ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৮ মার্চ ২০১৮

বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ

দেশে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশের পণ্য ও সেবা উভয় বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। একইসঙ্গে রফতানি আয়ের পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে এক হাজার ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে; ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আমদানির এ প্রভাব উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগে পড়লে তা অর্থনীতির জন্য ভাল। তবে এ অর্থ যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে ফল অত্যন্ত ভয়াবহ। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ১০৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ১২ কোটি ৩০ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরজুড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার (-) ঋণাত্মক হয়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোন ঋণ করতে হচ্ছে না। ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্ত থাকলেও গেল অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে যায়। জানুয়ারি শেষেও অব্যাহত রয়েছে। দেশে-বিদেশী বিনিয়োগেও কিছুটা ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে মোট ১১০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৩ কোটি ডলার। তবে উক্ত সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বেশকিছু বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানিতে অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আমদানি যেভাবে হয়েছে সেই হারে রফতানি বাড়েনি। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেছেন, আমাদের দেশে সব সময় বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। তবে এখন তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মূল কারণ একদিকে রফতানি আয় বাড়ছে না, অন্যদিকে দীর্ঘদিন রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব। সম্প্রতি রেমিটেন্স কিছুটা বাড়লেও যে হারে কমেছে সেই হারে বাড়েনি। বাণিজ্য ঘাটতির এ নেতিবাচক ধারা সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। কারণ এটি অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) ওপর প্রভাব পড়বে; এক্সচেঞ্জ রেট বেড়ে যাবে। ফলে টাকার অবমূল্যায়ন বাড়বে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোন ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল। গত দুই অর্থবছরে উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ঋণাত্মক ধারা চলছে। যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বেড়েছে সেবাখাতেও বাণিজ্য ঘাটতি। গত অর্থবছরে সেবাখাতে বিদেশীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৬৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৩৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল (ঘাটতি) ২৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ১৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা আগের বছরে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই বেড়েছে ৩২ দশমকি ৭৬ শতাংশ।
×