ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার টার্গেট ইউরোপ

সিঙ্গাপুর-তাইওয়ানে যশোরের কপি

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৯ মার্চ ২০১৮

সিঙ্গাপুর-তাইওয়ানে যশোরের কপি

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কৃষি বিভাগের তদারকিতে যশোরে উৎপাদিত আন্তর্জাতিকমানের বাঁধাকপি রফতানি হলো বিদেশে। পানি পথ দিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে গেল ৩৮ লাখ কেজি কপি। যার মূল্য প্রায় দু’কোটি টাকা। এ অঞ্চলে বাঁধাকপির দাম কমে যাওয়ায় মুহূর্তেই তা রফতানি হলো। আর বৈদেশিক মুদ্রা পেয়ে খুশি যশোর সদর উপজেলার ১শ’ ৬২ জন কৃষক। রাজধানী ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেড, পালগন রিসোর্স ও মাছাহা এগ্রো লিমিটেড যশোরের চুড়ামনকাটি এলাকায় ওয়ার হাউজ ও ফ্যাক্টরি স্থাপন করে কৃষকদের এই কপি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি করেছে। এবার টার্গেট রয়েছে শুধু বাঁধাকপি নয়, অন্যান্য সবজিও রফতানি করা হবে। এছাড়া সবজি রফতানিতে জোর দেয়া হবে ইউরোপের বাজার ধরতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর সদরের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর-নবেম্বর মাসে বিশেষ পরিচর্যার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিকমানের বাঁধাকপি রফতানি শুরু হয়। এভাবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ১০টি চালান রফতানি হয়েছে। আরও কয়েকটি চালান পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মূলত চলতি বছরের সবজি মৌসুম আসার আগেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে চাহিদা মোতাবেক যশোরের চাষীদের সঙ্গে চুক্তি করেন ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেড। তারা যশোর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করে। সবজি মৌসুমে ২৫ লাখ পিস বাঁধাকপি রফতানি করার জন্য কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। পরিবহন ও প্রসেসিং খরচ কমিয়ে সরাসরি মাঠে চলে যায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের আওতায় আনা হয় হৈবৎপুর, চুড়ামনকাটি, লেবুতলা ও কাশিমনগরের ১শ’ ৬২ কৃষককে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল নানা সাপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাঁধাকপি তৈরি করা হয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক এক একটি কপির ওজন কমপক্ষে দেড় কেজি করা হয়। যশোর সদর উপজেলা কৃষি অফিস আন্তর্জাতিকমানের কপি উৎপাদন হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র প্রদানও করে। ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেডসহ আটটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই প্রত্যয়নের আলোকে কপি সংগ্রহ করে। এরপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যশোরের উৎপাদিত কপি রফতানি হলো। আর এই কপি রফতানির মধ্যে দিয়ে কৃষি বিভাগের নানা সাফল্যকে ছাপিয়ে বড় সুখবর আনল। বৈদেশিক মুদ্রায় বিশাল খুশি হলেন কৃষকেরা। কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের উচ্চ মূল্যের ফসলের তালিকায় বাঁধাকপিতে পৌঁছে যাওয়ায় হৈচৈ পড়ে গেছে গোটা কৃষি সেক্টরে। এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ গৌতম কুমার শীল জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানসম্মত সবজি তথা বাধাকপি উৎপাদন সরাসরি মনিটরিং করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ কাজ এগিয়েছে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট শতভাগ সফল হয়েছে। আর তাতে ভিন্নমাত্রা যুগিয়েছে বিদেশে কপি রফতানি। তাও আবার যশোর থেকেই। দেশের মধ্যে যশোর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে বাঁধাকপি রফতানি গৌরবের বিষয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে যশোর, তথা সারাদেশের বাঁধাকপি নিঃসন্দেহে উচ্চ মূল্যের সবজি হিসেবে সমধিক পরিচিতি পাবে। তিনি আরও জানান, বাঁধাকপি ছাড়াও আগামীতে বেগুন, ফুলকপি, টমেটো, শিম, করলা, উচ্ছে, পেঁপে, আলু রফতানিতে প্রাধান্য পাবে। আর আগামী বছরের টার্গেট ইউরোপের দেশগুলো। ইউরোপে সবজি ঢুকলে দাম আরও বেশি পাওয়া যাবে। পোকামাকড়বিহীন সবজি চাচ্ছে তারা। সে দিকটিতেও সতর্ক দৃষ্টি দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
×