ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিনিয়র সিটিজেনদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়ার কাজ শুরুই হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ মার্চ ২০১৮

সিনিয়র সিটিজেনদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়ার কাজ শুরুই হয়নি

তপন বিশ্বাস ॥ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রায় এক বছরেও সিনিয়র সিটিজেনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সব সুবিধা দেয়ার কথা তার একটি নিয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করার কথা থাকলেও তা গঠিত হয়নি। এমনকি প্রবীণদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া সরকারীভাবে জেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক প্রবীণনিবাস তথা আবাসন নির্মাণের কথা থাকলেও তা শুরু হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করে প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের উদ্যোগ নেয়া, মেডিক্যাল কলেজে এবং হাসপাতালসমূহে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন (জ্বরাবিজ্ঞান) কর্নার খোলার ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, কোন কাজই শুরু করা যায়নি। এমনকি এ খাতের বরাদ্দও ব্যয় হয়নি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে কাজ এগুচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে আইডি কার্ডের আদলে বিশেষ কার্ড তৈরি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাতে রাজি হয়নি। সিনিয়র সিটিজেনরা বিশেষ মর্যাদা ভোগ করবেন। বিশেষ করে তারা চিকিৎসা সেবায় পাবেন বাড়তি সুবিধা। ভ্রমণের সময় গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া এবং সিট সুবিধা পাবেন। ভবিষ্যতে সরকারী বেসরকারী আবাসিক ভবনে তাদের বসবাসের জন্য বিশেষ সুবিধা অর্থাৎ তারা যেন সহজে যাতায়াত করতে পারেন সেই ধরনের গোসল ও বাথরুম সুবিধা রাখতে হবে। শিক্ষিত, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সিনিয়র সিটিজেনদের কাছ থেকে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের কর্মকৌশল প্রণয়নে সরকারীভাবে নেয়া হবে পরামর্শ। বিনিময়ে তাদের দেয়া হবে বিশেষ ভাতা। এর কোনটিই শুরু হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্মসচিব বলেন, প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটির ওপর নাগরিক সমাজের মতামত নেয়ার জন্য তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই মূহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলা ঠিক হবে না। চূড়ান্ত আইন প্রণয়নের পর এ বিষয়ে কথা বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েই প্রবীণরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন কি না তা দেখার জন্য রোগীকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে খোঁজ খবর নিচ্ছি। জেলাপর্যায়ে কিছু কাজ হচ্ছে। পাইলট আকারে কাজগুলো চালু করা হয়েছে। ভাল হলে দেশের সব জেলায় চালু করা হবে। প্রণীতব্য প্রবীণ উন্নয়ন আইন অনুসারে জেলায় জেলায় প্রবীণবান্ধব ব্যায়ামাগার ও প্রবীণদের জীবন মান উন্নয়নের ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাঠ্যক্রম ও ব্যায়াম চর্চা চালু করার কথা ছিল। দুর্যোগকালীন সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবীণদের সহায়তা করা হবে না। পর্যায়ক্রমে প্রবীণদের জন্য ইউনির্ভাসেল নন কন্ট্রিবিউটরি পেনশন স্ক্রিম চালু করার কথা ছিল। কথা ছিল প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল গঠনের। সরকারী মঞ্জুরি দেশের ভেতরে বিভিন্ন উৎস বিশেষ করে দান-অনুদান অথবা ঋণ থেকে তহবিল গঠন করা যাবে। সরকারী অনুমোদন সাপেক্ষে বৈদেশিক অনুদান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান নিয়ে এ তহবিল গঠন করা যাবে। এছাড়া ফাউন্ডেশন বিনিয়োগ ও সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় ও রয়্যাটি এবং অন্যান্য আয় থেকে তহবিল গঠন করা যাবে। কিন্তু এর কোনটিই শুরু করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ষাট ও ষাটোর্ধ্ব নারী পুরুষ রয়েছে। তাদের অনেকেই দারিদ্র্য সীমার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে সরকারীভাবে ২৭ লাখ ২৩ হাজার জনকে মাসিক ৩শ’ টাকা করে বয়স্কভাতা দেয়া হচ্ছে। ভাতার টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। বিপুলসংখ্যক প্রবীণ ব্যক্তি সরকারী সীমাবদ্ধতার কারণে ভাতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারী হিসেবে, বর্তমানে দেশে মানুষের গড় আয়ু ৬৯ দশমিক ০৪ বছর। অর্থাৎ ষাট বছর বয়স হলেই কেউ আর কোন বিষয় কাজ করতে পারবেন না এমন নয়। সুতরাং প্রবীণদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের যোগ্যতা অনুসারে অতীত জীবনে যিনি যে পেশায় কাজ করেছেন তার কাছ থেকে সে বিষয়ে পরামর্শ নেবে সরকার। যিনি যে পেশায় কাজ করেছেন তাকে সে কাজের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। বিনিময়ে তিনি পাবেন বিশেষ সম্মানী। প্রবীণদের জন্য লঞ্চ, নৌকা, বাস, ট্রেন ও বিমানে রিজার্ভ সিট রাখা হবে। তারা অর্ধেক ভাড়ায় অর্থাৎ ১শ’ টাকা ভাড়া হলে তারা ৫০ টাকায় ভ্রমণ করবেন। অনেক প্রবীণ অর্থ কষ্টের কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিস, কিডনি ডিজিসের মতো মারাত্মক রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন থেকে তাদের এসব রোগের চিকিৎসা দেয়া হবে। তাদের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা কর্নার খোলা হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেজিয়েট্রিক মেডিসিন বিভাগ রয়েছে। আমাদের প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসার জন্যও আলাদা সিট বরাদ্দ রাখা হবে। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক প্রবীণদের চিকিৎসা দিতে বাধ্য থাকবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থ বছরের বাজেটে প্রবীণ সিটিজেনদের বিশেষ চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশের বৃহৎ হাসপাতালগুলোতে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ তহবিল আরও বহুগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সরকারী ও বেসরকারী আবাসন প্রতিষ্ঠানকে বাসাবাড়ি নির্মাণের সময় প্রতিটি বাসায় একটি করে প্রবীণ কক্ষ নির্মাণের বাধ্যবাদকতা আরোপ করা হবে। ওই কক্ষটি শুধুমাত্র পরিবারের প্রবীণ সদস্যই ব্যবহার করবেন। সহজে টয়লেটে যাতায়াতের সুবিধা, লেখাপড়া, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের সুযোগ থাকবে বিশেষ ওই কক্ষটিতে। প্রবীণদের মধ্যে একেবারেই অসহায় এমন ব্যক্তিদের সরকারী শিশু পরিবারে আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। তারা শিশু পরিবারের ওল্ড হোমে বসবাস করবেন। বর্তমানে দেশের ৫০টি জেলায় বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। সরকার শীঘ্রই ৬৪ জেলায় বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন করবে বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
×