ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে নানা আয়োজনে ওয়াহিদুল হক স্মরণ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

জন্মদিনে নানা আয়োজনে ওয়াহিদুল হক স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করা বহুমাত্রিক এক প্রতিভা ওয়াহিদুল হক। বাংলা সংস্কৃতির শেকড়সন্ধানী বাংলা গানের বিকাশে আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করেছেন এই সঙ্গীতজ্ঞ। আমৃত্যু মানুষ গড়েছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন ও পথ দেখিয়েছেন। শুক্রবার ছিল এই কীর্তিমান মানুষটির জন্মদিন। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনে সরব ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গনে। গান-কবিতায় সজ্জিত সেসব আয়োজনে এই সঙ্গীতজ্ঞকে জানানো হয় ভালবাসা। এ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও কণ্ঠশীলনের দুই অংশ পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বসন্ত বিকেলে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ছায়ানটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াহিদুল হক স্মারক দেশঘরের গান। লোকগানের এ আসর উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর পূর্বমুখাতীর প্রবীণ শিল্পী মোজাফফর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা। অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পী মোজাফফর হোসেনের কীর্তনের সুরে। মরমী কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘গোপি জন মনচোরা’। এরপরে তিনি গেয়ে শোনান কবি জসীম উদ্দীনের লেখা গান ‘বাজান চল যাই চল মাঠে লাঙ্গল বাইতে’। পালাগানের আশ্রয়ে গুরু-শিষ্যের কণ্ঠ লড়াইয়ে শ্রোতাদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়ান আরিফ দেওয়ান ও তার শিষ্য কানন দেওয়ানের দল। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান মোঃ আফছার আলী। সবশেষে ছিল ধামাইল নৃত্য। শ্রীমঙ্গলের রামকৃষ্ণ সরকার ও তার দল ধামাইল নৃত্য দিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। সান্ধ্যকালীন আরেক আয়োজনে একইসঙ্গে ওয়াহিদুল হক ও চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে স্মরণ করেছে আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলন। ওয়াহিদুল হক ছিলেন কণ্ঠশীলনের প্রাণপুরুষ, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন এ সংগঠনের সভাপতি। এ মাসেই দুই কীর্তিমানের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সাজানো হয় এ অনুষ্ঠান। কণ্ঠশীলনের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চিত্রকলা নিয়ে কথা বললেন শিল্প-সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। কবিতার সঙ্গে ছবির নৈকট্য ফুটে উঠল তাদের আলোচনায়। বিভিন্ন আকর্ষণীয় উদাহরণ দিয়ে তারা তা বোঝালেন। বৈঠকী আড্ডার ঢংয়ে সজ্জিত আলোচনাটি শ্রোতাদের জন্য ছিল দারুণ শ্রুতিমধুর। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ওয়াহিদুল হক ও কাইয়ুম চৌধুরীর রচনা থেকে পাঠ করা হয়। পরিবেশিত হয় কণ্ঠশীলন প্রযোজনা ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’। সবশেষে কণ্ঠশীলনের সদস্যরা জীবনানন্দ দাশের ছবিময় কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। এছাড়া এদিন সকালে কণ্ঠশীলনের আরেকাংশের আয়োজনে শুরু হলো দুই দিনের ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসব। ‘আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্যে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এ উৎসব উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী। শিশু একাডেমি গ্রন্থমেলা শুরু ॥ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হলো বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত গ্রন্থমেলা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রঙ ছড়ানো আলো/ লাল-সবুজের বাংলাদেশের থাকবে শিশু ভাল’। এ মেলা চলবে ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসের দিন পর্যন্ত। সকালে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাছিমা বেগম এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মল্লিক। একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে যে পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়, সেসব বইয়ের জ্ঞান অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বইয়ের যে বিশাল জগত আছে, তাতে যদি শিশুরা এসে প্রবেশ করে; তবে তারা দেখবে শুধু আনন্দ পাওয়া নয়;বরং তাদের জ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বই থেকে তারা জানবে এ পৃথিবী কেমন, মানুষ কেমন, মানুষ কত বিচিত্র, আর তাদের কত অসাধারণ অর্জন আছে। মানুষ মানুষের কল্যাণের জন্য কি করছে, ক্ষতির জন্য কি করছে, তাও তারা জানতে পারবে বই পড়ে। আর এজন্য আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তিনি তার বক্তব্যে মেলা থেকে সবাইকে অন্তত একটি করে বই নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য আহ্বান জানান। