ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা

ফয়জুরকে আজ আদালতে নেয়া হবে, জবানবন্দী দিতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ মার্চ ২০১৮

ফয়জুরকে আজ আদালতে নেয়া হবে, জবানবন্দী দিতে পারে

শংকর কুমার দে ॥ বিশিষ্ট লেখক ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টায় তার ওপর হামলার মামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজী হয়েছে গ্রেফতার করা হামলাকারী ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়জুর। আজ রবিবার ফয়জুরকে দশ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠান হবে। আদালতে পাঠানোর পর একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টায় তার ওপর হামলার বর্ণনা করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হয়েছে হামলাকারী ফয়জুর। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী ফয়জুরকে গত ৮ মার্চ আদালত থেকে দশ দিনের রিমান্ড এনে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ রবিবার তার রিমান্ডের মেয়াদ শেষে আদালতে পাঠান হচ্ছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হয়েছে হামলাকারী ফয়জুল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিবে এমনটাই বলেছে ফয়জুর। তবে আদালতে পাঠানোর পর যদি কোনভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী না দেয়ার জন্য বেঁকে বসে তাহলে তাকে আবারও রিমান্ডে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তবে ফয়জুর হাসানের ভাই রিমান্ডে থাকা এনামুল হাসান এখনও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের হেফজতে। তাকে আগামী ২০ মার্চ আদালতে পাঠান হতে পারে। হামলাকারী ফয়জুরের বাবা মাওলানা শফিকুর রহমান ছেলের জঙ্গী তৎপরতার সম্পর্কে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়ার পর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে হামলাকারী ফয়জুরের মা মিনারা বেগম ও মামা ফজলুল রহমানও। হামলাকারী ফয়জুল হাসানের পরিবারের বলয়কে ঘিরে তদন্ত অব্যাহত আছে। কিন্তু হামলার ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও হামলাকারীর পরিবারের বলয়ের বাইরে আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনাটির রহস্য উন্মোচনে পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট একযোগে কাজ করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, হামলাকারী ফয়জুরকে দশ দিনের রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, জাফর ইকবালকে হত্যার জন্য ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ নামে উগ্রবাদী ফোরামের বা গ্রুপের নির্দেশে হামলা করেছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ ইলাল্লাহ নামের ফোরামটিতে তার সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হতো সহযোগীরা। দাওয়াহ ইলাল্লাহ নামে একটি উগ্রবাদী ফোরামের নির্দেশনায় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে স্বীকার করেছে হামলাকারী ফয়জুর। জাফর ইকবালকে হত্যা করা নিয়ে ওই গ্রুপে বা ফোরামে নিয়মিত আলোচনাও হতো বলে জানিয়েছে সে। ওই গ্রুপ বা ফোরাম থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর ফয়জুর সিলেটের মদিনা মার্কেটের একটি জিমে শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্যও ভর্তি হয়েছিল। শারীরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে হামলা করতে হবে এবং কোথায় আঘাত করলে দ্রুত মৃত্যু হতে পারে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে সেসব কৌশল নিয়েও আলোচনা করা হয়েছিল। ফয়জুর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, সে দাওয়াহ ইলাল্লাহ নামে একটি ফোরামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওই ফোরামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নাস্তিক আখ্যায়িত করে তাকে কীভাবে হত্যা করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। ফয়জুর নিজে থেকে জাফর ইকবালকে হত্যার দায়িত্ব নেয়। এরপর জাফর ইকবালকে কীভাবে হত্যা করা হবে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে ফয়জুরকে সেসব বিষয়ে ভার্চ্যুয়াল আলোচনার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফয়জুরকে শেখান হয় মাথা এবং ঘাড়ের পেছনে আঘাত করতে হবে। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই টার্গেট মৃত্যু হবে। জাফর ইকবালকে হত্যার জন্য হামলার চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর সিলেটের জিন্দাবাজারের আল-হামরা মার্কেটের একটি দোকান থেকে কমান্ডো নাইফটি (চাকু) কেনে ফয়জুর হাসান। প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সে জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়েই কমান্ডো নাইফ নিয়ে আঘাত করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরি নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায় মাদ্রাসা ছাত্র ফয়জুর। ঘটনার পরপরই তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে প্রথমে রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল ও পরে সিলেটের জালালাবাদ সিএমএইচে চিকিৎসা দেয়ার পর ফয়জুরকে পুলিশে সোপর্দ করে র‌্যাব। পরে পুলিশ তাকে ভর্তি করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় ফয়জুরসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে গত ৪ মার্চ সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে অনেকবার। এ কারণে তাকে পুলিশী নিরাপত্তা দেয়া হলেও তার মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটায় সারাদেশে চলছে প্রতিবাদের ঝড়। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী ফয়জুর হাসান বলেছে, সে মনে করে জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’। জাফর ইকবাল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত ১৪ মার্চ সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন এবং পরের দিন ১৫ মার্চ ঢাকায় ফিরে এসে চিকিৎসকের পরামর্শে বর্তমানে বিশ্রামে আছেন।
×