ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার ব্যবসায়ী আটক ॥ ইয়াবা ও হেরোইনসহ বংশালে বিএনপি নেতা গ্রেফতার

কলায় ভরে খেয়ে পেটে করে ৩ কোটি টাকার ইয়াবা পাচার

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

কলায় ভরে খেয়ে পেটে করে ৩ কোটি টাকার ইয়াবা পাচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার বংশালে পুলিশ হত্যাসহ বহু মামলার আসামি এক বিএনপি নেতাকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও হেরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ইয়াবাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে পুরান ঢাকা বংশাল টিনের মার্কেট এলাকা থেকে ববিন (৩০) নামে এক বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেন বংশাল ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজহার। এ সময় তার কাছ থেকে ১৫শ’ পুইরা হেরোইন (২৫০ গ্রাম) ও ৫৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার অনুমানিক মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত ববিন এর আগে ৩ বার মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছিল। ডিবিতে এই মামলার তিনি জামিনে রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে পুরানো ঢাকার ওয়ারীতে পুলিশ হত্যার মামলাসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বংশাল থানার ডিউটি অফিসার এসআই বাবুল জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার গভীররাতে এসআই আজহার বাদী হয়ে ববিনের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে। তার বাবার নাম মৃত বোরহান। তিনি স্থানীয় হাজী আব্দুল্লাহ সরকার লেনের ৭৩ নম্বর বাড়িতে থাকেন। তার বড় ভাই ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক লিটন ও খালাত ভাই সাবেক বিএনপি কমিশনার গোল তাইজু। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ববিন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। প্রতিবার গ্রেফতার হওয়ার জামিনের বের হয়ে আবারও মাদক ব্যবসা জড়িয়ে পড়ে। তার পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের মাদক ব্যবসার জ্বালায় এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিজ এলাকা ছাড়া নয়াবাজার নওয়াব ইউসুফ মার্কেটে জমজমাট ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জ্বালায় অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদের সহযোগিতায় পুরো নয়াবাজার মামুন ও ফারুক সিন্ডিকেট এই ইয়াবা ব্যবসা চালিয়েছে। আর এই মার্কেটে পলি ও মৌসুমী নামে দুই নারী ইয়াবার চালান আনা নেয়া করে। আর এই কাজে সহযোগিতা দেয় পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কলার ভেতরে তিন কোটি টাকার ইয়াবা ॥ এ দিকে রাজধানীতে কলার মধ্যে ইয়াবা ভরে সেই কলা খেয়ে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, জুলহাস তালুকদার (৪৫) ও শেখ নজরুল ইসলামকে (৪০), আমজাদ হোসেন সিকদার (৪৪) ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৮ হাজার এক শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ইয়াবাগুলো আনুমানিক মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) শামসুল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বুধবার গভীররাতে রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর কদমতলী, গুলিস্তান ও খিলগাঁও এলাকায় পৃথক দুই অভিযানে ওই চার জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে কদমতলীর মুরাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৯ হাজার এক শ’ পিস ইয়াবাসহ জুলহাস তালুকদার ও শেখ নজরুল ইসলামকে (৪০) গ্রেফতার করে অধিদফতর। এর বুধবার রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আরেকটি টিম গুলিস্তান রাজ হোটেলের সামনে থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোঃ আমজাদ হোসেন সিকদার ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খিলগাঁওয়ের সি ব্লকের ৪৮৫ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কক্সবাজার থেকে তারা ইয়াবা নিয়ে আসত ঢাকায়। এর জন্য ইয়াবার গায়ে বিশেষ কায়দায় স্কচটেপ পেঁচিয়ে ক্যাপসুল আকৃতি দেয়া হয়। এরপর সেই ইয়াবা কলার মধ্যে ভরে বাহকদের খাওয়ান হয়। ইয়াবাসহ কলা খেয়ে বাহকরা সেগুলো ঢাকা বয়ে আনে। ঢাকায় আসার পর বিশেষ এক ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করে ইয়াবাগুলো পেট থেকে পায়ু পথে বের করে আনা হয়। পরে সেগুলো একত্রিত করে বিক্রি করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এই চক্রে ৮ থেকে ১০ বাহক কাজ করছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ উপ-অঞ্চলের এডি শামসুল আলম জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, তারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ঢাকার মাদক বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করত। সেখান থেকে ইয়াবা বহন করে আনার জন্য ব্যবহার করত অভাবীদের। বাহকদের বিশেষ কায়দায় কলার সঙ্গে ইয়াবা খাইয়ে পেটের ভেতরে রেখে সেগুলো ঢাকায় আনা হতো। এডি শামসুল আলম জানান, আসামি জুলহাস তালুকদার ও নজরুল ইসলাম দু’জনই সিলভারের হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার ব্যবসা করত। আর আমজাদ হোসেন সিকদার ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার দু’জনই ইয়াবা এনে তাদের ফ্ল্যাটে মজুদ করত। টেকনাফের বড়ইতলার শাকের ওরফে শাকের মামুর কাছ থেকে তারা ইয়াবা সংগ্রহ করত। এই শাকের আবার ইয়াবা আনত মিয়ানমার থেকে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত জুলহাস তালুকদারের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর- মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার জাহানাবাদ গ্রামে। তার বাবা মৃত সোহরাব তালুকদার। তিনি রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর মাদ্রাসা রোডের ৩৩/১ আয়েশা ভিলায় থাকে। একই গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল বারেকের ছেলে নজরুল ইসলাম। মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের ১৪৩/১ নম্বর বাসায় সে থাকত। অন্যদিকে আমজাদ হোসেন সিকদার ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। এই দম্পতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি ফ্ল্যাটে তারা ভাড়া থাকে। গ্রেফতারকৃদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। ১৫ কোটি টাকার ইয়াবা জব্দ ॥ কোস্টগার্ডের ঝটিকা অভিযানে ৩ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ হয়েছে। অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে ইয়াবা পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, ইয়াবাগুলো আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কোস্টগার্ড সদর দফতরের সহকারী গোয়েন্দা পরিচালক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মারুফ এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। পরে তিনি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে টেকনাফের ছেরাদ্বীপে তাৎক্ষণিক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি ঝটিকা অভিযান চালায় কোস্টগার্ড। অনেক দূর থেকেই কোস্টগার্ড সদস্যদের অভিযানের বিষয়টি অনুমান করতে ইয়াবা ফেলেই মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হচ্ছে, পালিয়ে যাওয়া মাদক ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের নাগরিক। পরে সেখান থেকে ৩ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে ইয়াবাগুলো টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
×