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আর দুইবছর পর জাতির পিতার ১০০তম জন্মদিন, সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মবর্ষ। আমাদের পরবর্তী সময়গুলোর ভবিষ্যত শিশুদের হাতে। তাই তাদের বই পড়ে জ্ঞানী হতে হবে। আমাদের শিশুদের মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হতে হবে এখন থেকেই। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শিশু একাডেমি ও এভারেস্ট একাডেমি কর্তৃক গতকাল সকালে আয়োজিত শিশুদের ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ সময় শিশুদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন ড. আনিসুজ্জামান, মেহের আফরোজ চুমকি ও প্রথম এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশী মুসা ইব্রাহিম। সবশেষে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী শিশুরা। সবশেষে শিশুদের মন রাঙাতে মেলায় আসে শিশুদের প্রিয় সিসিমপুরের বন্ধুরা। আয়োজকরা জানান, এবারের মেলায় ৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ৬৬টি বেসরকারী প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেবে। ছোটদের বইয়ের প্রাধান্য থাকলেও, মেলায় বড়দের বইও পাওয়া যাবে। মেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই কেনা যাবে। মেলা চলবে প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। ক্যানভাসে নারীর জীবনচিত্র ॥ এক আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন ৩৩ জন চিত্রশিল্পী। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে প্রত্যেকের একটি করে চিত্রকর্ম। চিত্রপটে উঠে এসেছে নারীর জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প। আর এই শিল্প আয়োজনটি করেছে মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসের গ্যালারি কসমস। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে এক মাস। প্রদর্শনীটি সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে উৎর্সগ করা হয়েছে। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- আফরোজা জামিল কংকা, আখতারুন নাহার আইভী, আতিয়া ইসলাম এ্যানী, বিপাশা হায়াত, দিলরুবা লতিফ রোজী, এলহাম হক খুকু, ফাহমিদা এনাম কাকলী, ফাহমিদা খাতুন, ফরিদা জামান, ফারিহা জেবা, ফারজানা রহমান উর্মী, ফারজানা রহমান ববি, ফেরদৌসী প্রিয়ভাসিনী, গুলশান হোসেন, আইভী জামান, কনক চাপা চাকমা, লুতফুন নাহার লিজা, মাকসুদা ইকবাল নিপা, মিনি করিম, নারগীস পলি, নাসরিন বেগম, নাজিয়া আন্দালীব প্রীমা, রহিমা আফরোজ, রেবেকা সুলতানা মলি, রোকেয়া সুলতানা, সামিনা নাফিস, শামীম সুব্রানা, সান্ত¡না শাহরীন নিনি, স্তুতি গুপ্তা কাসানা, সুলেখা চৌধুরী, সোহানা শাহরীন, তৈয়বা বেগম লিপি এবং ভিনীতা করিম। প্রদর্শনী আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত গ্যালারি কসমসে (ভিলা দি আঞ্জুমান; বাসা ১১৫, লেন ৬, নিউ ডিওএইচএস, মহাখালী) প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। অনীকের জন্য ভালবাসা ॥ অনীক আজিজ স্বাক্ষর; অনেকের ভালোবাসার প্রিয় মুখ। অনীক হারিয়ে গেছে স্বেচ্ছায় গত ২১ জানুয়ারি। ও আর ফিরবে না। কিন্তু ওর সমস্ত স্মৃতি, সমস্ত ভালবাসাকে রাখার প্রত্যয়ে শুক্রবার আয়োজন করা হয় তার সুহৃদদের ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন ‘অনীকের জন্য’। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে নানা আয়োজনে সাজানো ছিল এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল অনীকের জন্য ফুল আনতে। সেই ফুলেল ভালবাসায় ভরে যাওয়া অনীকের প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনা করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সুশান্ত দাস, সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ ও শহীদ রিমু’র মা জেলেনা চৌধুরী এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন। এছাড়াও বাপ্পাদিত্য বসু সঞ্চালনায় এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অনীকের বাবা ওর্য়াকার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও সাতক্ষীরার সভাপতি সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোস্তাফা লুৎফুল্লাহ। অনুষ্ঠানে ‘অনীকের জন্য’ শিরোনামে একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এছাড়াও ছিল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও অনীকের ফ্রেমবন্দী আলোকচিত্রের প্রদর্শনী।
×