ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিভুবন ট্র্যাজেডি ॥ মরদেহ আসছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ মার্চ ২০১৮

ত্রিভুবন ট্র্যাজেডি ॥ মরদেহ আসছে আজ

আজাদ সুলায়মান ॥ ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ আজ আসছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে- বিমানবাহিনীর বিশেষ প্লেনে সোমবার বিকেল ৪টায় মরদেহগুলো বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটি, কুর্মিটোলায় পৌঁছাবে। এদিকে নেপালে রবিবার নতুন করে আরও ৪ বাংলাদেশী মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২১ বাংলাদেশীর মরদেহ শনাক্ত করা হলো। নতুন করে শনাক্তরা হলেন- উম্মে সালমা, আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার ও শারমিন আক্তার। নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ মেডিক্যাল টিমের প্রতিনিধি দলের সদস্য ডাঃ সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান-এসব মরদেহ এক সঙ্গে দেশে পাঠানো হবে। এছাড়া আরও দু’জনের মরদেহ শনাক্তের পথে রয়েছে। এরা হলেন- নজরুল ইসলাম ও এফ এইচ প্রিয়ক। অবশিষ্ট যে তিন বাংলাদেশীর ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে তারা হলেন- নাজিয়া আফরিন, পিয়াস ও আলিফুজ্জামান। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত শাহীন ব্যাপারি নামে একজনকে রবিবার বিকেলে ইউএস-বাংলার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে প্লেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৬ বাংলাদেশী দেশে ফিরলেন। এ ঘটনায় নিহত সাতটি পরিবারের ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ ল্যাব। এদিকে রবিবার সকালে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এ দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী। তাকে গতকালই রাজধানীর একটি হাসপাতালে জরুরী অপারেশন করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নেপালে অবস্থানরত ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফও জানিয়েছেন, সোমবার এয়াফোর্সের বিশেষ এয়ারক্রাফটে মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগে তাদের স্বজনদের ইউএস-বাংলার এয়ারক্রাফটে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি জানান- কাঠমান্ডুর ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছেন, রবিবার বিকেল ৪টার মধ্যে শনাক্ত হওয়া ১৭টি লাশ ও আরও যেগুলো শনাক্ত করা হবে সেগুলোসহ সব মরদেহের গোসলসম্পন্ন করে কফিনে তোলা হবে। আজ (সোমবার) সকাল ৬টায় মরদেহের জানাজা হবে নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। তারপর বিমানবাহিনীর বিমানে লাশ দেশে পাঠানো হবে। শনাক্ত হওয়া লাশের স্বজন ও বাংলাদেশী ডাক্তাররা ইউএস-বাংলার একটি বিশেষ ফ্লাইটে আজ ঢাকা ফিরবেন। জানা গেছে, এ দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে এসব মরদেহ উপস্থিত স্বজনদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শনিবার রাতে সন্ধ্যায় ওই হাসপাতালের মহারাজগঞ্জ ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন-এর সামনে ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে ১৪টি মরদেহের পরিচয় জানান হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। এ সময় বাংলাদেশী মেডিক্যাল টিমের সদস্য ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আরও তিনজনের পরিচয় জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল টিমের সদস্য ডাঃ ইমাম হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনাক্ত হওয়া নিহত বাংলাদেশীরা হচ্ছেন ঃ অনিরদ্ধ জামান, তাহিরা তানভীন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, রাকিবুল হাসান, মতিউর রহমান, রফিক উজ জামান, তামারা প্রিয়ংময়ী, আকতার বেগম, হাসান ইমাম, এসএম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ ও কেবিন ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ। ৭ পরিবারের নমুনা সংগ্রহ এ ঘটনায় নিহত সাতটি পরিবারের ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ ল্যাব। রবিবার সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শারমিন জাহান জানান- মরদেহগুলো যেন সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় সেজন্য স্বজনদের এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত দুইদিনে সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে স্বজনদের নমুনা নেয়া হয়েছে। বাবা-মা আর ভাই-বোন ছাড়াও পরিবারের স্বজনদের কাছ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ টেস্টের পর নিহতদের সঙ্গে তা ম্যাচিং করা হবে। আবিদের স্ত্রী হাসপাতালে এদিকে নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানার মাথার ডানপাশে রক্ত জমাট বাঁধার পর জরুরী অপারেশন করা হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার অপারেশন করা হয়। এরপর অবজারভেশনের জন্য তাকে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তাররা বলছেন-অপারেশন সাকসেসফুল হলেও তিনি শঙ্কামুক্ত নন। হাসপাতালটিতে উপস্থিত ছিলেন আফসানার স্বজন শামীমা নার্গিস। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবত ভালই ছিলেন। কিন্তু রবিবার ভোরে আমাকে তার বোন ফোন করে দ্রুত বাসায় যেতে বললেন। বাসায় যাওয়ার পর তিনি বললেন, আফসানা কথা বলতে পারছেন না, হাত-পা নেতিয়ে পড়েছে। আমরা তাকে নিয়ে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার বলেন নিউরোসায়েন্সে নিতে। পরে সকাল ৮টার দিকে এখানে আনি। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তাররা বোর্ড গঠন করে সাড়ে নয়টার দিকে অপারেশন করেন। ডাক্তার এখন বলছেন, তিনি ভাল আছেন। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ডাক্তার শিরাজী শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আফসানার অপারেশন করানো হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রোগীকে এখানে আনা হয়। পরে দ্রুত তার সিটি স্ক্যান করি। দেখি তার মাথার ডানপাশে রক্ত জমে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করানোর জন্য অপারেশন করি। এক ঘণ্টায় অপারেশন শেষ হয়। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে অবজারভেশনের জন্য। তবে তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। আগামী এক সপ্তাহ তাকে অবজারভেশনে রাখতে হবে। তিনি ধীরে ধীরে আরও ঝুঁকিমুক্ত হবেন বলে আশা করছি। গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ওই উড়োজাহাজাটিতে চারজন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৪৯ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিমানটির ৪ জন ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশী, ২২ জন নেপালী ও চীনের একজন যাত্রী রয়েছেন। আহত ২২ জন আরোহীর মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী, ১১ জন নেপালী ও একজন মালদ্বীপের।
×