ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমপক্ষে ২৪ জেলায় কনসালট্যান্ট পদ সৃষ্টি জরুরী ॥ অভিমত বিশেষজ্ঞদের

বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টের অভাবে সঠিক রিপোর্ট মেলে না, প্রতারিত রোগী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৭ মার্চ ২০১৮

বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টের অভাবে সঠিক রিপোর্ট মেলে না, প্রতারিত রোগী

নিখিল মানখিন ॥ বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের অভাবে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয়ের সঠিক রিপোর্ট পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ সেক্টরে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির সঙ্কট রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ শাখাকে আরও আধুনিকীকরণ ও কার্যকর করে তোলা দরকার। প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট প্রেরণের জন্য ২৪ জেলায় কনসালট্যান্ট পদ সৃষ্টি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের সংখ্যা মাত্র ১৮০। সাইনবোর্ড সর্বস্ব অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়েই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তাদের মনগড়া রিপোর্টে নিরীহ মানুষদের হয়রানি হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, একই পরীক্ষায় একেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। তাই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট সৃষ্টিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার। সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এএন নাসিমউদ্দিন আহমেদ জানান, সঠিক রোগ নির্ণয়ের ওপর রোগীর মানসম্মত চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করে। রোগ নির্ণয়ের রিপোর্ট সঠিক না হলে একজন চিকিৎসকের পক্ষেও যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই চিকিৎসা সেক্টরে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করছে সরকার। কোন প্রতিষ্ঠান তা না করলে এক বছর কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা অর্ধদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্য তালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিরাপদ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ এখনো চলছে। তালিকা তৈরির পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগ এ অভিযান পরিচালনা করছে। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জনসাধারণকেও সোচ্চার হতে হবে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তিনি বলেন, দেশে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্টের সঙ্কট রয়েছে। এই সুযোগে তথাকথিত অনেক অদক্ষ ও ভুয়া টেকনিসিয়ান দিয়ে অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয়ের কাজ পরিচালিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান জানান, এমনিতেই দেশের অনেক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন অবস্থায় রোগ নির্ণয়ের জায়গাটি ত্রুটিপূর্ণ হলে দক্ষ চিকিৎসকদের পক্ষেও প্রত্যাশিত মানের চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হবে না। সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে দক্ষ ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট তৈরিতে হাত দেয়া উচিত। আর তা না হলে ভুল রিপোর্টের কারণে চিকিৎসাসেবা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
×