার দেশে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ইতোমধ্যে শনাক্তকৃত ১৭ জনের লাশ দেশে আনার প্রস্তুতি চলছে। ডিএনএ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন উপায়ে শনাক্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েক বাংলাদেশীর লাশ পাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের সদস্যদের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনায় আহত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তবে মানসিক ভীতি ও আতঙ্ক দূর করতে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনিটরিং এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় দেশে নিয়ে আসা চিকিৎসাধীন আহতদের চিকিৎসাসেবা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে বদ্ধ পরিকর রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত-আহত বাংলাদেশীদের সার্বিক অবস্থার ওপর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) সিরাজুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান, বাংলাদেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন প্রমুখ। বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনিটরিং করছেন। দুর্ঘটনার পরই তিনি বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আহতদের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেনকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। নেপালেও বাংলাদেশের একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। চিকিৎসায় দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য সকলকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীদের চিকিৎসা কক্ষে প্রবেশ না করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আহতদের দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমানো যাবে না। এখানে ভিড় করলে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে, রোগীর আত্মীয়-স্বজনরাও অস্বস্তি অনুভব করেন। অনেক সময় জীবাণু সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নেপালে আমাদের যে প্রতিনিধি দল গেছে, তারা আহতদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক তথ্য জানাচ্ছেন। তাদের দেয়া রেকর্ড অনুযায়ী ইতোমধ্যে নিহত ১৭ বাংলাদেশী শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র ২৬ বাংলাদেশীর মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে। এই হিসাবে আরও ৯ জন নিহত বাংলাদেশীর লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য নেপাল সরকার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়ার পরই বাকিদের লাশ দেশে আনা হবে। শনিবার পর্যন্ত দেশে ফেরা পাঁচজন হলেন- শাহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন্নাহার এ্যানি ও রাশেদ রুবায়েত। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে তারা ভর্তি আছেন। বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং তারা ভাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডাঃ সামন্ত লাল সেন বলেন, টিমের সদস্যরা প্রত্যেক রোগীর অবস্থা দেখেছেন। চিকিৎসাধীন পাঁচজনের মধ্যে শাহরিন আহমেদকে অপারেশন করা হতে পারে। তার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে তাকে অপারেশন করা হবে। কোন রোগীকেই প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তারা মানসিক সমস্যায় পড়তে পারেন এবং স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যাহত হতে পারে। চিকিৎসাধীন সব রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান ডাঃ সামন্ত লাল সেন। মেডিক্যাল টিমের অন্য সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোগীরা যতটুকু আঘাত পেয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভীত সন্ত্রস্ত। তাদের মনে আতঙ্ক রয়ে গেছে। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দেয়া হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছে মেহেদী। তেমন শারীরিক আঘাত না পেলেও ভীতসন্ত্রস্ত রয়েছে স্বর্ণা। এ্যানি ও রুবায়েত দু’জনই শরীরের ডান পাশে আঘাত পেয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত রোগীরা ভাল আছেন। উল্লেখ্য, ২ মার্চ সোমবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ মডেলের উড়োজাহাজ। এ ঘটনায় ৫১ যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশী। এ দুর্ঘটনায় আহত হন ১০ বাংলাদেশী। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। ১৫ মার্চ আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম দেশে আনা হয় শেহরিন আহমেদ নামের এক যাত্রীকে। এরপর শুক্রবার দেশে ফিরে আসেন আহত তিন যাত্রী গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা সৈয়দ কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন নাহার এ্যানি ও মেহেদী হাসান। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
×