ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার তিন কারণ প্রত্যাবাসনে দীর্ঘসূত্রতার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপালেন মিয়ানমারের উপতথ্যমন্ত্রী

চুক্তিমতে সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে ফের প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১৭ মার্চ ২০১৮

চুক্তিমতে সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে ফের প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সকল রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে আবারও প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে ফেরত যেতে ইচ্ছুকরা যাচাই বাছাইয়ে রাখাইনের বাসিন্দা হিসেবে শনাক্ত হতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন মিয়ানমারের উপ-তথ্যমন্ত্রী এইচইইউ অং হ্লা তুন। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছাড়ার নেপথ্যে তিনটি কারণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ভীতিকে এক নম্বর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিয়ানমার সরকার এখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত জানিয়ে এক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘসূত্রতার জন্য বাংলাদেশের ওপরই দায় চাপান। এদিকে, টেকনাফ এবং উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যেও রয়েছে ফেরত যাওয়া-না যাওয়ার দ্বন্দ্ব, যা মাঝে মধ্যে সংঘাতেও রূপ নিচ্ছে। প্রত্যাবাসন যেহেতু অনেকটা রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার ওপরে নির্ভর করছে সেহেতু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত কী পরিমাণ রোহিঙ্গা ফিরতে রাজি হবে সে প্রশ্নও ঘুরেফিরে আসছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুক্রবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমারের উপ তথ্যমন্ত্রী অং হ্লা তুন বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে একইসঙ্গে তাদের রাখাইন ছেড়ে যাওয়ার কারণগুলো তুলে ধরতে চাই। এর মধ্যে প্রথম কারণ হলো সেনা ও পুলিশ পোস্টে হামলার পর আরসার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে সাধারণ অধিবাসীদের মধ্যেও ভীতির সৃষ্টি হয়। সেনা অভিযান চলছিল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। এতে অনেকে গ্রেফতারও হয়। তখন সাধারণ অধিবাসীরা বিষয়টিকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান ধরে নিয়ে পালাতে থাকে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসার সমর্থকরাও ভীতি ছড়ায়। তারাও নানামুখী গুজব ও ভয় দেখিয়ে সাধারণদের সীমান্ত অতিক্রমে উদ্বুদ্ধ করে। তৃতীয় কারণটি হলো, তাদের নিজেদের বিবেচনায় অন্যত্র পুনর্বাসিত হওয়ার ইচ্ছা। অর্থাৎ তৃতীয় কোন দেশ বা বাংলাদেশের ক্যাম্পে ভাল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার প্রলোভন। মিয়ানমারের এই মন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সরকার রাখাইন থেকে চলে যাওয়াদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ২৩ নবেম্বর দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে, যা ১৯৯৯ সালের চুক্তির অনুরূপ। চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে, তাদের ফেরত নেয়া হবে। কিন্তু কিভাবে তা প্রমাণিত হবে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাসিন্দা প্রমাণ করা খুবই সহজ। আর তা হলো নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, জাতীয় নিবন্ধন কার্ড, অস্থায়ী নিবন্ধন কার্ড, ব্যবসার মালিকানার কাগজপত্র, স্কুলে হাজিরা বা সনদের প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট বাসিন্দার গ্রামের নাম। তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যেই প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখন যদি শর্তগুলো পূরণ হয় তাহলে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে যাচাই বাছাই করা ৭শ হিন্দু এবং ৫শ মুসলিমসহ ১২ জনের একটি তালিকা বাংলাদেশকে প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮ হাজারের বেশি রাখাইন অধিবাসীর একটি তালিকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগত কিছু ঘাটতি রয়েছে। যাদের তালিকা প্রদান করা হয়েছে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, পরিবার প্রধানের নাম ও ছবি দেয়া হয়নি। নিজেদের আন্তরিকতার উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএইচসিআর এবং ইউএনডিপির সঙ্গে আলাপ করে তাদের সহায়তাও চাইছি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে আশ্রিতদের ফিরিয়ে নিতে তাদের সরকারের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করার পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমে একতরফা সংবাদ প্রকাশ না করে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে সহায়তার অনুরোধ জানান। গণমাধ্যমের কর্মীদের তিনি আরও জানান, আমরা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে সংবাদ কর্মীদের রাখাইন এলাকা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাজারে অগ্নিকা- ॥ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি বাজারে আগুন লেগে ত্রিশটির বেশি দোকান পুড়ে গেছে। তবে এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাজারে গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। উখিয়া ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ মোঃ ইদ্রিস জানান, স্থানীয়দের কাছে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তারা পৌঁছানোর আগেই ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান পুড়ে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো কাঁচা বেড়া এবং টিনের ছাউনির হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একটি ফার্মেসির দোকানে শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
×