ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৭ মার্চ ২০১৮

এবার পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মার বুকে এবার চতুর্থ স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ‘৭ই’ নম্বর স্প্যানটি এখন ওয়ার্কশপের পেন্টির শেডে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এটি নেয়ার পর থেকেই রং করার আগের কাজগুলো করা হয়েছে। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শ্রমিকরা মেশিনে বিশাল স্প্যানটির ঘষামাজা করছে। সোনালি রঙের এই স্প্যানে গেন্ডিং মেশিন দিয়ে জোড়া লাগানো স্থানগুলো আরও ফিনিশিং করা হচ্ছে। আরেক পাশে মেশিনে লোহার গুঁড়া দিয়ে সেন্ড ব্রাস্টিং করা হচ্ছে। অর্থাৎ সেন্ট দানা দিয়ে ডাস্ট বা মরিচা মেশিনে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এরপরই সোনালি রঙের স্প্যানটিকে পরিণত করা হবে ধূসর রঙে। এছাড়া এই স্প্যানটি বহনের জন্য ৩৬শ’ টন ওজন বহনের ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনের জাহাজটিও বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের জেডির অপর প্রান্তে নোঙ্গর করা হয়েছে। রঙের কাজ শেষ হলেই ‘৭ই’ নম্বর স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যায় ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটিতে। এই খুঁটির ওপরই বসবে ৪র্থ স্প্যান। ৪১ নম্বর খুঁটিও স্প্যান বসানোর উপযোগী করা হচ্ছে। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৩৯ নম্বর খুঁটিতে ২য় ও তৃতীয় স্প্যান (৭বি ও ৭সি নম্বর স্প্যান) জোড়া লাগানোর জন্য ওয়েডিং করা হচ্ছে। আর এই দু’স্প্যানের এই অংশের ভার বহন করে আছে লিফটিং ফ্রেম (স্প্যানকে ঝুলন্ত রাখার কাঠামো)। এর আগে এই লিফটিং ফ্রেম আট কোণ ছিল ৩৮ নম্বর খুঁটির সঙ্গে। সেখানে ১ম ও ২য় স্প্যানের (৭এ ও ৭বি নম্বর স্প্যানের অপর প্রান্ত) ভাড় বহন করেছিল এই লিফটিং ফ্রেম। ওয়েডিং করে জোড়া লাগানোর পর এটি এখানে সরিয়ে আনা হয়। সেই ভাবেই ৩৯ নম্বর খুঁটির জোড়া লাগানোর পর এটি সরিয়ে আনা হবে ৪০ নম্বর খুঁটিতে। এখানেই লিফটিং ফ্রেমটি তৃতীয় স্প্যানের অপর প্রান্ত এবং ৪ নম্বর স্প্যানের এক প্রান্তের জোড়া লাগানোর জন্য ভারবহন করবে। এছাড়া সেতুর সর্বশেষ ৪২ নম্বর খুঁটির দ্রুত উঠে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চতুর্থ স্প্যান লাগাতে ৪২ নম্বর খুঁটিও উপযোগী হয়ে যাবে। তাই ৫ম স্প্যান অর্থ্যাৎ ৭-এফ স্প্যান বসবে এই ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটিতে। বসন্তের দুপুরে বিশেষ পরিবেশ তখন। রোদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে পদ্মার সামান্য ঢেউ টলমলে পানি। পাশে বিস্তৃর্ণ চরের রাখালের গরু নিয়ে ব্যস্ততা। আর কৃষক ব্যস্ত ফসল নিয়ে। আর নদীতে হরেক রকম নৌযান চলছে। এরই মাঝে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ যেন একাকার। এখানকার মানুষের কাছে এই পরিবেশ এখন অতি পরিচিত। কিন্তু অনেকে যারা এই পথে নতুন তারা বিশাল এই কর্মযজ্ঞ দেখে বিস্মিত। ভারি ভারি অসংখ্য যন্ত্রপাতি আর জাহাজ, নানা রকমের নতুন নতুন এসব উপকরণ কৌতুহলের সৃষ্টি করে। ঢাকা থেকে সপরিবারে আসা নজরুল ইসলাম তাই এসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন করছিল। সেখানে থাকা প্রকৌশলীরা তাকে বুঝিয়ে বলছেন। আর সেখানে কর্মরত গাইবান্ধার সবুজ মিয়া এবং মাওয়ার কালু মোল্লা জানান, সেতু যে এত দ্রুত এগিয়ে যাবে তা প্রথমে ভাবিনি। তাই সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় এখন আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। তাই শুক্রবার বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায় ৭-এফ স্প্যানটিও রং শেডের কাছেই রাখা। ৭ই নম্বর স্প্যান রং করা শেষ হলেই এটি শেডে প্রবেশ করানো হবে রঙের জন্য। এছাড়া শেডের পাশে ৬ই নম্বর স্প্যানও ফিটিং করে রাখা হয়েছে। এটি বসবে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটিতে। এর ওপারে পূর্ব দিকে ফিটিংয়ের কাজ চলছে আরও চারটি স্প্যান। এছাড়া ওয়ার্কশপের শেডের বাহিরে ফিটিং করে রাখা হয়েছে আরেকটি স্প্যান। এই স্প্যানটিই প্রথম চীন থেকে এসেছিল। এটির মডিইল ১এফ। এটি স্থাপনের কথা ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে। কিন্তু নদীর তলদেশের গভীরের মাটির কিন্তু খুঁটি প্রস্তুত করতে প্রকল্প এলাকায় ১৩টি স্প্যান এসেছে। এর মধ্যে বসে গেছে ৩টি। আরও ১০টি এখন ওয়ার্কশপে। এছাড়া আরও ১৬টি স্প্যান চীনে তৈরি হয়েছে। এর একটি পথে রয়েছে। বাকি ১২টিও আশার অপেক্ষায়। পাশের টিউব তৈরির ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায় এই ওয়ার্কসটি প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছে। পাইলিংয়ের তিন মিটার ডায়ার (প্রায় ১০ ফুট) টিউব তৈরির ৮৫ শতাংশই সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন বাকি ১৪টি খুঁটির ডিজাইন অনুমোদনের পরই তৈরি করা হবে। ওয়ার্কশপ থেকে বেরুবার পথে উত্তর পাশে কাজ চলছে রেলের স্লাভ তৈরির। স্প্যানের মধ্যে এই স্লাভ বসানো হবে। প্রায় ৩ হাজার এই স্লাভের মধ্যে ৩শ’ স্লাভ তৈরি হয়ে গেছে বলে দায়িত্বশীলরা জানান। এর সঙ্গে সামনের দক্ষিণ পাশে তৈরির প্রক্রিয়া চলছে সড়কের স্লাভের সার্ভিস ডেক্স স্লাভের। ইতোমধ্যেই এই ডেক্স স্লাভের ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এদিকে ১৪টি খুঁটির ডিজাইনও হয়ে গেছে। শীঘ্রই এটি সেতু কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর হবে বলে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। এছাড়া নদীতে ১২৪টি পাইল সম্পন্ন হয়েছে। বটম সেকশন হয়েছে আরও ১০টি। আর মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর পাইল বসেছে ৯৪টি। আজকরে বষিয় : ব্ল্যাক বক্স নিরীক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাঠানোই কি সঠিক ছিল না?
×