ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে বাসা-বাড়ি নির্মাণেও ওয়াসার পানি সঙ্কটে নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৭ মার্চ ২০১৮

রাজশাহীতে বাসা-বাড়ি নির্মাণেও ওয়াসার পানি সঙ্কটে নগরবাসী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) কয়েকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় নগরীতে পানি সঙ্কট কাটছে না। শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে টান পরেছে পানি সরবরাহেও। ফলে মহানগরীতে প্রতিদিন সরবরাহ পানির সঙ্কট থাকছে। পাশাপাশি বাসা-বাড়ি নির্মাণ কাজে ওয়াসার পানি অবাধে ব্যবহার করায় সঙ্কট আরও বাড়ছে। রাজশাহী ওয়াসা বলছে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ গভীর নলকূপে পানি উঠছে কম। আবার কয়েকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে পানি সঙ্কট দূর করতে পারছেন না তারা। জানা গেছে, মহানগরীতে এখন দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ১৫০ কোটি লিটার। তবে সরবরাহ করা হচ্ছে ১২০ কোটি লিটার। ফলে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে প্রায় ৩০ কোটি লিটার পানি। এই সঙ্কট দূর করতে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকারের সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানটি। ব্যয় করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু সেসব প্রকল্প এখনও পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। ফলে কাটছেই না পানির সঙ্কট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নগরীর হেতেমখাঁ, রাণীনগর, শ্রীরামপুর ও ওয়াসা ভবনে অবস্থিত গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সম্পূর্ণ বন্ধ অবস্থায় আছে। এসব প্লান্টের প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। এদিকে প্রতিষ্ঠার সাত বছরেও পুরো মহানগরীতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি ওয়াসা। ফলে এখনও হস্তচালিত নলকূপের ওপর নির্ভর করছেন নগরীর ৩০ ভাগ এলাকার বাসিন্দা। গ্রীষ্মকালে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে তারা পান করার পানিরও সঙ্কটে পড়েন। এখন নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ১০৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৭৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওয়াসার পানি সরবরাহ পান নগরবাসী। তবে দুপুরে এক ঘণ্টা পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। কারও বাড়িতে রিজার্ভার ট্যাংক না থাকলে ওই সময় আর পানি মিলে না। নগরবাসী বলছেন, এখন গরম পড়ে গেছে। বেড়েছে পানির চাহিদা। বেড়েছে দিনের পরিধিও। এখন সন্ধ্যা হচ্ছে ৭টায়। তাই ওয়াসার পানি সরবরাহ করার সময় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অবশ্য ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে তারাও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীতে পানি সরবরাহ করা হবে। নগরীর উপশহর নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকায় বিভিন্নজন বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এসব ভবনের নির্মাণ কাজও চলছে ওয়াসার পানি ব্যবহার করে। ফলে আশপাশের বাড়িতে পানির প্রবাহ কমে যায়। বিশেষ করে তিন তলার ওপরে পানি উঠছে না। ফলে পানির অভাবে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে যেসব নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তার দু’একটি ছাড়া বাকি সবগুলোর ক্ষেত্রেই ওয়াসার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে উঁচু এলাকার বাসিন্দারা মারাত্মক পানি সঙ্কটে পড়েছেন। বিশেষ করে নগরীর কাদিরগঞ্জ, রানীনগর, বালিয়াপুকুর, মিঞাপাড়া ও দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের এলাকায় পূর্ণগতিতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। রাজশাহী ওয়াসার সচিব সাদিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর কিছু কিছু বহুতল ভবন নির্মাণে ওয়াসার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুমতি নিয়েছেন মালিকরা। তবে অধিকাংশ ভবন মালিকই অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। আমরা তখন অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেই। সেসময় ভবন মালিকদের জরিমানাও করা হয়। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্কটে তা অনেক সময় হয়ে ওঠে না। এদিকে নগরীর কয়েকটি এলাকায় ময়লা ও ঘোলা পানি সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় ওয়াসার ঘোলা পানি পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এই এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া খাতুন বলেন, সকালে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কলসে ভরতে গিয়ে তারা ঘোলা দেখতে পান। অনেক সময় অপেক্ষার পরও পানি পারিষ্কার না হওয়ায় সবাইকে পাশের এলাকায় গিয়ে পানি আনতে হয়েছে। একই অভিযোগ নগরীর রানীনগর এলাকার বাসিন্দাদের। শামসুল আলম নামে এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তাদের এলাকায় ঘোলা পানি যাচ্ছে পাইপে। এ নিয়ে ওয়াসায় গিয়ে অভিযোগ করেও কোনো সুফল মেলেনি। এ বিষয়ে ওয়াসা সচিব সাদিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারনে পানি ঘোলা হতে পারে। পানির রিজার্ভ ট্যাংক না থাকলে অনেক সময় ঘোলা পানি পাওয়া যেতে পারে। আবার অনেক সময় পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন দেখা দেয়। তখন পানি ঘোলা দেখায়। তাছাড়া গভীর নলকূপের ভূ-গর্ভস্থ কোনো পাইপ নষ্ট হয়ে গেলে ঘোলা পানি উঠতে পারে। কোথাও ঘোলা পানির খবর পাওয়া গেলে আমরা পাইপগুলো পরিস্কার করে দেই। এদিকে নগরবাসীর পানি সঙ্কট নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আবদুল হামিদ বলেন, অনেকেই বাড়িতে অবৈধভাবে পানির সংযোগ নিয়েছেন। ফলে সঙ্কট বেশি অনুভব করছেন বৈধ গ্রাহকরা। তবে পানির সঙ্কট কিছুটা হলেও কাটাতে সম্প্রতি একটি প্রকল্পের আওতায় মোট ২২টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াসা। এরমধ্যে প্রথম পর্বে ১২টি নলকূপ ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব নলকূপ স্থাপিত হবে। তিনি জানান, পুরো নগরীকে ওয়াসার সেবার আওতায় আনতে গোদাগাড়ী উপজেলার ফরাদপুরে একটি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের এই এলাকা থেকে পাইপের মাধ্যমে পদ্মা নদীর পানি আনা হবে শহরে। এরপর তা পুরো নগরীতে সরবরাহ করা হবে। তখন নগরীতে কোন পানি সঙ্কট থাকবে না বলেও মনে করেন রাজশাহী ওয়াসার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
×