ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক ঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা

ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত উনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৯ মার্চ ২০১৮

ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত উনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনে হচ্ছে পরমাণু বোমার মজুদ ধ্বংসে পিয়ংইয়ংকে সম্মত করাতে পারবেন বলে তিনি ভাবছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন এ ধরনের কিছুই বলেননি। তিনি ভাবছেন, ট্রাম্প পরমাণু শক্তিসম্পন্ন দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়াকে স্বীকার করে নেবেন। তাদের আগামী বৈঠকে এ সংক্রান্ত কোন ভুলের সূত্রপাত হতে পারে কি? এ দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের লক্ষ্য পোষণ করে আসছে উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে। এ বৈঠক হবে স্বীকৃতির চূড়ান্ত প্রতীকী এবং উত্তর কোরিয়ার জন্য মীমাংসার মধ্য দিয়ে এক বৈধতার সূচনা। বিল ক্লিনটন তার প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শেষের মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী সীমিত করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণে পিয়ংইয়ং সফরের কথা ভেবেছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। তা আর হয়ে ওঠেনি। ক্লিনটন উত্তর কোরিয়া সফর করেছিলেন ২০০৯ সালে। যদিও ঐ সফর ছিল আটক দুই মার্কিন সাংবাদিকের মুক্তির লক্ষ্যে। সাবেক উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং ইল মারা যাওয়ার আগে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য কান্ট্রি আই স’য়ে তুলে ধরা হয়েছে যে, পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে বলেই ক্লিনটন উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। তাই ট্রাম্প যখন শীর্ষ বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন, তখন তিনি অজ্ঞাতসারে নিজেকে হয়তো ‘দ্য কান্ট্রি আইস’ সিরিজের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীর পক্ষে প্রচারের আরও একটি অংশে সম্পৃক্ত করছেন। পিয়ংইয়ং সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পরীক্ষা চালিয়েছে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভূখ-ে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এ বিষয়টা ভেবেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন এবং উত্তর কোরিয়াকে একটি পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছেন। ট্রাম্প কিমকে ‘লিটল রকেট ম্যান’ বলে পরিহাস করতে পারেন। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছামূলকভাবে কিমের সঙ্গে একটা সুখকর সমাপ্তি টানতে চাইছেন। উত্তর কোরিয়া চাইছে একটি শীর্ষ বৈঠক হোক, এটা নিশ্চিত। কিন্তু ট্রাম্পের স্টাফকে মনে হয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্টকে বলতে ইচ্ছুক নন যে, উত্তর কোরীয়রা ক্লিনটন প্রশাসনের পর থেকে ক্ষমতাসীন কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর চেয়েছে। এ স্টাফ প্রেসিডেন্ট হয়তো এ কথাও বলেননি যে, উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী ত্যাগের কোন আভাস দিয়েছে। কিছুসংখ্যক মার্কিন রক্ষণশীল উদ্বেগে রয়েছেন যে, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। তাদের বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পকে প্রতারিত করবে। তাদের আশঙ্কা, হাজার হাজার উত্তর কোরীয় প্ল্যাকার্ড ও ট্রাম্পের ছবি নিয়ে স্টেডিয়ামে তাকে যখন সংবর্ধনা জানাবে তখন আনন্দাপ্লুত হয়ে সেখানেই তিনি পরমাণু ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়াকে স্বীকার করে নেবেন এবং বলবেন, কোরীয় উপদ্বীপের এ অর্ধেক অংশের পুরো অধিকার রয়েছে এ স্বীকৃতি পাওয়ার। স্টাফ বলেছেন, তা মন্দ হবে না। আমি অনেক দিন ধরেই যুক্তি দেখাচ্ছি যে, পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন উত্তর কোরিয়া একটি বাস্তবতা। তাই আমাদের তা মেনে নেয়া উচিত, অন্তত একান্তে। এটাই সর্বোৎকৃষ্ট পথ। তারপরও ট্রাম্প অপটুতার সঙ্গে তা করতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এখন পারমাণবিক দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আপোস মীসাংসায় আসা প্রয়োজন ঠিক যেমন সিদ্ধান্ত চীনের ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য, উত্তর কোরিয়া এরপর চীনের মতো নিজেকে সংস্কার করে নেবে। অবশ্য আমরা দেখেছি চীনে সংস্কার ও খোলামেলা নীতি সীমিত। কিন্তু মোটের ওপর এ সিদ্ধান্তে বিশ্ব অনেকটা নিরাপদ হবে। কিন্তু, যদি এ রকমটা না হয়? ট্রাম্প যদি বিভ্রান্ত হয়ে ভাবেন যে, তিনি কিম জং উনের বোমাকে তুলে নিতে চাচ্ছেন? হঠাৎ করে তিনি যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি দু’পক্ষের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। তিনি এ কূটনীতির গুরুত্বকে সন্দেহের চোখে দেখে এ শীর্ষ বৈঠককে ব্যবহার করতে পারেন। আমরা এর মধ্যেই দেখতে পেয়েছি। মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম কিমকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, তিনি ট্রাম্পকে ঠকানোর চেষ্টা করলে তা আপনার ও আপনার প্রশাসনের শেষ পরিণতি ডেকে আনবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ১৯৯৪ সালের পরমাণু চুক্তি ভেঙ্গে দেয়ার স্থপতি জন বোল্টন বলেছেন, সফর ব্যর্থ হবে। দেখা যাবে, কূটনীতি নৈরাশ্যে পরিণত হয়েছে এবং আমাদের হয়তো সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং প্রেসিডেন্ট নিজে অশুভ বিকল্প সম্পর্কে সতর্ক করেছেন যদি তার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তা হলে, এ ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিষয়ে কেন এত মানুষ উত্তেজনা প্রকাশ করছে? সম্ভবত, কারণ হচ্ছে, কয়েক মাস আগে যে পরিস্থিতির দিকে বিশ্ব যাচ্ছিল তা ভেবে এবং আবারও তিক্ততার সৃষ্টি হলে ট্রাম্প কী করবেন। ভেবে আমরা যৌথভাবে ভীত হয়ে পড়েছি। দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে ট্রাম্পকে তোষামোদ করার জন্য বেশ কাজ করে যাচ্ছে। দেশটি বলেছে, এটা তার চাপ, কিমের অস্ত্র নয়। -খবর ওয়ার্ল্ড পোস্ট অনলাইনের
×